পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৯৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতারাম জয়ন্তী। চোখের জলই বা কেন পড়িবে ? শ্ৰী। জীবন্তে আমি চিনিতে পারি নাই। কিন্তু তোমার নিষেধবাক্য শনিয়া আমি মরা মখখানা একটি নিরীক্ষণ করিয়া দেখিয়াছিলাম। আমার একটা সন্দেহ হইতেছে। সে ব্যক্তি যেই হউক, আমিই তার মাতুর কারণ। আমি তোপের মাখে বাক না দিলে সে অবশ্য তোপ দাগিতা। তাহা হইলে মহারাজা নিশ্চিত বিনম্ৰাট হইতেন, গোলন্দাজকে তখন আর কে মারিত ? জয়ন্তী। সে মরিয়াছে, মহারাজা বাঁচিয়াছেন, সে তোমার উপযক্ত কাজই হইয়াছে—তবে আর কথায় কাজ কি ? শ্ৰী।। তব মনের সন্দেহটা ভাঙিগয়া রাখিতে হইবে। জয়ন্তী। সন্ন্যাসিনীর এ উৎকন্ঠা কেন ? শ্ৰী। সন্ন্যাসিনীই হউক, যেই হউক, মানষে মানষেই চিরকাল থাকিবে। আমি তোমাকে দেবী বলিয়াই জানি, কিন্তু যখন তুমিও লোকালয়ে লৌকিক লজায় অভিভূত হইয়াছিলে, তখন আমার সন্ন্যাসবিভ্রংশের কথা কেন বল ? জয়ন্তী। তবে চল, সন্দেহ মিটাইয়া আসি। আমি সে সস্থানে একটা চিহ্ন রাখিয়া আসিয়াছি —রাত্রেও সে স্থানের ঠিক পাইব। কিন্তু আলো লইয়া যাইতে হইবে। এই বলিয়া দাই জনে খড়ের মসাল তৈয়ার করিয়া তাহা জবালিয়া রণক্ষেত্ৰ দেখিতে চলিল। চিহ্ন ধরিয়া জয়ন্তী অভীপিসত সন্থানে পৌছিল। সেখানে মিসালের আলো ধরিয়া তল্লাস করিতে করিতে সেই গোলন্দাজের মতদেহ পাওয়া গেল। দেখিয়া শ্ৰীর সন্দেহ ভাঙ্গিল না। তখন জয়ন্তী সেই শবের রাশীকৃত পাকা চুল ধরিয়া টানিল-পরচুলা খসিয়া আসিল; শেবর্তৃক্ত শমশ্র ধরিযা টানিল—পরচুলা খসিয়া আসিল । তখন আর শ্রীর সন্দেহ রহিল না—গঙ্গারাম বটে। শ্ৰীীর চক্ষা দিয়া অবিরল জলধারা পড়িতে লাগিল। জয়ন্তী বলিল, “বাহিনী, যদি এ শোকে কাতর হইবে, তবে কেন সন্ন্যাসধৰ্ম্মম গ্রহণ করিয়াছিলে ?” শ্ৰী বলিল, “মহারাজ আমাকে ব্যথা ভৎসনা করিয়াছেন। আমি তাঁহার প্রাণহািন্ত্রী হই নাই --আপনার সহোদরেরই প্রাণঘাতিনী হইয়াছি। বিধিলিপি। এত দিনে ফলিল ।” জয়ন্তী। বিধাতা কাহার দবারা কাহার দন্ড করেন, তাহা বলা যায় না। তোমা হইতেই গঙ্গারাম দই বার জীবন লাভ করিয়াছিল, আবার তোমা হইতেই ইহার বিনাশ হইল। যাই হউক, গঙ্গারাম পাপ করিয়াছিল, আবার পাপ করিতে আসিয়াছিল বোধ হয়, রমার মাতৃত্যু হইয়াছে, তাহা জানে না, ছদ্মবেশে ছলনা দ্বারা তাহাকে লাভ করিবার জন্যই মসলমান সেনার গোলন্দাজ হইয়া আসিয়াছিল । কেন না, রমা তাহাকে চিনিতে পারলে কখনই তােহর সঙেগ যাইবে না মনে কুরিয়া থাকবে। বোধ হয়, শিবিকাতে রমা ছিল মনে করিয়া, তোপ লইয়াৰ পথ রোধ করিয়াছিল। যাই হোক, উহার জন্য ব্যথা রোদন না করিয়া, উহার দাহ করা যাক আইস । তখন দলই জনে ধর, ধরি করিয়া ৭ ডিগারামের শব উপযন্ত সন্থানে লইয়া গিয়া দাহ করিল। জয়ন্তী ও শ্ৰী আর সীতারামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিল না। সেই রাত্ৰিতে তাহারা কোথায় অন্ধকারে মিশিয়া গেল, কেহ জানিল না। আমাদের পড়বব পরিচিত বন্ধদ্বয় রামচাঁদ ও শ্যামচাঁদ ইতিপকেবই পলাইয়া নলডাঙ্গায় বাস করিতেছিলেন । সেখানে একখানি আটচালায় বসিয়া কথোপকথন করিতেছেন। রামচাঁদ । কেমন হে ভায়া! মহম্মদপরের খৰুরটা শনেছ ? শ্যামচাঁদ। আজ্ঞে হাঁ-সে ত জানাই ছিল। গৗড়-টড় সব মসলমানে দখল করে লািঠাপাট করে নিয়েছে। রাম। রাজা-রাণীর কি হ’লো, কিছ ঠিক খবর রাখা ? শ্যাম। শোনা যাচ্চে, তাঁদের না কি বোধে মরিশিদাবাদ চালান দিয়েছে। সেখানে না কি তাঁদের শহলে দিয়েছে। Հ) (է Գ