পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা । ] ভরত । 36న ছেন। রামচন্দ্র ভরতকে এত ভালবাসিতেন যে, “মম প্রাণৈঃ প্রিয়তরঃ” বলিয়া তিনি বারংবার ভরতের উল্লেখ করিয়াছেন । কৌশল্যাকে রাম বলিয়াছিলেন—“ধৰ্ম্মপ্রাণ ভরতের কথা মনে করিয়া তোমাকে অযোধ্যায় রাখিয়া যাইতে আমার কোন চিস্তার কারণ নাই ।” অথচ সেই রামচন্দ্র ও ভরতের প্রতি দুই একটি সন্দেহের বাণ নিক্ষেপ না করিয়াছেন, এমন নহে । তিনি সীতার নিকট বলিয়াছিলেন, “তুমি ভরতের নিকট আমার প্রশংসা করি ও না—ঋদ্ধিযুক্ত পুরুষের পরের প্রশংসা ‘শুনিতে ভালবাসেন না ।” এই সন্দেহের মার্জনা নাই । পিতা দশরথ রামাভিষেকের উদ্যোগের সময় ভরতকে সন্দেহের চক্ষে দেখিয়াছিলেন, রামকে তিনি আহবান করিয়া আনিয়া বলিয়াছিলেন, “ভরত মাতুলালয়ে থাকিতে থাকিতেই তোমার অভিষেক সম্পন্ন হইরা যায়, ইহাই আমার ইচ্ছা ; কারণ যদি ও ভরত ধাৰ্ম্মিক ও তোমার অমুগত, তথাপি মতুষ্যের মন বিচলিত হইতে কতক্ষণ !” ইচ্ছুকুবংশের চিরাগত প্রথানুসারে সিংহাসন জ্যেষ্ঠ ভ্রাতারই প্রাপ্য, এমত অবস্থায় ধাৰ্ম্মিকাগ্রগণ্য ভরতের প্রতি এই সন্দেহের মার্জনা নাই। রাম ভরতের চরিত্রমাহাম্মা এত বুঝিলেন, তথাপি বনবাসাস্তে ভরদ্বাঙ্গশ্রম হইতে হকুমানকে ভরতের নিকটে পাঠাইয়া বলিয়া দিলেন —“আমার প্রতাগমনসংবাদ শুনিয়া ভরতের মুখে কোন বিকৃতি হয় কি না, তাহ ভাল করিয়া লক্ষ্য করিও।” এই সন্দেহও একান্ত অমার্জনীয়। জগতে অমপরাধীর দও অনেকার হইয়াছে, কিন্তু ভরতের মত অাদর্শধাৰ্ম্মিকের প্রতি এইরূপ দণ্ডের দৃষ্টান্ত বিরল। লক্ষ্মণ বারংবার “ভরতম্ভ বধে দোষং নাহং পশুমি রাঘব” . ৰলিয়া আস্ফালন করিয়াছেন, অথচ সেই ভরত অশ্রুরুদ্ধকণ্ঠে লক্ষ্মণের কথা বলিয়াছেন —“সিদ্ধার্থঃ থলু সৌমিত্রির্যশ্চন্দ্রবিমলোপমম্। মুখং পশুতি রামস্ত রাজীবাক্ষং মহাস্থ্যুতিম্।” প্রকৃতিপুঞ্জের ভরতের প্রতি বিদ্বিষ্ট হওরার কিছু কারণ অবশুই বিদ্যমান ছিল । এত বড় ষড়যন্ত্রট হইয় গেল, ভরতের ইহাতে কি পরোক্ষে কোনরূপই অমুমোদন ছিল না ? মাতুল যুধাজিতের সঙ্গে পরামর্শ করিয় ভরত যে দূর হইতে স্বত্রচালনা করিয়া কৈকয়ীকে নাচাইয়া তোলেন নাই, তাহার প্রমাণ কি ? এই সন্দেহের আশঙ্কণ করিয়া ভরত বিসংজ্ঞ অবস্থায় কৈকয়ীকে বলিয়ছিলেন -“যখন অযোধ্যার প্রকৃতিপুঞ্জ রুদ্ধকণ্ঠে সজলনেত্রে আমার দিকে তাকাইবে, আমি তাছা সহ করিতে পারিব না ।” কৌশল্য ভরতকে ডাকিয়া আনিয়া কটুবাক্য বলিতে লাগিলেন, সেই সকল বাক্যে ব্রণে স্বচিক বিদ্ধ করিলে যেরূপ কষ্ট হয়, ভরতকে সেইরূপ বেদন দিয়াছিল । দৈবচক্রে পড়িয়া এই দেবতুল্যচরিত্র বিশ্বের সকলের সন্দেহের ভাজন হইয়া লাঞ্ছিত হইয়াছিলেম । তিনি রামচন্দ্রকে ফিরাইয়া আনিবার জন্ত বিপুল বাহিনী সঙ্গে যখন অগ্রসর হইতেছিলেন, নিষাদাধিপতি গুহক তখন তাহণকে রামের অনিষ্টকামনায় ধাবিত মনে করিয়া পথে লগুড় ধারণপূর্বক দাড়াইয়া ছিলেন, এমন কি ভরদ্বাজ ঋরি পর্য্যস্ত র্তাহাকে ভয়ের চক্ষে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন—“আপনি সেই নিষ্পাপ রাজপুত্রের প্রতি কোন পাপ