পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চমন্ত্র লক্ষণ । ২১৯ আশঙ্কা ছিল চিরদিন রামের বুদ্ধিদ্বারা না শ্ৰদ্ধ ব্যক্তিরাই সৰ্ব্বদা নির্যাতন প্রাপ্ত পরিচালিত হইয়া আসিয়াছেন, সহসা একাকী হন—“মৃদুৰ্হি পরিভূয়তে” । ধৰ্ম্ম ও সত্যের সংসারের পথ পর্য্যটন করা তাহার পক্ষে দুরূহ হইত, এইজন্তই তিনি রামগতপ্রাণ হইয়া বনগমন করিয়াছিলেন । এ কথা ত মানিবই না, বরং ভাল করিয়া আলোচনা করিলে দেখা যাইবে যে, ক্ষণই রামায়ণে পুরুষকারের একমাত্র জীবন্ত চিত্র । তাহার বুদ্ধির সঙ্গে রামের বুদ্ধির, যে সৰ্ব্বদাই ঐক্য হইয়াছে, তাহ লহে, পরস্তু ষে স্থানে ঐক্য ন হইত, সে স্থানে তিনি স্বীয় বুদ্ধিকে রামের প্রতিভার নিকট হতবল হইতে দেন নাই । বনবাসাজা তাহার নিকট অত্যন্ত অন্ত্যায় বলিয়া বোধ হইয়াছিল এবং রামের পিতৃআদেশ-পালন তিনি ধৰ্ম্মবিরুদ্ধ বলিয়। মনে করিয়াছিলেন । রাম লক্ষ্মণকে বলিয়াছিলেন, “তুমি কি এই কাৰ্য্য দৈবশক্তির ফল বলিয়া স্বীকার করিবে না ? অরন্ধ কাৰ্য্য নষ্ট করিয়৷ যদি কোন অসঙ্কল্পিত পথে কাৰ্য্যপ্রবাহ প্রবৰ্ত্তিত হয়, তবে তাহা দৈবের কৰ্ম্ম বলিয়। মনে করিবে । দেখ, কৈকয়ী চিরদিনই আমাকে ভরতের ন্যায় ভাল বাসিয়াছেন, তাহার দ্যায় গুণশালিনী মহৎকুলজাত। রাজপুত্ৰী আমাকে পীড়াদান করিবার জন্ম ইতর ব্যক্তির স্থায় এইরূপ প্রতিশ্রুতিতে রাজাকে কেনই বা আবদ্ধ করিবেন ? ইহা স্পষ্ট দৈবের কৰ্ম্ম, ইহাতে মামুষের কোন হাত নাই ।” লক্ষ্মণ উত্তরে বলিলেন, *অতি দীন ও অশক্ত ব্যক্তিরাই দৈবের দোহাই দিয়া থাকে, পুরুষকার দ্বারা যাহার দৈবের প্রতিকুলে দণ্ডায়মান হন, তাহারা আপনার স্থায় অবগল্প হইয় পড়েন ভাণ করিয়া পিতা যে ঘোরতর অদ্যার করিতেছেন, তাহ কি আপনি বুঝিতে পারিতেছেন না ? আপনি দেবতুল্য, ঋজু ও দাস্ত এবং রিপুরাও আপনার প্রশংসা করিয়া থাকে। এমন পুত্রকে তিনি কি অপরাধে বনে তাড়াইয়া দিতেছেন ? আপনি যে ধৰ্ম্ম পালন করিতে ব্যাকুল, ঐ ধৰ্ম্ম আমার নিকট নিতান্ত অধৰ্ম্ম বলিয়া মনে হয়। স্ত্রীর বশীভুত হইয়া নিরপরাধ পুত্রকে বনবাস দেওয়া— ইহাই কি সত্য, ইহাই কি ধৰ্ম্ম-? আমি আজই বাহুবলে আপনার অভিষেক সম্পাদন করিব । দেখি, কাহার সাধ্য আমার শক্তি প্রতিরোধ করে ? অাজ পুরুষকারের অঙ্কুশ দিয়া উদাম দৈবহস্তীকে আমি স্ববশে অtনিব । যাহা আপনি দৈবসংজ্ঞায় অভিহিত করিতেছেন, তাহ। আপনি অনায়াসে প্রত্যাখ্যান করিতে পারেন, তবে কি নিমিত্ত তুচ্ছ অকিঞ্চিৎকর দৈবের প্রশংসা করিতেছেন ?” সাশ্রনেত্ৰ লক্ষ্মণ এই সকল উক্তির পর “হনিষ্যে পিতরং বৃদ্ধং কৈকয্যাসক্তমানসম্” বলিয়া ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিলেন । রাম তখন হস্তধারণ করিয়া তাহার ক্রোধপ্রশমনের চেষ্টা পাইয়াছিলেন । এই গৰ্হিত আদেশপালন যে ধৰ্ম্মসঙ্গত, ইহা তিনি কোনক্রমেই লক্ষ্মণকে বুঝাইতে পারেন নাই। লঙ্কাকাণ্ডে মায়াসীতার মস্তক দর্শনে শোকাকুল রামচন্দ্রকে লক্ষ্মণ বলিয়াছিলেন—“হর্ষ, কাম, দৰ্প, ক্রেযে, শাস্তি ও ইন্দ্ৰিয়নিগ্ৰহ, এই সমস্তই অর্থের আয়ত্ত, অামার এই মত, ইহাই ধৰ্ম্ম ; কিন্তু আপনি সেই অর্থমূলক ধৰ্ম্ম পরি