পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা । ] · স্বপ্নতত্ত্ব । ృరి& বহিঃস্থ পদার্থ বলিয়া জ্ঞান করি। নিদ্রাকালে স্নায়ুমণ্ডলী অল্পেই উত্তেজিত হয়। স্বপ্নের স্বাভাবিক স্পষ্টতার ইহাও কারণ । এই কারণেই স্বপ্নে ছোট জিনিসকে বড়, অল্প স্থানকে প্রশস্ত স্থান এবং অল্প কালকে দীর্ঘকাল বলিয়া বোধ হয় । জাগ্রদবস্থায় ওষ্ঠদেশে আস্তে হস্তস্পর্শ করিলে স্বায়ুযন্ত্র সামান্ত উত্তেজিত হুর মাত্র, কিন্তু নিদ্রাকালে ওষ্ঠস্পর্শ করিয়া ডাঃ মরে ভয়ানক দৈহিক কষ্টের স্বপ্ন উৎপাদন করিয়াছিলেন । পরিশেষে এক অতি প্রয়োজনীয় বিষয়ের আলোচনা করিয়া আমরা প্রবন্ধের উপসংহার করিব। অধ্যাত্মবাদী দার্শনিকগণের মতে, স্বপ্ন জাগ্রদবস্থারই বিস্তৃতিমাত্র । মানবাত্মার স্বরূপ চৈতন্ত উভয়ত্রই বর্তমান । স্ব প্রসিদ্ধ দার্শনিক কাণ্ট বলেন, জীবনের অবসানেই স্বপ্নের বিরতি সম্ভব । দেকীৰ্ত্ত (Descartes) হইতে আরম্ভ করিয়া হামিণ্টন ( Sir W. Hamilton ) পৰ্য্যন্ত অধিকাংশ দার্শনিকই বলেন, মানবমন কখনই নিদ্রিত হয় না, নিদ্রা কেবল বাহেন্দ্রিয়ের জন্ত । মানবাত্মার স্বরূপ চৈতন্ত ; নিদ্রাবস্থায়ও মন ক্রিয়াশীল । বদিও সকল সময়ে আমরা স্বপ্ন স্মরণ করিতে না পারি, তথাপি নিদ্রিত হইলেই মানবমন স্বপ্ন দেখিতে থাকে। পরন্তু লক্ ( Locke D প্রভূতি সন্দেহবাদিগণ বলেন, যদি স্বপ্ন স্মরণ করতেই ন পারি, তবে স্বপ্ন দেখি কিরূপে বলিব ? কিন্তু তাহার বুঝেন না যে, স্বপ্নদর্শনের সমস্ত বাহালক্ষণ প্রকাশ করিয়াও অনেকে জাগিয়া স্বপ্নের বিষয় আদে। স্মরণ করিতে পারে না। নিদ্রিত ব্যক্তিকে হান্ত করিতে দেখিলে অথবা কথা কহিতে শুনিলে, সে যে স্বপ্ন দেখিতেছে, তৎসম্বন্ধে কোন সন্দেহ থাকে না । কিন্তু অনেক সময়ে সে জাগ্রত হইয়া তাহার স্বপ্ন স্মরণ করিতে পারে না । এখন প্রশ্ন এই, সকল নিদ্রাই কি স্বপ্নময়ী ?—অথবা স্বপ্নশূন্ত নিদ্রা কি অসম্ভব ? হামিণ্টন বলেন যে, নিদ্রাগমের অব্যবহিত পুৰ্ব্বে এবং নিদ্রাভঙ্গের অব্যবহিত পরে যখন মন কোন-নাকোন বিষয়ের চিন্তায় ব্যাপৃত থাকে দেখা যায়, তখন ইহা হইতে অনুমান করা যায় যে, নিদ্রাবস্থায়ও চৈতন্তের বিলোপ হয় না । কিন্তু ইহার বিরুদ্ধে অনেকে এই আপত্তি করেন যে, নিদ্রাভঙ্গের সময় অর্থাৎ জাগরণের অব্যবহিত পুৰ্ব্বে যে স্বপ্নের মত চৈতন্তের আভাস পাওয়া যায়; তাহ জাগরণ ও নিদ্রার মধ্যবৰ্ত্তী অবস্থা-- অর্থাৎ নিদ্রার অচৈতন্ত হইতে স্বপ্নের অৰ্দ্ধচৈতন্তের, এবং সেই অৰ্দ্ধচৈতন্য হইতে জাগরণের পূর্ণচৈতন্তের উদ্ভব হয় । বর্তমান সময়ে শারীরতত্বের যথেষ্ট উন্নতি এবং মনোবিজ্ঞানের সহিত শারীরতত্বের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠিত । হইয়াঁছে । মনোবিজ্ঞানের কোন তত্ত্ব শারীরবিদ্যার প্রতিকুল হইলে এখন আর তাহা সত্য বলিয়া গৃহীত হয় না। এখন প্রত্যেক মানসিক অবস্থার অমুরূপ স্বায়বিক অবস্থা পরীক্ষাদ্বারা আবিষ্কৃত হইতেছে । মস্তিষ্কের সহিত চৈতন্তের যে অতি নিকট সম্বন্ধ, তাহ বহুশ্রমসাধ্য পরীক্ষার দ্বারা স্থিরকৃত হইয়াছে। আমরা যখন কোন বিষয়ে চিন্তা করি, তখন মস্তিষ্কে এবং স্বায়ুমণ্ডলীতে নানারূপ ক্রিয়া চলিতে থাকে. সুতরাং