পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3\9* আসল্প বিচ্ছেদের সম্ভাবনায় রমেশ আজকাল খুব বেশি করিয়া হাৰ্ম্মোনিয়ম শিখিতে প্রবৃত্ত হইয়াছে। একদিন কথায় কথায় হেমনলিনী কহিল, *রমেশবাবু, আমার বোধ হয়, আপনার অন্তত কিছুদিন বায়ুপরিবর্তন দরকার। না বাবা ?” অল্পদাবাবু ভাবিলেন কথাটা সঙ্গত বটে, কারণ ইতিমধ্যে রমেশের উপর দিয়া শোকঃখের দুর্যোগ গিয়াছে। কহিলেন, “অন্তত কিছুদিনের জন্ত কোথাও বেড়াইয়া আসা ভাল। বুঝিয়াছ রমেশ, পশ্চিমই বল আর যে-দেশই বল, আমি দেখিয়াছি, কেবল কিছুদিনের জন্য একটু ফল পাওয়া যায়। প্রথম দিনকতক বেশ ক্ষুধা বাড়ে, বেশ খাওয়া যায়, তাহার পরে যে কে সেই ! সেই পেটভার হইয়া অীসে, বুকজাল করিতে থাকে, যা খাওয়া যায়, তা-ই—” হেমনলিনী । রমেশবাবু, আপনি নৰ্ম্মদাঝরণা দেখিয়াছেন ? রমেশ । না, দেখি নাই । হেমনলিনী । এ আপনার দেখা উচিত, না বাবা ?. অন্নদা । তা বেশ ত, রমেশ আমাদের সঙ্গেই আসুন না কেন ? হাওয়া-বদলও হইবে, মাৰ্ব্বল-পাহাড়ও দেখিবে । হাওয়া-বদল করা এবং মাৰ্ব্বল-পাহাড় দেখা, এই দুটিই যেন রমেশের পক্ষে সম্প্রতি সৰ্ব্বাপেক্ষ প্রয়োজনীয়—মুতরাং রমেশকেও রাজি হইতে হইল । * সেদিন রমেশের শরীরমন যেন হাওয়ার উপরে ভাসিতে লাগিল। অশান্ত হৃদয়ের আবেগকে কোন-একটা রাস্তায় ছাড়া দিবার శ বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, শ্রাবণ । জন্তু সে আপনার বাসার ঘরের মধ্যে স্বার রুদ্ধ করিয়া হাৰ্ম্মোনিয়মটা লইয়া পড়িল । আজ আর তাহার ষত্বণত্বজ্ঞান রহিল ন+– যন্ত্রটার উপরে তাহার উন্মত্ত আঙুলগুলা তালবেতালের নৃত্য বাধাইয়। দিল। হেমনলিনীর দুরে যাইবার সম্ভাবনায় কয়দিন তাহার হৃদয়টা ভারাক্রান্ত হইয়া ছিল—আজি উল্লাসের বেগে সঙ্গীতবিদ্যাসম্বন্ধে সৰ্ব্বপ্রকার দ্যায়অন্ত্যায়-বোধ একেবারে বিসর্জন দিল । এমন-সময় দরজায় ঘা পড়িল—“আ সৰবনাশ, থামুন, থামুন রমেশবাবু, করিতেছেন কি ?” রমেশ অত্যন্ত লজ্জিত হইয়া আরক্তমুখে দরজা খুলিয়া দিল । অক্ষয় ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া কহিল, “রমেশবাবু, গোপনে বসিয়া এই যে কাগুটি করিতেছেন, আপনাদের ক্রিমিনাল কোডের কোন দণ্ডবিধির মধ্যে কি ইহা পড়ে না ?” রমেশ হাসিতে লাগিল, কহিল, “অপরাধ কবুল করিতেছি ।” অক্ষয় কহিল, “রমেশবাবু, আপনি যদি কিছু না মনে করেন, আপনার সঙ্গে আমার একটা কথা আলোচনা করিবার আছে।” রমেশ উৎকণ্ঠিত হইয়া নীরবে আলোচ্যবিষয়ের প্রতীক্ষা করিয়া রহিল । . অক্ষয় । আপনি এতদিনে এটুকু বুঝিয়tছেন, হেমনলিনীর ভালমন্দের প্রতি আমি উদাসীন নহি। রমেশ ই-না কিছু না বলিয়া চুপ করিয়া শুনিতে লাগিল । 命 অক্ষয় । তাহার সম্বন্ধে আপনার অভিপ্রায় কি, তাহ জিজ্ঞাসা করিবার