পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৯৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী নন্দার চক্ষতে বড় ভারি বেগে স্রোত বহিতে লাগিল; কিন্তু নন্দা তাহা মছিল। বলিল, “মহারাজ ! আমি যদি ইহাতে নিষেধ করি, তবে আমি তোমার দাসী হইবার যোগ্য নাহি । তুমি যে প্রকৃতিস্থ হইয়াছ, ইহাই আমার বহ ভাগ্য—আর যদি দদিন আগে হইতে “ তুমিও মরিবে মহারাজ ! আমিও মরিব—তোমার অনাগমন করিব। কিন্তু ভাবিতেছি। —এই আপোগণিডেগলির কি হইবে! ইহারা যে মসলমানের হাতে পড়িবে।” এবার নন্দা কাঁদিয়া ভাসাইয়া দিল । রাজা বলিলেন, “তাই তোমার মরা হইবে না। ইহাদিগের জন্য তোমাকে থাকিতে হইবে।” নন্দা। আমি থাকিলেই বা উহারা বাঁচিবে কি প্রকারে ? রাজা। নন্দা! এত লোক পলাইল—তুমি পলাইলে না কেন ? তাহা হইলে ইহারা রক্ষা পাইত। নন্দা। তোমার মহিষী হইয়া আমি কার সঙেগ পলাইব মহারাজা ? তোমার পত্রিকন্যা আমি তোমাকে না বলিয়া কাহার হাতে দিব ? পত্র বল, কন্যা বল, সকলই ধম্পেমার জন্য। আমার ধৰ্ম্ম তুমি। আমি তোমাকে ফেলিয়া পত্রিকন্যা লইয়া কোথায় যাইব ? রাজা। কিন্তু এখন উপায় ? নন্দা। এখন আর উপায় নাই। অনাথা দেখিয়া মসলমান যদি দয়া করে । না করে. জগদীশবর যাহা করিবেন, তাহাই হইবে। মহারাজ, রাজার ঔরসে ইহাদের জন্ম । রাজকুলের সম্পদ বিপদ উভয়ই আছে—তজজন্য আমার তেমন চিন্তা নাই। পাছে তোমায় কেহ কাপরােষ বলে, আমার সেই বড় ভাবনা ৷ রাজা। তবে বিধাতা যাহা করিবেন, তাহাই হইবে । ইহ জন্মে তোমাদের সঙ্গে এই দেখা । এই বলিয়া আর কোন কথা না কহিয়া, রাজা সজজার্থ অস্ত্ৰগহে গেলেন । নন্দা বালকবালিকাদিগকে সঙ্গে লইয়া রাজার সঙেগ অস্ত্ৰগহে গেলেন। রাজা রণসজায় আপনাকে বিভূষিত করিতে লাগিলেন, নন্দা বালকবালিকাগলি লইয়া চক্ষ মাছিতে মাছিতে দেখিতে লাগিল । যোদ্ধ, বেশ পরিধান করিয়া, সব্বাঙ্গে অস্ত্র বাঁধিয়া, সীতারাম আবার সীতারামের মত শোভা *াইতে লাগিলেন। তিনি তখন বীরদাপে, মাতৃকামনায়, একাকী দােগ দ্বারাভিমখে চলিলেন । নন্দা আবার মাটিতে পড়িয়ঃ কাঁদিতে লাগিল । একাকী দাগ দিবারে যাইতে দেখিলেন যে, যে বেদীতে জয়ন্তীকে বোত্রাঘাতের জন্য আর দৃঢ় করিয়াছিলেন, সেই বেদীতে দাই জন কে বসিয়া রহিয়াছে। সেই মাতৃত্যুকামী যোদ্ধার হৃদয়ে ভয়সঞ্চার হইল। শশব্যাস্তে নিকটে আসিয়া দেখিলেন—ত্রিশীল হস্তে, গৈরিকভস্মরদ্রোক্ষবিভূষিতা, জয়ন্তীই পা ঝালাইয়া বসিয়া আছে। তাহার পাশে, সেইরােপ ভৈরবীবেশে শ্ৰী । রাজা তাহাদিগকে সেই বিষম সময়ে, তাঁহার আসন্নকালে, সেই বেশে সেই সন্থানে সমাসীন। দেখিয়া কিছ ভীত হইলেন। বলিলেন, “তোমরা আমার এই আসন্নকালে এখানে আসিয়া কেন বসিয়া আছ ? তোমাদের এখনও কি মনস্কামনা সিদ্ধ হয় নাই ?” জয়ন্তী ঈসৎ হাসিল । রাজা দেখিলেন, শ্ৰী গদগদ কন্ঠ, সজললোচন – কথা কহিবে ইচ্ছা! করিতেছে, কিন্তু কথা কহিতে পারিতেছে না। বাজা তাহাব মািখপানে চাহিয়া রহিলেন। শ্ৰী কিছ বলিল না। রাজা তখন বলিলেন, “শ্ৰী ! তোমারই অদভট ফলিয়াছে। তুমিই আমার মাতুত্যুর কারণ। তোমাকে প্রিয়প্রাণহািন্ত্ৰী বলিয়া আগে ত্যাগ করিয়া ভালই করিয়াছিলাম। এখন আদর্ট ফলিয়াছে — আর কেন আসিয়াছ ?” শ্ৰী। আমার আনন্ঠেয় কম আছে—তাহা করিতে আসিয়াছি। আজ তোমার মাতু উপস্থিত, আমি তোমার সঙ্গে মরিতে আসিয়াছি। Α রাজা। সন্ন্যাসিনী কি অনািমতা হয় ? ? শ্ৰী। সন্ন্যাসীই হউক, আর গহীই হউক, মরিবার অধিকার সকলেরই আছে। রাজা। সন্ন্যাসীর কৰ্ম্ম নাই। তুমি কম্পমত্যাগ করিয়াছ—তুমি আমার সঙ্গে মরিবে কেন ? আমার সঙ্গে নন্দ যাইবে, প্রস্তুত হইয়াছে। তুমি সন্ন্যাসধৰ্ম্মম পালন কর। শ্ৰী। মহারাজ ! যদি এত কাল আমারু উপর রাগ করেন নাই, তবে আজ আর রাগ করিবেন। N Gö; NK