পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

فيebچ বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, ভাদ্র । য়াছে বলিয়া রমেশকে সকৌতুক তিরস্কার করিয়াছে । কিন্তু রমেশের ভারাক্রান্ত মনে এই চিঠিওলা আরো ভার বাড়াইতে লাগিল । যে ফাস তাহার গলায় জড়াইয়াছে, অল্পেতেই ভণহাতে টান পড়িতেছে এবং বেদনায় রমেশ চকিত হইয়া উঠিতেছে । এমন সময়ে অন্নদীবাবুর বাড়ী হইতে চাকর একখানি চিঠি লইয়া রমেশের হাতে দিল । হাতের অক্ষর দেখিয়া রমেশের বুকের ভিতরটা দুলিয়া উঠিল । হেমনলিনীর চিঠি । রমেশ মনে করিল, *অক্ষয়ের কথা শুনিয়া হেমনলিনীর মনে সন্দেহ জন্মিয়াছে এবং তাহাই দূর করিবার জন্য সে রমেশকে পত্র লিখিয়াছে।’ চিঠি খুলিয়া দেখিল, তাহাতে কেবল এই ক’টি কথা লেখা আছে— “অক্ষয়বাবু কাল আপনার উপর ভারি আন্তীয় করিয়াছেন । মনে করিয়াছিলাম, আজ সকালেই আপনি আসিবেন, কেন আসিলেন না ? অক্ষয়বাবুর কথা কেন আপনি এত করিয়া মনে লইতেছেন ? • আপনি ত জানেন, আমি তার কথা গ্রাহাই করি না । আপনি আজ সকাল-সকাল আসিবেন—অামি আজ সেলাই ফেলিয়া রাখিব ।” 線 এই ক’টি কথার মধ্যে হেমনলিনীর সাস্বনাস্থধাপূর্ণ কোমল হৃদয়ের ব্যথা অনুভব করিয়া রমেশের চোখে জল আসিল । রমেশ বুঝিল, কাল হইতেই হেমনলিনী রমেশের বেদন শাস্ত করিবার জন্ত তাহার সমস্ত অশ্রুসিক্ত ভালবাসা লইয়া ব্যগ্রহৃদয়ে প্রতীক্ষা করিয়া আছে। এমৃনি করিয়া রাত গিয়াছে, এমনি করিয়া সকালট কাটিয়াছে, অবশেষে আর থাকিতে না পারিয়া এই চিঠিখানি লিখিয়াছে। রমেশ কাল হইতে ভাবিতেছে, আর বিলম্ব না করিয়া এইবার হেমনলিনীকে সকল কথা খুলিয়া বলা আবশুক হইয়াছে। কিন্তু কল্যকার ব্যাপারের পর বলা কঠিন হইয়া উঠিয়াছে। এখন ঠিক শুনাইবে, যেন অপরাধ ধরা পড়িয়া জবাবদিহির চেষ্টা হুইতেছে । শুধু তাহাই নহে, অক্ষয়ের যে কতকটা জয় হইবে, সে-ও অসহ । সকলে যে বলিবে, তাই ত, অক্ষয়কে ত নিতান্ত দোষ দেওয়া যায় না—রমেশের পক্ষে সেটা বড় কঠিন । রমেশ ভাবিতে লাগিল, “কমলার স্বামী যে আর-কোন রমেশ, নিশ্চয়ই অক্ষয়ের মনে সেই ধারণাই আছে—নহিলে সে এতক্ষণে কেবল ইঙ্গিত করিয়া থামিয়া থাকিত না, পাড়াসুদ্ধ গোল করিয়া বেড়াইত । অতএব এই বেলা যাহা-হয়-একটা উপায় অবলম্বন করা দরকার ।” উপায় কি করা যায়, ভাবিতে লাগিল । ইতিমধ্যে অন্নদাবাবুর বাড়ীতে একটি পরিচিত ভৈরবীক্ষর হাৰ্ম্মোনিয়মে বাজিতে আরম্ভ করিল । হেমনলিনী জানে যে, এই ভৈরবী রমেশের প্রিয় রাগিণী । এই রাগিশীর পাথ। মেলিয়া দিয়া বিরহিণী আপনার হৃদয়টিকে ঘর হইতে বাহির করিয়া কোথায় কাহার কাছে কি সংবাদ লইতে একলা পাঠাইয়া দিল ? কোথায় তাহরে নীড়, কোথায় তাহার সার্থী, কাহার অভাবে সমস্ত বিশ্বের .