পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৬ বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, আষাঢ় । ঠিকান দাও না। এখন যাইতেছ কোথায় । বিশেষ কোন কাজ আছে ?” রমেশ কহিল—“না, আদালত হইতে ফিরিতেছি।” অন্নদাবাবু। তবে চল, ওখানে চা খাইবে চল । রমেশের হৃদয় ভরিয়া উঠিয়াছিল— সেখানে আর দ্বিধা করিবার স্থান ছিল না । সে গাড়িতে চড়িয়া বসিল । একান্ত চেষ্টায় সঙ্কোচ কাটাইয়া হেমনলিনীকে জিজ্ঞাসা করিল—“আপনি ভাল আছেন ?” হেমনলিনী কুশলপ্রশ্নের উত্তর না দিয়াই কহিল, “আপনি পাস হইয়া আমাদের যে একবার খবর দিলেন না বড় ?” রমেশ এই প্রশ্নের কোন জবাব খুজিয়া ন পাইয়া কহিল—“আপনিও পাস হইয়াছেন দেখিলাম ।” হেমনলিনী হাসিয়া কহিল, “তবু ভাল, আমাদের খবর রাখেন ।” অন্নদীবাবু কহিলেন—“তুমি এখন বাসা কোথায় করিয়াছ ?” রমেশ কহিল—“দর্জিপাড়ায়।” অন্নদীবাবু কহিলেন—“কেন, কলুটোলায় তোমার সাবেক বাস ত মন্দ ছিল না ।” উত্তরের অপেক্ষায় হেমনলিনী বিশেষ কৌতুহলের সহিত রমেশের দিকে চাহিল। সেই দৃষ্টি রমেশকে আঘাত করিল—সে তৎক্ষণাৎ বলিয়া ফেলিল, “ই, সেই বাসাতেই . কিরিব স্থির করিয়াছি।” তাহার এই বাসা বদল করার অপরাধ যে হেমনলিনী গ্ৰহণ করিয়াছে, তাহ রমেশ বেশ ৰুঝিল—সাফাই করিবার কোন উপায় আমাদের নাই জানিয়া সে মনে মনে পীড়িত হইতে লাগিল । অন্ত পক্ষ হইতে অণর কোন প্রশ্ন উঠিল না । হেমনলিনী গাড়ির বাহিরে পথের দিকে চাহিয়া রহিল । রমেশ আর থাকিতে না পারিয়া অকারণে আপনি কহিয়া উঠিল—“আমার একটি অাষ্ট্ৰীয় হেদুয়ার কাছে থাকেন, তাহার খবর লইবার জন্ত দৰ্জ্জিপাড়ায় বাসা করিয়াছি।” রমেশ নিতাস্ত মিথ্যা বলিল না, কিন্তু কথাটা কেমন অসঙ্গত শুনাইল। মাঝে মাঝে আত্মীয়ের খবর লইবার পক্ষে কলুটোলা হেদুয়া হইতে এতই কি দুৱ ? এ প্রশ্ন কি উপস্থিত কাহারো মাথায় উঠিতে পারে না যে, আত্মীয় ছাড়া এ সহরে আর কি কাহারে খবর লইবার নাই ? অতএব রমেশ যাহা বলিল, সেটা জবাবদিহীস্বরূপে কোন কাজেই লাগিল না, বরঞ্চ উল্টাই হইল । হেমনলিনীর দুই চক্ষু গাড়ির বাহিরে পথের দিকেই নিবিষ্ট হইয়া রহিল। হতভাগ্য রমেশ ইহার পরে কি বলিবে, কিছুই ভাবিয়া পাইল না । একবার কেবল জিজ্ঞাসা করিল, “যোগেনের খবর কি ?” অন্নদীবাবু কহিলেন, “সে আইনপরীক্ষায় ফেল করিয়া পশ্চিমে হাওয়া খাইতে গেছে।” গাড়ি যথাস্থানে পৌছিলে পর পরিচিত ঘর ও গৃহসজ্জাগুলি রমেশের উপর মন্ত্ৰজাল বিস্তার করিয়া দিল । সুখের দিন ছিল । তখনকার প্রত্যেক দিনই সোনার অভিায় মণ্ডিত, স্বরের ঝঙ্কারে স্পন্দিত হইয়। রজনীর সুখস্বপ্নের মধ্যে বিলীন হইয়া গেছে । রমেশের বুকের মধ্য হইতে গভীর দীর্ঘ উখিত হইল । *