পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৯৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী আমার ঘাড়ে রাগ ভূত চাপিলে—এ সংসার এখন আর রাখিবে কে ? তাই নন্দা সীতারামের উপর রাগ করিল না—আপনার অনন্ঠেয় কৰ্ম্ম প্ৰাণপাত করিয়া করিতে লাগিল। কিন্তু ডাকিনীটার উপর রাগ বড় বেশী। ডাকিনী যে শ্ৰী, তাহা নন্দা জানিত না : সীতারাম ভিন্ন কেহই জানিত না। নন্দা অনেকবার সন্ধান জানিবার জন্য লোক পাঠাইয়াছিল, কিন্তু সীতারামের আজ্ঞা ভিন্ন চিত্তবিশ্রামে মক্ষিকা প্রবেশ করিতে পারিত না, সতরাং কিছ হইল না। তবে জনপ্রবাদ এই যে, ডাকিনীটা দিবসে পরমসন্দরী মানবী মাত্তি ধারণ করিয়া গহাধৰ্ম্ম করে, রাত্ৰিতে শগালীরােপ ধারণ করিয়া শামশানে শামশানে বিচরণপৰ্ব্বক নরমাংস ভক্ষণ করে। অতিশয় ভীত হইয়া নন্দা, চন্দ্রচড়ি ঠাকুরকে সবিশেষ নিবেদন করিল। চন্দ্রচড় উত্তম তন্ত্রবিৎ ব্রাহ্মণ সংগ্ৰহ করিয়া রাজার উদ্ধারার্থ তান্ত্রিক যজ্ঞ সকল সম্পাদন করাইলেন, কিন্তু কিছতেই ডাকিনীর ধবংস হইল না। পরিশেষে এক জনা সদক্ষ তান্ত্ৰিক বলিলেন, “মনােষ্য হইতে ইহার কিছর উপায় হইবে না। ইনি সামান্যা নহেন। ইনি কৈলাসনিবাসিনী সাক্ষাৎ ভবানীর সহচরী, ইহার নাম বিশালাক্ষী। ইনি রাদ্রের শাপে কিছকালের জন্য মতালোকে মনীষাসহবাসােথ আসিয়াছেন। শাপান্ত হইলে আপনিই যাইবেন।” শনিয়া চন্দ্রচড়ি ও নন্দা নিরসন্ত ও চিন্তামগন হইয়া রহিলেন। তব, নন্দা মনে মনে ভাবিত, “ভবানীর সহচরী হউক, আর যেই হউক, আমি একবার তাকে পাইলে নখে মাথা চিরি৷ ৷ ” তাই, নন্দার সীতারামের উপর কোন রাগ নাই | সীতারামও রাজধানীতে আসিলে নন্দার সঙেগ কখন কখন সাক্ষাৎ করিতেন ; এই সকল সময়ে, নন্দ রামার কথা সীতারামকে জানাইত—— বলিত, “সে বড় “কাতর’—তুমি গিয়া একবার দেখিয়া এসো।” সীতারাম যাচ্চি যাব করিয়া, যান নাই। আজ নন্দা জোর করিয়া ধরিষা বসিল- —বলিল, “আজ দেখিতে যাও। --নাহিলে এ জন্মে। আর দেখা হইবে না।” কাজেই সীতারাম রম্যাকে দেখিতে গেলেন। সীতারামকে দেখিয। রমা বড় কাঁদিল । সীতারামকে কোন তিরস্কার করিল না। কিছই বলিতে পারিল না। সীতারামের মনে কিছ: অনন্তাপ জন্মিল কি না, জানি না। সীতারাম স্নেহসচক সম্বোধন করিয়া রোগমণ্ডিব ভরসা। দিতে লাগিলেন। ক্ৰমে রমা প্ৰফল্প হইল, মদ, মদ হাসিতে লাগিল। কিন্তু কি হাসি ! হাসি দেখিয়া সীতারামের শওকা হইল যে, আর অধিক বিলম্ব নাই । সীতারাম পালঙ্কের উপর উঠিয়া বসিয়াছিলেন। সেইখানে রমার পত্ৰ আসিল। আবার রমার চক্ষতে জল আসিল--কিছফক্ষণ অবাধে জল শত্ৰক গণন্ড বহিযা পড়িতে লাগিল। ছেলেও মার কান্না দেখিয়া কাঁদিতেছিল। রমা ইঙিগতে অসফটস্বরে সীতারামকে বলিল, “ওকে একবার কোলে নাও।” সীতারাম অগত্যা পত্রিকে কোলে লইলেন । তখন রমা, সকাতরে ক্ষীণকন্ঠে রদ্ধশাবাসে বলিতে লাগিল, “মার দোষে ছেলেকে ত্যাগ করিও না। এই তোমার কাছে আমার শেষ ভিক্ষা। বড় রাণীর হাতে ওকে সমাপণ করিয়া যােব মনে করিয়াছিলাম—- কিন্তু তা না করিয়া তোমারই হাতে সমপণ করিলাম। কথা রাখিবে কি ? সীতারাম কলের পতুলের মত স্বীকার হইলেন। রমা। তখন সীতারামকে আরও নিকটে আসিয়া বসিতে ইণ্ডিগত করিল। সীতারাম সরিয়া বসিলে, রমা। তাঁর পায়ে হাত দিয়া, পাযের ধলা লইয়া আপনার মাথায় দিল। বলিল, “এ জন্মের মত বিদায় হইলাম। আশীব্বাদ করিও, জন্মান্তরে যেন তোমাকেই পাই ।” তার পর বাক্য বন্ধ হইল। শাবাস বড় জোরে জোরে পড়িতে লাগিল। চক্ষর জ্যোতি গেল। মাখের উপর কালো ছায়া আরও কালো হইতে লাগিল। শেষে সব অন্ধকার হইল । সব জীবালা জড়াইল। রমা চলিয়া গেল । যে দিন রমা মরিল, সে দিন সীতারাম আর চিত্তবিশ্রামে গেলেন না। এখনও তত দর হয় নাই। যখন সীতারাম রাজা না হইয়াছিলেন, যখন আবার শ্ৰীকে না দেখিয়াছিলেন, তখন সীতারাম রম্যাকে বড় ভালবাসিতেন— নন্দার অপেক্ষাও ভালবাসিতেন। সে ভালবাসা গিয়াছিল। কিসে গেল, সীতারাম তাহার চিন্তা কখনও করেন নাই। আজ একটা ভাবিলেন। ভাবিয়া > ○ じ