পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম সংখ্যা। ] এটা একটা অবাস্তর কথা । মোটের উপর, সম্পাদক যে প্রবন্ধটি লিখিয়াছেন, তাহার প্রশংসা করিতেই হইবে। ইহার মধ্যে চাপা কথা ঢের আছে, তাহ চাপাই থাক! আমরা কেবল একটি কথা যোগ করিতে চাই মাত্র । যাহার হাতে শক্তি আছে, সে যে স্বসম্প্রদায়ের দিকে টানিয়া অবিচার করিবে, ইহা মানুষের স্বভাব। ইংরাজও মানুষ, তাই সে ইংরাজ-ক্রিমিনালকে সাজা দিয়া উঠিতে পারে না । যাহার হাতে শক্তি নাই, সে .. প্রবলের অন্তায় বিচার অগত্যা সহ করে, • ইহাওঁ মানুষের স্বভাব । আমরাও মানুষ, তাই আমাদিগকে ইংরাজের আক্রমণ চুপ করিয়া সহ কুরিতে হয় । এই এক জায়গায় মনুষ্যত্বের সমনিম্নভূমিতে ইংরাজের সঙ্গে আমরা একত্রে মিলিতে পারিয়াছি। নুতন ইস্কুল হইতে বাহির হইয়া যখন সাম্য, স্বাধীনতা, মৈত্রী প্রভৃতি বিদেশী বচনগুলি বাংলায় তর্জমা করিবার ভার আমরা গ্রহণ করিয়াছিলাম, তখন আমরা এই জানিতাম যে, যুরোপ বাহুবলে প্রবল হইলেও "মৰ্মষ্যত্বের অধিকারসম্বন্ধে দুৰ্ব্বলের সহিত আপনার সাম্য স্বীকার করেন । তখন আমরা ইস্কুলের উত্তীর্ণ ছেলেরা একেবারে অভিভূত হইয়া গিয়াছিলাম । বলিয়াছিলাম, ইহারা দেবতা । আমরা চিরকাল ইহাদিগকে পুজা করিব এবং ইহারা চিরকাল আমাদিগকে প্রসাদ বিতরণ কৱিৰে—ইহাদের সহিত আমাদের এই সম্বন্ধই শাশ্নত ।. আমরা মনের ভিতর হইতে ইহাদের কাছে সম্পূর্ণ হার মানিয়াছিলাম । - রাজকুটুৰ। අා আজ যখন বুঝিতেছি, ইহার মোদের অসমকক্ষ লছে—আমরাও ছৰ্ব্বল, ইহারাও ছৱল—আমাদের অক্ষমের ছৰ্ব্বলত, ইহাদের সক্ষমের দুৰ্ব্বলতা—তখন অভিভূতির ভার কাটিয়া গিয়া আমরা মাথা তুলিতে পারি। ইংরাজ ক্রমাগত আমাদিগকে বুঝাইবার চেষ্টা করিয়াছে, দ্যায়পরতা প্রভৃতি সম্বন্ধে তোমাদের স্বশ্রেণীর কোন জাতির সহিত আমাদের তুলনাই হয় না। এক সময়ে ইংরাজ যেন এই ধৰ্ম্মশ্রেষ্ঠতার প্রেষ্টিজ চালাইবার চেষ্টা করিয়াছিল । যে ব্যক্তি অক্ষমের নিকট ধৰ্ম্মরক্ষণ করিয়া চলে, তাহার কাছে হার না মানিয়া থাকা যায় ন—সেকালে আমাদের মন হার মানিয়াছিল । এখন ইংরাজ । প্রতাপের প্রেষ্টিজ সৰ্ব্বাত্রগণ্য করিয়াছে-- স্বদেশী ও এদেশীকে ধৰ্ম্মের চক্ষে সমান করিবার বল ও সাহস এখন তাহার নাই— এখন ইংরাজের কাছে ইংরাজ-গবমেণ্ট, ছৱঁল । এখন ম্যাঞ্চেষ্টার, রাজা,-বার্মিংহাম রাজা, নীলকর রাজা, চা-কর রাজা, চেন্ধর অফ কমার্স রাজা,—তাই আজকাল আমাদের প্রতি ভয়-দ্বেষ-ঈর্ষার নানা লক্ষণ দেখিতে পাই। দেখি, এঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হইতে আমরা তাড়া খাইতেছি, আপিস হইতে ভ্ৰষ্ট হইতেছি, ডাক্তারিশিক্ষায় বাধা পাইতেছি, বিজ্ঞানশিক্ষায় গৃঢ়ভাবে প্রতিহত হইতেছি । ইহাতে আমাদের অনেক অস্থবিধা আছে, কিন্তু এই সাত্বনাটুকু পাইতে পারি যে, কৰ্ত্তারা আমাদের চেয়ে বেশি বড় নহে । ইহার। আমাদের অগ্রাহ করিয়া বঁচে ন—ইহাদের মনে এ আশঙ্কাটুকু আছে যে, সুযোগ পাইলে আমরা বিদ্যায়, ক্ষমতায়