পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম সংখ্যা । ] নৌকাডুবি । వత ఇ সময় আসিয়া কহিল—‘দাদা, তোমাদের রমেশবাবুর স্ত্রী আমাদের ইস্কুলে পড়েন।’ “আমি বলিলাম, দূর পাগলি ! আমাদের রমেশবাবু ছাড়া কি আর তীিয় রমেশবাবু জগতে নাই !- শরৎ কহিল, “তা যেই হোন, তিনি তার স্ত্রীর উপরে ভারি অন্তায় করিতেছেন । ছুটিতে প্রায় সব মেয়েই বাড়ী যাইতেছে,–তিনি তার স্ত্রীকে বোর্ডিঙে রাখিবার বন্দোবস্ত করিয়াছেন।. সে বেচার কাদিয়াকাটিয়া অনর্থপাত করিতেছে।” অামি তখনি মনে মনে কহিলাম, ‘এ ত ভাল কথা নহে, শরৎ যেমন ভুল করিয়াছিল, এমন ভুল আরো ত কেহ কেহ করিতে পারে ।” অন্নদাবাবু হাসিয়া উঠিয়া কহিলেন— “অক্ষয়, তুমি কী পাগলের মত কথা কহিতেছ। কোন রমেশের স্ত্রী ইস্কুলে পড়িয়া কাদিতেছে বলিয়া আমাদের রমেশ নাম বদলাইবে নাকি ?” এমন সময়ে হঠাৎ বিবর্ণমুখে রমেশ ঘর হইতে উঠিয়া চলিয়া গেল । অক্ষয় বলিয়া উঠিল, “ওকি রমেশবাবু, আপনি রাগ করিয়া চলিয়া গেলেন নাকি ? দেখুন দেখি, আপনি কি মনে করেন আপনাকে আমি সন্দেহ করিতেছি ?”—বলিয়। রমেশের পশ্চাৎ পশ্চাৎ বাহির হইয়া গেল । অন্নদাবাবু কহিলেন—“একি কও ” হেমনলিনী কাদিয়া ফেলিল । অল্পদাবাবু ব্যস্ত হইয়া কহিলেন, “ওকি হেম, কাদিস কেন ?” সে উচ্ছসিত রোদনের মধ্যে রুদ্ধকণ্ঠে কহিল, “বাবা, অক্ষয়বাবুর ভারি অন্যায় ! কেন উনি আমাদের বাড়ীতে ভদ্রলোককে এমন করিয়া অপমান করেন ?” অল্পদাবাবু কহিলেন—“অক্ষয় ঠাট্টা করিয়া একটা কি বলিয়াছে, ইহাতে এত অস্থির হইবার কি দরকার ছিল ?” “এরকম ঠাট্টা অসহ ?”—বলিয়া দ্রুতপদে হেমনলিনী উপরে চলিয়া গেল । এইবার কলিকাতায় আসার পর রমেশ বিশেষ যত্বের সহিত কমলার স্বামীর সন্ধান করিতেছিল । বহুকষ্টে, ধোবাপুকুরটা কোন জায়গায়, তাহ বাহির করিয়া কমলার মাম তারিণীচরণকে এক পত্র লিখিয়াছিল । রমেশ আজ প্রাতঃকালে সেই পত্রের জবাব পাইয়াছে। তারিণীচরণ লিখিতেছেন— “দুর্ঘটনার পরে তাহার জামাতা স্ত্র মান নলিনাক্ষের কোন সংবাদই পাওয়া যায় নাই । রংপুরে তিনি ডাক্তণরি করিতেন-—সেখানে চিঠি লিখিয়া তারিণীচরণ জানিয়াছেন, সেখানেও কেহ আজ পর্য্যস্ত র্তাহার কোন খবর পায় নাই । র্তাহার জন্মস্থান কোথায়, তাহা তারিণীচরণের জানা নাই ।” কমলার স্বামী নলিনাক্ষ যে বর্ণচিয়৷ আছেন, এ অাশা আজ রমেশের মন হইতে একেবারে দুর হইল। কারণ বাচিয়া থাকিলে তিনি নিশ্চয়ই তারিণীচরণকে সংবাদ দিতেন এবং সেখানে তাহার স্ত্রীর সম্বন্ধে সংবাদ লইবার চেষ্টা করিতেন । *.* সকালে রমেশের হাতে আরো অনেকগুলা চিঠি আসিয়া পড়িল । বিবাহের সংবাদ পাইয় তাহার আলাপী পরিচিত অনেকে তাহাকে অভিনন্দনপত্র লিখিয়াছে । কেহ বা আহারের দাবী জানাইয়াছে, কেহ বা, এতদিন সমস্ত ব্যাপারটা সে গোপন রাখি