পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミ>b" প্রতিবাদ করিলেন না । যখন সীতা অগ্নিতে প্রাণবিসর্জন দিতে কৃতসঙ্কল্প হইয়া লক্ষ্মণকে চিত্তা প্রস্তুত করিতে আদেশ করিলেন—তখন লক্ষ্মণ রামের অভিপ্রণয় বুঝিয়। সজলচক্ষে চিতা প্রস্তুত করিলেন, কিন্তু কোন প্রতিবাদ করিলেন না । ভ্রাতৃস্নেহে তিনি স্বীয়-অস্তিত্ব-শূন্ত হইয়া গিয়াছিলেন। ভরতের, এমন কি সীতারও, মৃছ অথচ তেজোব্যঞ্জক ব্যক্তিত্ব তাঁহাদের সুগভীর ভালবাসার মধ্যেও আমরা উপলব্ধি করিতে পারি, কিন্তু রামের প্রতি লক্ষ্মণের স্নেহ সম্পূর্ণরূপে আত্মহারা । ভরত রামচন্দ্রের জন্ত যে সকল কষ্ট স্বীকার করিয়াছেন, তাহা আমাদের প্রাণে আঘাত দেয়, তাদৃশ ব্যক্তির পক্ষে ঐরুপ আত্মত্যাগ আমাদের নিকট অপুৰ্ব্বপদার্থ বলিয়া বোধ হয় ; ভরত স্বর্গের দেবতার দ্যায়, তাহার ক্রিয়াকলাপ ঠিক যেন পৃথিবীবাসীর নহে, উল্লাহ সৰ্ব্বদাই ভাবের এক উচ্চগ্রামে আমাদিগের মনোযোগ সবলে আকর্ষণ করিয়া রাখে । কিন্তু লক্ষ্মণের আত্মত্যাগ এত সহজভাবে হইয়া আসিয়াছে, উহা বায়ু ও জলের মত এত সহজপ্রাপ্য যে, অনেক সময় ভরতের আত্মত্যাগের পাশ্বে লক্ষ্মণের খনিত্রদ্ধারা মৃত্তিকাখনন প্রভৃতি সেবাবৃত্তির মধ্যে আমরা তাহার সুগভীর প্রেমের গুরুত্ব অনুভব করিতে ভুলিয়া যাই । অত্যন্ত সহজে প্রাপ্ত বলিয়া যেন উহ উপেক্ষা পাইয়া থাকে। তথাপি ইহা স্থির যে, লক্ষ্মণ ভিন্ন রামকে আমরা একেবারেই কল্পনা করিতে পারি না । তিনি রামের প্রাণ ও দেহের সহিত একীভূত হইয়া গিয়াছিলেন। দীর্ঘ রজনীর পরে বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, তাত্র । অকস্মাৎ তরুণ অরুণালোকে যেরূপ জগৎ উদ্ভাসিত হইয়া উঠে,—ধরাবাসিগণ সেই স্বর্গভ্ৰষ্ট আলোকচ্ছটায় পুলকে উন্মত্ত হইয়া উঠে, ভরতের ভ্রাতৃপ্রীতি কতকটা সেইরূপ ; কৈকয়ীর ষড়যন্ত্র ও রামবনবাসাদির পরে ভরতের অচিস্তিতপূৰ্ব্ব প্রীতি বিচ্ছুরিত হইয়া আমাদিগকে সহসা সেইরূপ চমৎকৃত করিয়া তুলে, আমরা ঠিক যেন ততটা প্রত্যাশ করি না। কিন্তু লক্ষ্মণের প্রেম আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় বায়ুপ্রবাহ, এই বিশাল অপরিসীম স্নেহতরঙ্গ আমাদিগকে সঞ্জীবিত রাখিয়াছে, অথচ প্রতিক্ষণে আমরা ইহা ভুলিয়া যাইতেছি । লক্ষ্মণ রামকে বলিয়াছিলেন— “জল হইতে উদ্ধৃত মীনের স্তায় আপনাকে ছাড়িয়া আমি এক মুহূৰ্ত্তও বাচিতে পারিব না। এই অসীম মেহের তিনি কোন মূল্য চান নাই, ইহ। আপনিই আপনার পরম পরিতোষ, ইহা আপনাতেই আপনি সম্পূর্ণ, ইহা প্রত্যাশী নহে, ইহা দাতা । কখন বহুকৃচ্ছসাধনে অবসর লক্ষ্মণকে রাম একটি স্নেহের কথা বলিয়াছেন, কিংবা একবার আলিঙ্গন দিয়াছেন, লক্ষ্মণের নেত্রপ্রান্তে একটি পুলকাশ্ৰ ফুটিয়া উঠিয়াছে, কিন্তু তিনি রামের কাছে তাহ প্রত্যাশা করিয়া অে করেন নাই । so A লক্ষণের চরিত্রের একদিক মাত্র প্রদর্শিত হইল, কিন্তু তাহার চরিত্রের আর একটা দিক আছে। পুৰ্ব্ববৰ্ত্তী বৃত্তাস্ত পাঠ করিয়া কেহ কেহ মনে করিতে পারেন, লক্ষ্মণ বিশেষ তীক্ষুধীসম্পন্ন ছিলেন না : তিনি অঙ্গগত ভ্রাতা ছিলেন সত্য, কিন্তু হয় ত রাম ভিন্ন তাহার পক্ষে নিজেকে হারাইয় ফেলিবার