পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতারাম শ্ৰীীর মন টলিল। শ্ৰীর এক পয়সা পজি নাই। দল ছাড়িয়া আসিয়া অবধি আহার হয় নাই; শ্ৰী দেখিতেছিল, ভিক্ষা এবং মাতৃত্যু, এই দই ভিন্ন উপায়ান্তর নাই। এই সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে যেন উপায়ান্তর হইতে পারে বোধ হইল, কিন্তু তাহাতেও সন্দেহ উপস্থিত হইল। জিজ্ঞাসা করিল, “একটা কথা জিজ্ঞাসা করিব মা ? তুমি দিনপাত কর কিসে?” সন্ন্যাসিনী। ভিক্ষায়। শ্ৰী। আমি তাহা পারিব না—বৈতরণী তাহার অপেক্ষা সহজ বোধ হইতেছিল। সন্ন্যাসিনী। তাহা তোমায় করিতে হইবে না—আমি তোমার হইয়া ভিক্ষা করিব। শ্ৰী। বাছা, তোমার এই বয়স—তুমি আমার অপেক্ষা ছোট বৈ বড় হইবে না। তোমার এহ রাপের রাশি— সন্ন্যাসিনী অতিশয় সন্দরী—বঝি শ্ৰীীর অপেক্ষাও সন্দরী। কিন্তু রােপ ঢাকিবার জন্য আচ্ছা করিয়া বিভূতি মাখিয়াছিল। তাহাতে হিতে বিপরীত হইয়াছিল—ঘসা ফানবুষের ভিতর আলোর মত রাপের আগন আরও উত্তজবল হইয়া উঠিয়াছিল। শ্ৰীর কথার উত্তরে সন্ন্যাসিনী বলিল, “আমরা উদাসীন, সংসারত্যাগী, আমাদের কিছতেই কোন ভয় নাই। ধৰ্ম্মম আমাদের রক্ষা করেন।” শ্ৰী।। তা যেন হইল। তুমি সন্ন্যাসিনী বলিয়া নিভায়। কিন্তু আমি বেলপাতের পোকার মত, তোমার সঙ্গে বেড়াইব কি প্রকারে ? তুমিই বা লোকের কাছে। এ পোকার কি পরিচয় দিবে ? বলিবে কি যে, উড়িয়া আসিয়া গায়ে পড়িয়াছে ? সন্ন্যাসিনী হাসিল—ফল্লাধারে মধর হাসিতে বিদ্যদ্দীপত মেঘাবত আকাশের ন্যায়, সেই ভস্মাবত রপম্যাধরী প্ৰদীপত হইয়া উঠিল। সন্ন্যাসিনী বলিল, “তুমিও কেন বাছা এই বেশ গ্রহণ করা না ?” শ্ৰী শিহরিয়া উঠিল,—বলিল, “সে কি ? আমি সন্ন্যাসিনী হইবার কে ?” সন্ন্যাসিনী। আমি তাহা হইতে বলিতেছি না। তুমি যখন সৰ্ববত্যাগী হইয়াছ বলিতেছ, তখন তোমার চিত্তে যদি পাপ না থাকে, তবে হইলেই বা দোষ কি ? কিন্তু এখন সে কথা থাক— এখন তা বলিতেছি না। এখন এই বেশ ছদ্মবেশস্বরপ গ্রহণ করা না।--তাতে দোষ কি ? শ্ৰী। মাথা মড়াইতে হইবে ? আমি সধবা। সন্ন্যাসিনী। আমি মাথা মড়াই নাই দেখিতেছি। শ্ৰী। জটা ধারণ করিয়াছ ? সন্ন্যাসিনী । না, তাও করি নাই। তবে চুলগােলাতে কখনও তেল দিই না, ছাই মাখিয়া রাখি, তাই কিছ জট পড়িয়া থাকিবে। শ্ৰী। চুলগলি যেরপ কুণডলী করিয়া ফণা ধরিয়া আছে, আমার ইচ্ছা করিতেছে, একবার তেল দিয়া অচিড়াইয়া বাঁধিয়া দিই। সন্ন্যা। জন্মান্তরে হইবে,--- যদি মানবদেহ পাই। এখন তোমােয় সন্ন্যাসিনী সাজাইব কি ? শ্ৰী। কেবল চুলে ছাই মাখিলেই কি সাজ হইবে ? সন্ন্যা। না—গৈরিক, রািদ্রাক্ষ, বিভূতি, সব আমার এই রাঙ্গা ঝালিতে আছে। সব দিব। শ্ৰী কিঞ্চিৎ ইতস্ততঃ করিয়া সম্মত হইল। তখন নিভৃত এক বক্ষ তলে বসিয়া সেই রােপসী সন্ন্যাসিনী শ্ৰীকে আর এক রােপসী সন্ন্যাসিনী সাজাইল । কেশদামে ভস্ম মাখাইল, অঙ্গে গৈরিক পরাইল, কন্ঠে ও বাহতে রদ্রাক্ষ পরাইল, সববাঙ্গে বিভূতি লেপন করিল, পরে রঙেগর দিকে মন দিয়া শ্ৰীর কপালে একটি চন্দনের টিপ দিয়া দিল। তখন ভুবনবিজয়াভিলাষী মধ্যমন্মথের ন্যায়। দই জনে যাত্ৰা করিয়া, বৈতরণী পার হইয়া, সে দিন এক দেবমন্দিরের অতিথিশালায় রাত্রি যাপন করিল। দ্বাদশ পরিচ্ছেদ পরদিন প্রাতে উঠিয়া, খরস্রোতা* জলে যথাবিধি স্নানাহ্নিক সমাপন করিয়া শ্ৰী ও সন্ন্যাসিনী, বিভূতি রদ্রাক্ষাদি-শোভিতা হইয়া পনরাপি “সঞ্চারিণী দীপশিখা"দ্বয়ের ন্যায় শ্ৰীক্ষেত্রের পথ

  • নদীর নাম।

ܠ ܬ bf