পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3●い。 মধ্যে কিছু ব্যবধান ছিল, কিন্তু সায়াষ্ট্রের আকাশ এই ছুই ছাদের ছুটি নরনারীর মাথার উপরে শুভদৃষ্টির একটিমাত্র নীলাঞ্চল প্রসারিত করিয়া ধরিত । দুই ছাদে দুইটি হৃদয় জ্যোতিষ্কসভাতলে অনস্তকালের মুকসাক্ষী গ্ৰহতারকাদের অনিমেষনেত্রের সম্মুখে নীরবে মিলনের আসন গ্রহণ করিত । হেমনলিনী পরীক্ষণ পাস করিবার ব্যগ্রতার সেলাইশিক্ষায় বিশেষ পটুত্ব লাভ করিতে পারে নাই। কিছুদিন হইতে তাহার এক সীবনপটু সখীর কাছে একাগ্ৰমৃনে সে সেলাই শিখিতে প্রবৃত্ত হইয়াছে। সেলাইব্যাপারটাকে রমেশ অত্যন্ত অনাবহুক ও তুচ্ছ বলিয়া জ্ঞান করে । হেমনলিনীকে সে বুরাবর সাহিত্যদর্শনের চর্চা করিতেই দেখিয়া আসিয়াছে, সেই ছবিটাই তাহার মনে অঙ্কিত হইয়া গেছে,—সাহিত্যেদর্শনে হেমনলিনীর সঙ্গে তাহার দেনপাওনা চলে—কিন্তু সেলাইব্যাপারে রমেশকে দূরে পড়িয়া থাকিতে হয়। এইজন্ত সে প্রায়ই কিছু অধীর হইয়া বলিত, “আজকাল সেলাইয়ের কাজ কেন আপনার এত ভাল লাগে ! ইহাতে বুদ্ধিবৃত্তির কোন চর্চা হয় না, কেবল একঘেয়ে কাজে যন্ত্রের মত আঙুল চালাইয়া যাইতে হয়। যাহাদের সময় কাটাইবার আর কোন সদুপায় নাই, তাহাদের পক্ষেই ইহা ভাল ।” হেমনলিনী কোন উত্তর না দিয়া ঈষৎ হাস্তমুখে ছুচে রেশম পরাইতে থাকে। অক্ষয় তীব্রস্বরে -বলে, “মেয়ের কেবল মার্টিনোর এথিক্স এবং টেনিসনের কবিতা পড়িবে, যে সকল কাজ সংসারের কোন প্রয়োজনে লাগে, বঙ্গদশন । [ ৩য় বর্য গ্রাবণ । রমেশবাবুর বিধানমতে সে সমস্ত তুচ্ছ । মশায় যত বড়ই তত্ত্বজ্ঞানী এবং কৰি হোস্ না কেন, তুচ্ছকে বাদ দিয়া একদিনও চলে না !” রমেশ উত্তেজিত হইয়া ইহার বিরুদ্ধে তর্ক করিবার জন্ত কোমর বাধিয়া বসে ; হেমনলিনী বাধা দিয়া বলে, “রমেশবাবু, আপনি সকল কথারই উত্তর দিবীর জম্ভ এত ব্যস্ত হন কেন ? ইহাতে সংসারে অনাবশুক কথা যে কত বাড়িয়া যায়, তাহার ঠিক নাই।”—এই ললিয়। সে মাথা নীচু করিয়া ঘর গণিয়া সাবধানে রেশমসূত্র চালা ইতে প্রবৃত্ত হয় । একদিন সকালে রমেশ তাহার পড়িবার ঘরে আসিয়া দেখে, টেবিলের উপর রেশমের ফুলকাটা মখমলে বাধানো একটি বুটিংবহি সাজানে রহিয়াছে। তাহার একটি কোণে "র" অক্ষর লেখা আছে, আর এক কোণে সোনালি জরি দিয়া একটি পদ্ম আঁকা। বইখানির ইতিহাস ও তাৎপৰ্য্য বুঝিতে রমেশের ক্ষণমাত্রও বিলম্ব হইল না। তাহার বুক নাচিয়া উঠিল । সেলাইজিনিষটা যে বিশেষ অবস্থায় তেমন তুচ্ছ নহে, তাহা তাহার অন্তরাত্মা বিনা তর্কে, বিনা প্রতিবাদে স্বীকার করিয়া লইল । বুটিংবইটা বুকে চাপিয়া-ধরিয়া সে অক্ষয়ের কাছেও হার মানিতে রাজি হইল । সেই বুটিংবই খুলিয়া তখনি তাহার উপরে একখানি চিঠির কাগজ রাখিয়া সে লিখিল— “আমি যদি কবি হইতাম, তবে কবিতা লিথিয়া প্রতিদান দিতাম, কিন্তু প্রতিভা হইতে আমি বঞ্চিত । ঈশ্বর আমাকে দিবার ক্ষমতা দেন নাই, কিন্তু লইবার ক্ষমতাও