পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৯২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

नौडाब्राम সেই রাত্ৰিদলটি দেবীতুল্য মাত্তি দেখিয়া চিনিলেন, এবং নগরের রাজলক্ষী মনে করিয়া সসম্পন্দ্রমে গাত্ৰোখান করিলেন। তখন সভাসােথ সকলেই গাত্ৰোখান করিল। জয়ন্তী কোন দিকে দলিট না করিয়া খারাপদে গঙ্গারামের নিকট আসিয়া, গঙ্গারামের বক্ষে সেই মন্ত্রপতি ত্ৰিশ লাগ্রভাগ স্থাপন করিল। কথার মধ্যে কেবল বলিল, “এখন বল।” ত্রিশাল গঙগারামের গাত্র সপশ করিল মাত্র, তথাপি গঙ্গারামের শরীর হঠাৎ অবসন্ন হইয়া আসিল ; গঙ্গারাম মনে করিল, আর একটি মিথ্যা কথা বলিলেই এই ত্রিশলে আমার হৃদয়ে বিদ্ধ হইবে। গঙ্গারাম তখন সভয়ে, বিনীতভাবে, সত্য বাত্তান্ত সভাসমক্ষে বলিতে আরম্ভ করিল। যতক্ষণ না তাহার কথা সমাপত হইল, ততক্ষণ জয়ন্তী তাহার হৃদয় ত্ৰিশ লাগ্ৰভাগের দ্বারা সপশ করিয়া রহিল। গঙ্গারাম তখন রমার নিদোষিতা, আপনার মোহ, লোভ, ফৌজদারের সহিত সাক্ষাৎ কথোপকথন এবং বিশ্ববাসঘাতকতার চেটা সমন্দিয় সবিস্তারে কহিল। জয়ন্তী তখন ত্রিশলে লইয়া খারাপদে চলিয়া গেল। গমনকালে সভাসােথ সকলেই নতশিরে সেই দেবীতুল্য মাত্তিকে প্ৰণাম করিল। সকলেই ব্যস্ত হইয়া পথ ছাড়িয়া দিল। কেহ কোন কথা জিজ্ঞাসা করিতে বা তাহার অনসরণ করিতে সাহস পাইল না। সে কোন দিকে কোথায় চলিয়া গেল, কেহ সন্ধান করিল না। জয়ন্তী চলিয়া গেলে রাজা, গঙ্গারামকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, “এখন তুমি আপন মখে সকল অপরাধ স্বীকৃত হইলো। এরপ কৃতঘের মাতৃত্যু ভিন্ন অন্য দন্ড উপযন্ত নহে। অতএব তুমি রাজদান্ডে প্রাণত্যাগ করিতে প্ৰস্তুত হও।” গঙ্গারাম দিবরক্তি করিল না। প্রহরীরা তাহাকে লইয়া গেল। বন্ধদন্ডের আজ্ঞা শনিয়া সকল লোক সন্তম্ভিত হইয়াছিল। কেহ কিছ বলিল না। নীরবে সকলে আপনার ঘরে ফিরিয়া গেল। গহে গিয়া সকলেই রমাকে “সাক্ষাৎ লক্ষয়ী” বলিয়া প্রশংসা করিল। রমার আর কোন কলঙক রহিল না। চতুৰ্থ পরিচ্ছেদ রাজা মরল্যাকে মাথা মড়াইয়া, ঘোল ঢালিয়া, নগরের বাহির করিয়া দিবার আদেশ করিলেন। সে হকুম তখন তামিল হইল। মােরলার নিগমনকালে এক পাল ছেলে, এবং অন্যান্য রসিক লোক দল বাঁধিয়া করতালি দিতে দিতে এবং গীত গায়িতে গায়িতে চলিল । গঙ্গারামের ন্যায় কৃতঘের পক্ষে, শালদন্ড ভিন্ন অন্য দন্ড তখনকার রাজনীতিতে ব্যবস্থিত ছিল না। অতএব তাহার প্রতি সেই আজ্ঞাই হইল। কিন্তু গঙ্গারামের মাতু্য আপাততঃ দিনকতক সস্থগিত রাখিতে হইল। কেন না, সম্মখে রাজার অভিষেক উপস্থিত। সীতারাম নিজ বাহবিলে হিন্দ,রাজ্য স্থাপন করিয়া রাজা হইয়াছেন, কিন্তু তাঁহার অভিষেক হয় নাই। হিন্দীশাস্ত্রানসারে তাহা হওয়া উচিত। চন্দ্রচড়ি ঠাকুর এই প্রসঙ্গ উত্থাপিত করিলে, সীতারাম তাহাতে সম্পমত হইয়াছিলেন। তিনি বিবেচনা করিলেন, এরপ একটা মহোৎসবের দ্বারা প্রজাবগী পরিতুলট হইলে তাহদের রাজভক্তি বন্ধি পাইতে পারে। অতএব বিশেষ সমারোহের সহিত অভিষেক কাৰ্য্য সম্পন্ন করিবার কলপনা হইতেছিল। নন্দা এবং চন্দ্ৰচড়, উভয়েই এক্ষণে সীতারামকে অননুরোধ করিলেন যে, এখন একটা মাংগলিক ক্লিয়া উপস্থিত, এখন গঙ্গারামের বধরপে অশভ কৰ্ম্মমটা করা বিধেয় নহে; তাহাতে অমঙ্গলও যদি না হয়, লোকের আনন্দেরও লাঘব হইতে পারে। এ কথায় রাজা সম্মত হইলেন। ভিতরের আসল কথা এই যে, গঙ্গারামকে শালে দিতে সীতারামের আন্তরিক ইচ্ছা নহে, তবে রাজধৰ্ম্মম পালন এবং রাজ্য শাসন জন্যই অবশ্য কত্তব্য বলিয়া তাহা স্থির করিয়াছিলেন । ইচ্ছা ছিল না, তাহার কারণ—-গঙগারাম শ্ৰীর ভাই। শ্ৰীকে সীতারাম ভুলেন নাই, তবে এত দিন ধরিয়া তাহাকে খাজিয়া না পাইয়া, নিরাশ হইয়া বিষয়কম্পেম চিত্তনিবেশ করিয়া শ্ৰীকে ভুলিবেন, ইহা সিথর করিয়াছিলেন। অতএব আবার রাজ্যের উপর তিনি মন স্থির করিতেছিলেন। সেই জন্যই দিল্লীতে গিয়া বাদশাহের দরবারে হাজির হইয়াছিলেন। এবং বাদশাহকে সন্তুস্ট করিয়া সনদ সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন। সেই জন্য উৎসাহ সহকারে সংগ্রাম করিয়া ভূষণা অধিকার করিয়াছিলেন, এবং দক্ষিণ বাঙ্গালায় এক্ষণে একাধিপত্য প্ৰচাৱ করিতেছিলেন। কিন্তু শ্ৰী এখনও হৃদয়ের সম্পপণ্য অধিকারিণী। অতএব গঙ্গারামের শলে যাওয়া এখন স্থগিত রহিল। NSC