পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՖԳՀ ঐশ্বৰ্য তোমার পদপ্রান্তে,—তোমার অশ্রুক্লিয় মুখপঙ্কজ আমাকে পীড়াদান করিতেছে । তোমার সুন্দর মুখ কেন শোকাৰ্ত্ত হইয়া থাকিবে ? তোমার স্নিগ্ধ পল্লবকোমল পাদযুগের তলে আমার মস্তক রাখিতেছি, রাবণ এমনভাবে এপর্য্যন্ত কোন রমণীর প্রেমভিক্ষা করে নাই। তুমি আমার প্রতি প্রসন্ন হও ।” সীতা এ সকল কথায় কর্ণপাত করেন নাই । তিনি বিমূঢ় হইয়া পড়িয়াছিলেন, রাবণের প্রতি বারংবার রোষদীপ্ত বিরক্ত চক্ষে চাহিয়া সীতা আরক্তগওে ও ফুরিত অধরে তাহাকে বলিলেন —“যজ্ঞমধ্যস্থিত ব্ৰাহ্মণের মন্ত্রপুত ক্রগভাণ্ডমণ্ডিত বেদী ম্পর্শ করিবে, চণ্ডালের কি সাধ্য ? রাক্ষস, তুমি নিজের মৃত্যু আকাঙ্ক্ষণ করিতেছ।” রাবণের দিকে ঘৃণায় পৃষ্ঠ ফিরাইয়া সীতা মৌনী হইয়া রহিলেন, অনবদ্যাঙ্গীর সমস্ত শরীর হইতে ঘৃণা ও অলৌকিক দীপ্তি বিচ্ছরিত হইতে লাগিল । রাবণ অনন্তোপায় হইয়া রাক্ষসীদিগকে বলিল—“ইহাকে অশোকবনে হাইয়া যাও, বলে হউক, ছলে হউক, মিষ্টবাক্যে হউক, ভয়প্রদর্শনে হউক, ইহাকে আমার বশীভূত করিয়া দাও। সেই অশোকবনের পুষ্পস্তবকনম্র শাখা যেন ভূমিচুম্বন করিতে চাহিতেছে—অদূরে বিশাল চৈত্যুপ্রাসাদ ; তাহার সহস্ৰ স্ফটিকস্তম্ভের প্রত্যেকটির উপরে এক একটি র্যান্ত্রের প্রতিমূৰ্ত্তি । নানা-বিচিত্র প্রতিমূৰ্ত্তিশোভিত উপবন । চম্পক, উদালক, সিন্ধুবার ও কোবিদার বৃক্ষ অজস্র পুষ্পসঞ্চয়ে সেই বনটি সমৃদ্ধ করিয়া রাথিয়াছে। স্কলার সুন্দর মণিখচিত সোপানপংক্তিতে সংবদ্ধ কৃত্রিম সরোবর বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, শ্রাবণ । তটাস্তশোভী ৰম্ভতরুর পুপপাতে ঈষৎ কম্পিত। এই রমণীয় উদ্ধানে সীতার অাবাসস্থান স্থির হইল। এই আরণ্যদ্বপ্তের পাৰে বিষন্নমলিনশ্ৰী সীতাদেবীর ষে মূৰ্ত্তি বাল্মীকি অণকিয়াছেন, তাহ একাত্ত মেীনতায়, উৎকট রাক্ষসীগণের সাহচর্য্যে, অটল সতীত্বগৰ্ব্বে এবং করুণ সৌন্দর্য্যে আমাদিগের চিত্ত একান্তরূপে আকৃষ্ট করে । তাহার সহচারিণীগণ কোন ছঃস্বপ্নদৃষ্ট যমালয়ের চরের দ্যায়,—তাহারা বিভীষিকার জীবন্ত মুৰ্ত্তি—কেহ একাক্ষী, কেহ লম্বিতোষ্ঠী, কেহ শঙ্কুকৰ্ণ, কেহ স্ফীতনাসা, কেহ বা “ললাটোচ্ছাসনাসিকা” –নাসার মুখ ললাটের দিকে—তাহদের পিঙ্গলচক্ষু অবিরত সীতাকে ভীতিপ্রদান করিতেছে । বিনতানায়ী রাক্ষসী বলিতেছে—“সীতে, তোমার স্বামিস্নেহের পর কাষ্ঠা দেখাইয়াছ, আর প্রয়োজন নাই, এখন ‘রাবণং ভজ ভৰ্ত্তারম্, সন্মত না হইলে “সৰ্ব্বাত্ত্বাং ভক্ষয়িষ্যামহে বয়ম্।।” লম্বিতস্তনী বিকট রাক্ষসী মুষ্টি দেখাইয়া সীতাকে তর্জন করিতেছে, আর বলিতেছে—“ইন্দ্রের সাধ্য নাই, এ পুরী হইতে তোমাকে রক্ষা করে,—স্ত্রীলোকের যৌবন অস্থায়ী—যতদিন যৌবন আছে, মদিরেক্ষণে, ততদিন স্বখভোগ করিয়া লও,—রারণের সঙ্গে স্বরম্য উদ্যান, উপবন ও পৰ্ব্বতে বিচরণ কর । অস্বীকৃত হইলে ‘উৎপাট্য বা তে হৃদয়ং ভক্ষয়িষ্যামি মৈথিলি ।” ত্রু রদর্শন চওেদিরী এ সময়ে বিপুল শূল সীতার সম্মুখে ঘুরাইয়া বলিল—“এই ত্রাসোৎকম্পপয়োধর হরিণশাবাক্ষীকে দেখিয়া আমার বড় লোভ হইতেছে—ইহার যকৃৎ, প্লীহা ও ক্রোড়দেশ