পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

34ર এই পুস্তকখানিরই অাদর অামাদের দেশে সৰ্ব্বাপেক্ষা বেশী । ভক্তের লেখা বলিয়াই ইহ আদৃত হইবার উপযুক্ত । দীনেজকুমারবাবু অনুবাদ করিয়াছেন মাত্র । পুস্তকের যাহা কিছু দোষ, তাহ আবটুসাহেবের, দীনেন্দ্রবাবুর নহে । এ কথা আমরা স্বীকার করিতেছি, অনুবাদ ভালই হইয়াছে। তবে দুইএকস্থলে এমন ভুল আছে, যাহা থাকা উচিত ছিল না । তাহার পুস্তকের ৪৫ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে যে, “তিনি ইউজিন ও হরতেন্স নামক পুত্রদ্বয় লইয়া ।” দীনেন্দ্রবাবুর মত উপযুক্ত লোকের জানা উচিত ছিল যে, হরতন্স কস্তা, পুত্র নহে । এমন ভুল আর ও দুইএকটা, থাকিলেও এ পুস্তকের মোটের উপর প্রশংসা করিতেছি এবং বলিতেছি যে, ইহা সমাদৃত হইবার উপযুক্ত । রঞ্জিন। —শ্ৰীস্বরমাসুন্দরী ঘোষ প্রণীত । মুল্য ১২ এক টাকা । এই গ্রন্থকত্রীর আর একখানি কবিতাপুস্তকের সমালোচনাস্থলে এই ‘বঙ্গদর্শনেই’ র্তাহার ভাষা ও ভাব, উভয়েরই প্রশংসা করিয়াছিলাম। এই পুস্তকের সমালোচনায় সেই প্রশংসা গাঢ়তর করিয়া করিতে পারি। ভাষা প্রাঞ্জলতর, ফুটতর হইয়াছে ; ভাব গভীরতর, উদারতর হইয়াছে ; উচ্ছ,সি চিন্তিততর, সংযততর হইয়াছে ; স্বতরাং বলিতে হয় যে, ‘সঙ্গিনীতে যে ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায়, এই পুস্তকে তাহ অধিকতর উৎকর্ষ লাভ করিয়াছে—অধিকতর পরিণত ও বিকশিত হইয়াছে। দুইএকটি কবিতার কিছু কিছু উদ্ধৃত করিয়া আমরা বুঝাইতেছি। বঙ্গদর্শন / /৩য় বৰ্ব্ব জায়াড় । জ্ঞানবৃদ্ধ ধৰ্ম্মরত ব্রাহ্মণ ব্ৰতহোমাদি পুণ্যানুষ্ঠানে নিরত থাকিয় জীবনযাপন করেন । একদিন প্রভাতে এক মেচ্ছ ভিখারিণী তাহার দ্বারে আসিয়া উপস্থিত । প্রভাতে অপবিত্র মুক্তি দেখিয়া ক্রোধান্ধ ব্রাহ্মণ কমণ্ডলু লইয়া ভীতিবিহবল ভিখারিণীকে তাড়না করিলেন । কল্যাণী ব্রাহ্মণী কিন্তু সেই অনাথাকে আদর করিয়া, তাহার হাত ধরিয়া আনিয়া বসাইয়া, তাহার ভিক্ষণপাত্র পুর্ণ করিয়া দিয়া তাহাকে বিদায় করি লেন । তথন— "বিপ্ৰ উঠে গরজিয়ু ছু ইলি যবনী ?—ত্যাজ্য। তুই আজ হতে, যাবৎ না হ’স শুদ্ধ ফিরি পথে পথে পুণ্য কাশাধামে ?—ব্রাহ্মণী কহিল। হাসি— পতিপুঙ্খ দীনসেবা, তাই মোর কাশী !” কি সুন্দর, উদার, মনোহর ভাব ! কোন পুরুষকবি লিখিলে ও ইহা প্রশংসাই হইত ; উচ্চজাতীয় হিন্দুমহিলা যে চিরপোষিত ংস্কারের কঠিন বন্ধন ছিন্ন করিয়া এমন উদারতায় উপনীত হইতে পারিয়াছেন, তাহ। . ত ভাবের উপাদেয়তা শতগুণ বদ্ধিত হইয়াছে । যেখানে যাহা প্রত্যাশা করা যায় না, সেখানে তাহ পাইলে বড়ই আহলাদ হয় । “নিৰ্ব্বাসিত সীতা’ শীর্ষক কবিতাটি বড়ই সুন্দর হইয়াছে । লক্ষ্মণ যখন রামচন্দ্রের কঠোর আজ্ঞা মিবেদন করিলেন, তথন সীতা মুচ্ছ ও গেলেন না, ভাঙিয়াও পড়িলেন না । মুহুর্তের জন্য তাহার সতীগৰ্ব্ব, নিরপরাধে দণ্ডিতগল্প অভিমান, জলিয়া উঠিল । তিনি লক্ষ্মণকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন— e