পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৮ ' টেবিলে ‘দ্বিগুণ উৎসাহের সহিত নিজেকে অভিব্যক্ত করিয়া তুলিতেছিল। আজ সহসা * রমেশকে দেখিয়া সে থমকিয় গেল । আত্মসংবরণ করিয়া,হাসিয়া কহিল—“একি ! এ যে রমেশবাবু! আমি বলি, আমাদের বুঝি একেবারেই ভুলিয়া গেলেন ।” রমেশ কোন উত্তর না দিয়া একটুখানি হাসিল । অক্ষয় কহিল, “আপনার বাবা আপনাকে যেরকম তাড়াতাড়ি গ্রেফতার করিয়া লইয়া গেলেন, আমি ভাবিলাম, তিনি এবার আপনার বিবাহ না দিয়৷ কিছুতেই ছাড়িবেন না-ফাড় কাটাইয়া আসিয়াছেন ত ?” হেমনলিনী অক্ষয়কে বিরক্তিদৃষ্টিদ্বারা বিদ্ধ করিল। অন্নদীবাবু কহিলেন, “অক্ষয়, রমেশের পিতৃবিয়োগ হইরাছে!” রমেশ বিবর্ণমুখ নত করিয়া বসিয়া রহিল । তাহাকে বেদনার উপরে ব্যথা দিল বলিয়া হেমনলিনী অক্ষয়ের উপর মনে মনে ভারি রাগ করিল। রমেশকে তাড়াতাড়ি কহিল, *রমেশবাবু, আপনাকে আমাদের নুন্তল অ্যালবম্খান দেখান হয় নাই।” বলিয়। অ্যালবম্ আনিয়া রমেশকে টেবিলের একপ্রাস্তে লইয়া গিয়া ছবি লইয়া আলোচনা করিতে লাগিল এবং একসময়ে আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করিল, রমেশবাবু, আপনি বোধ হয় নুতন বাসায় একলা থাকেন।” - রমেশ কহিল, “হঁ৷ ” হেমনলিনী । আমাদের পাশের বাড়ীতে আঁসিতে আপনি দেরি করিবেন না । রমেশ কহিল,“ন, আমি এই সোমবারেই নিশ্চয় আসিব ।” বঙ্গদশন । [ ৩য় বর্ষ, আষাঢ় । হেমনলিনী । মনে করিতেছি, আমাদের বি.-এ-র ফিলজফি আপনার কাছে মাঝে মাঝে বুঝাইয়া লইব । রমেশ তাহাতে অত্যন্ত উৎসাহ প্রকাশ করিল। ওদিকে অন্নদাবাবু অন্তমনস্ক অক্ষয়কে ধরিয়া তাহার অজীর্ণরোগের নানাপ্রকার লক্ষণ বিস্তারিত করিয়া বিবৃত করিতে লাগিলেন । এই ক্ষুদ্র পরিবারের মধ্যে অক্ষয় অন্নদাবাবুকে এমনি করিয়াই বশ করিয়াছিল । প্রায়ই দেখা হইবামাত্র সে উৎকষ্ঠিতভাবে অন্নদীবাবুকে জিজ্ঞাসা করিত—“আiপনাকে অত্যন্ত কাহিল দেখিতেছি যে ” তৎক্ষণাৎ অন্নদাবাবুরও স্বর ক্ষীণ হইয়া আসিত । তিনি রাত্রের অনিদ্রা, সকালের স্বল্পাহার, তিনচারিদিনের মানবন্ধ উল্লেখ করিয়া নিজের বর্তমান অবস্থাকে অত্যন্ত শোচনীয় বলিয়া প্রতীয়মান করিয়া তুলিতেন। অক্ষর মাথা নাড়িয়া বলিত, “কিছুদিন আপনার বায়ুপরিবর্তন করা একান্ত দরকার হইয়াছে—এখানে আপনার শরীর কিছুতেই সারিৰে না ।” র্তাহার স্বাস্থ্যসম্বন্ধে এইরূপ নৈরাপ্তজনক কথা শুনিয়া অক্ষয়ের উপরে তিনি খুব খুলি হইতেন—হেমনলিনীর প্রতি অঙ্গুকিনির্দেশ করিয়া বলিতেন—“বায়ুপরিবর্তনেই বা যাই কেমন করিয়া !” sts অক্ষয় বিমর্ষ হইয়া কহিত, “তাও ত দেখিতে পাইতেছি—আপনি গেলে এদিককরে চলে কি করিয়৷ ” এইরূপে নিজের শরীরসম্বন্ধে সমস্ত আশা এবং উপায়ের পথ অৰবুদ্ধ সংপ্রমাপ