পাতা:বঙ্গদর্শন-পঞ্চম খন্ড.djvu/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৮৮ করিয়া আসিলেন । এই দিবসে শরৎকুমারের আসিবার কথা ছিল, কিন্তু বেলা দুইপ্রহর হইল, তথাচ তাহার দেখা ..নাই । বেল একটার পর হইতে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হইয়া অন্ধকার হইল এবং তৎপরেই মুষলধারে বৃষ্টি ও বজা ঘাত আরম্ভ হইল । দুইটা, তিনটা, ক্রমে চারিট বাজিল, তথাচ শরৎকুমারের দেখা নাই। অপরাহ্ন হইল, এখনো মুসলধারে বৃষ্টি হইতেছে, কিন্তু হরিনাথ বাবু আর অপেক্ষা করিতে পারিলেন না। স্বপরিবারে একটি ঘোড়ার গাড়িতে উঠিলেন, স্ত্রীলোকেরা ভগ্নোৎসাহে উঠিলেন। শরৎকুমারের না আসাতে বড় নিরুৎসাহ হইল,গাড়ি অতি কষ্টে যাইতে লাগিল । সহর জলময়--'সটালিকাশ্রেণী সকল জলেতে ভাসিতেছে । রাজপথে কোমর সমান জল হইয়াছে তথাপি অসংখ্য গাড়ি এবং পাস্কি যাতায়াত করিলেছে । ঘোড়াদিগের বুক পৰ্য্যন্ত জল উঠিয়াছে,শিবিকাবাহকদিগের কোমর পর্য্যন্ত ডুবিয়া যাইতেছে, অসমরে অন্ধকার হও য়াতে বিলাতি দোকানে, ও বড় বড় অট্টালিকাতে আলো জালিয়াছে, সেই আলোর প্রতিবিম্ব রাস্তার জলে পড়ি য়াছে। অবিরত গাড়ির যাতারাতে রাস্তার জলে ছপ ছপ শরা হইতেছে। আজ সহরের নুতন প্রকার শোভা হই য়ছে। কুমুদিনী ও বিনোদিনী কথন কলিকাতা দেখেন নাই। গাড়ির কপট ঈয়ং খুলিয়া সহরের শোভা দেধিতে । বঙ্গদর্শন। ,” ( শ্রাবণ । দেখিতে কুমুদিনী হঠাৎ চমকিয়া বলিয়া উঠিলেন “ঐ যে শরৎকুমার।” স্ত্রীলোক গণ মুখ বাড়াইয়া দেখিলেন, যে শরৎকুমার সেই মুসলধারে বৃষ্টিতে অতি দীন দুঃখীর ন্যায় ভিজিতে ২ হাবড়ার দিকে যাইতেছেন। বৃষ্টির জল তাহার মস্তক বহিয়া পড়িতেছে। তাহার অৰ্দ্ধেক শরীর রাস্তার জলে ডুবিয়া গিয়াছে, অতি কষ্ট্রে গমন করিতেছেন । হরিনাথ বাবু “ শরৎকুমার শরৎকুমার” বলিয়া ডাকিলেন। শরৎকুমার শুনিতে পাই লেন না—বায়ুসন্তাড়িত বৃষ্টিধারা তাহার মুখমণ্ডলে আঘাত করাতে মস্তক নত করিয়া যাইতেছেন। র্তাহাকে দেখিয়। স্ত্রীলোকদিগের হৃদয় বিদীর্ণ হইল। হরিনাথ বাবু গাডি গাম।ইয়া উচ্চৈঃস্বরে তাহাকে ডাকাতে শরৎকুমার শুনিতে পাইয়া, তাহাদিগের নিকট হাসিতে হাসিতে আসিলেন । র্তাহার হাসি দেখিয়া স্ত্রীলোকদিগের চক্ষে জল আসিল । হরিনাথ বাবু তাহার স্থান ত্যাগ করিয়া শরৎকুমারকে গাড়ির ভিতর বসিতে অনুরোধ করিলেন। শরৎকুমার কোনমতে স্বীকৃত হইলেন না—বলিলেন “ আপনার অগ্রসর হউন আমি ঠিক সময়ে আপনাদিগের সহিত মিলিব।” হরিনাথ বাবু অতি কষ্টে তাঁহাই স্বীকার করিলেন। শরৎকুমার পদব্রজে চলিলেন । ঝড় বৃষ্টি আর গ্রাহ নাই, সেই গাড়িপ্রতি দৃষ্টি করিয়া চলিলেন। দুই একবার দেখিলেন কে যেন মুখ