পাতা:বঙ্গদর্শন-পঞ্চম খন্ড.djvu/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१२४8 ) হাসিতে হাসিতে একবার বলিলেন, “দোঁড়িও না, পড়ে যাবে।” তৎপরে সেস্থান হইতে চলিয়া গেলেন। আর কুমুদিনী ? কুমুদিনী কোথায়? বারেণ্ডার সন্নিকটে একটি কক্ষদ্বারের অন্তরালে প্রস্তরবৎ দাড়াইয়া এই কথোপকথন শুনিতেছিলেন,হৃদয়াঘাতে ব্যথিত হইয়া,হস্তদ্বারায় হৃদয় চাপির, স্থিরনেত্রে রজনীকান্তের প্রক্তি চাহিয়া তাহার কথা শুনিতেছিলেন । রজনীকে কত সুন্দর দেখিতেছিলেন। তাঙ্গয় কথা কত মধুর বোধ হইতে ছিল। আর বেস্থায়ী বিনোদিনীকে কি কুৎসিত দেখিয়াছিলেন ? কি নির্লজ্জার ম্যায় রজনীর সহিত কথা কহিতেছিল । কুমুদিনীর মনে পড়ে কি না পড়ে জানি না । কিন্তু আমাদের বিলক্ষণ মনে আছে, এইরূপ আড়ি পাতিয়া রজনীকান্ত এক দিবস রাত্রে কুমুদিনীর ও শরৎকুমারের প্রেমালাপ শুনিয়াছিলেন । স্বচ্ছ বারিবিশিষ্ট এবং চন্দ্রালোকপ্রতিবিম্বিত সরে ঘরের সোপানে বসিয়া যখন श्बान প্রেমালুপ করিতেছিলেন, তখন নিকটের একটি কামিনী বুক্ষের ডাল অবলম্বন কয়িয় রজনীকান্ত র্তাহাদিগের কথোপকথন শুনিয়াছিলেন। কুমুদিনী তাঁহাতে কত রাগ করিয়াছিলেন, কত বিরক্ত হইয়াছিলেন, রজনীকে রূঢ়বাক্য দ্বারা কত ভৎসনা করিয়াছিলেন এমন ন্ধি রজনীকে কাদাইয়া ছাড়িয়ছিলেন। শৈশবসহচরী । সেই জ্যোৎস্নাময়ী উদ্যানের ૨ઉ છે كم আর আজ তিনি স্বয়ং কি করিলেন ? সংসারের এইরূপ গতি! রজনীকান্ত বারাগু হইতে যাষ্টয়া কুমুদিনীর মাতার নিকট বিদারপ্রার্থন, করিলেন। কুমুদিনীর মাত বলিলেন, “ বাবা রোজ সকালে বিকালে এক এক বার দেখা দি ও—জার প্রত্যহ এখানে আহার করি ও ।” রজনীকান্ত দেখা দিতে স্বীকৃত হইলেন, কিন্তু প্রত্যহু আহার করিতে সন্মত হইলেন না—বলিলেন, “ আমায প্রত্যহ কাছারি যাইতে হয়, কোন দিন দশটার সমর, কোন দিন দুই প্রহরের সময় প্রত্যহ এখানে আহার করা হইয়া উঠিবে না, এক এক দিন আহার করিব।” এই বলিয়া আপন গৃহাভিমুখে চলিলেন। কুমুদিনীও আপনার শয়নকক্ষেয় গবাক্ষে আসিয়া বসিয়া দেখিলেন, এক ব্যক্তি রাজপথ ত্যাগ করিয়া প্রান্তর’ দিয়া উহার দক্ষিণপাশ্বের একটি অট্টালিকার দিকে যাইতেছেন। অতি মুছ গমনে যাইতেছেন, প্রাস্তর পার হইরা গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলেন। আর র্তাহাকে দেখা গেল না—কিয়ৎকাল বিলম্বে অট্টালিকার বাতায়নপথ দিয়া যে দীপমালা দেখা যাইতেছিল একে একে তাহা সকলই নিৰ্ব্বাণ হইল। তৎপরে গবাক্ষ গুলি কে অসিয়া বন্ধ করিল, জনমানবের আর চিহ্ন পাওয়া গেল না—কেবল মাত্র সুন্দর শ্বেত অট্টালিকাটি চন্দ্রীলোকে আরো শ্বেত দেখাইতেছিল, কিন্তু কুমুদিনীর হৃদয়ও অন্ধকারময় হইল ।