পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ সংখ্যা 1 J নৌকাডুৰি । ు(tఫి গানের সকল কথা স্পষ্ট বুঝা যায় না— কিন্তু একেবারে প্রত্যেক কথায় কথায় বুঝিযায় কোন প্রয়োজন নাই। মনের মধ্যে যখন বিরহমিলনের বেদন সঞ্চিত হইয়া আছে, তখন একটু আভাসই যথেষ্ট । এটুকু বোঝা গেল যে, বাদল ঝরিতেছে, ময়ুর ডাকিতেছে এবং একজনের জন্ত আর একজনের ব্যাকুলতার অস্ত নাই । অক্ষয় নিজের দরদেই সমস্ত মন দিয়া গান গাহিতেছিল। স্বরের ভাষায় সে নিজের অব্যক্ত কথা বলিবার চেষ্টা করিতেছিল—কিন্তু সে ভাষা কাজে লাগিতেছিল আর দুইজনের। দুইজনের হৃদয়তরঙ্গ সেই স্বরলহরীকে আশ্রয় করিয়া পরস্পরকে আঘাত-অভিঘাত করিতে ছল । জগতে কিছু আর অকিঞ্চিৎকর রহিল না । সব যেন মনোময় হইয়া গেল । পৃথিবীতে এপর্য্যস্ত যত মানুষ যত ভালবাসিয়াছে, সমস্ত যেন দুটিমাত্র হৃদয়ে বিভক্ত হইয়া অনিৰ্ব্বচনীর স্বখে-দুঃখে আকাজক্ষয়-আকুলতায় কম্পিত হইতে লাগিল । অন্নদীবাবু কহিলেন, “অক্ষয়, একটা বাংলা গান গাও না, তোমার ঐ হিন্দিগান আমি বুঝি না ।” হেমনলিনী ব্যস্ত হইয়া কহিল, “কেন বাবা, হিন্দিগানই ত বেশ—অামার বেশ লাগে ।” বাংলা গান বড় বেশি স্পষ্ট—তাহার সমস্তই বোঝা যায় । তাহাতে আক্ৰ থাকে না । প্রেম অস্তঃপুরচারী, বেশি প্রকাগুতা তাহার পক্ষে পীড়াদায়ক । সে কতকটা প্রকাশ না হইলেও বঁাচে না, আবার কতকটা আড়াল ন হইলেও মরিয়া যায়। তাহার পক্ষে কথার চেয়ে স্বরই ভাল, এবং লোকজনের মধ্যে যাংলার চেয়ে হিন্দিই ভাল । ‘প্রাণনাথ যখন কানে বড় বেশি ঠেকে, তখন সৈয়া’ বেশ অনায়াসে চলিয়া যায়, এবং “প্রিয়া’ বলিতে যখন বাধে, তখন “পিয়া’কথাটা কাজে লাগিতে পারে। বৈষ্ণবপদাবলী এইজন্তই আজ পর্য্যন্ত সাদা যাংলা ব্যবহার করিতে পারিল না । সেদিন মেঘের মধ্যে যেমন ফাক ছিল না, গানের মধ্যেও তেমনি হইয়া উঠিল। হেমনলিনী কেবলি অম্বনয় করিয়া বলিতে লাগিল—“অক্ষয়বাবু, থামিবেন না, আর একটা গান, আর একটা গান্‌ ৷” উৎসাহে এবং আবেগে অক্ষয়ের গান অবাধে উৎসারিত হইতে লাগিল । গানের স্থর স্তরে স্তরে পুঞ্জীভূত হইল, যেন তাহ। স্বচিভেদ্য হইয়া উঠিল, যেন তাহার মধ্যে রহিয়া রহিয়া বিদ্যুৎ খেলিতে লাগিল— বেদনাতুর হৃদয় তাহার মধ্যে আচ্ছন্ন-আবৃত হইয়া রহিল । সেদিন অনেক রাত্রে অক্ষয় চলিয়া গেল । রমেশ বিদায় লইবার সময় যেন গানের স্বরের ভিতর দিয়া নীরবে হেমনলিনীর মুখের দিকে একবার চাহিল । হেমনলিনীও চকিতের মত একবার চাহিল, তাহার - দৃষ্টির উপরেও গানের ছায়া । রমেশ বাড়ী গেল। বৃষ্টি ক্ষণকালমাত্র থামিয়াছিল, আবার ঝুপক্সপশব্দে বৃষ্টি পড়িতে লাগিল। রমেশ সে রাত্রে ঘুমাইতে পারিল না ৮ হেমনলিনীও অনেকক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া গভীর অন্ধকারের মধ্যে বৃষ্টি