পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Rరి8 বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, ভাত্র । তাহারা সকলেই স্বীকার করিবেন,—আধুনিক বঙ্গবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হইয়া তাহাতে ইতিহাস অধ্যাপিত হইবার পূৰ্ব্বে এই কাহিনী বঙ্গসাহিত্যে প্রবেশলাভ করে নাই। প্রথমে বিদ্যালয়ে, পরে শিক্ষিতসমাজে এবং ধীরে ধীরে জনসাধারণের মধ্যে এই কাহিনী ক্রমশ বিস্তৃতিলাভ করিয়াছে । যাহারা প্রাচীন গ্ৰীকৃ ও রোমক সাম্রাজ্যের ইতিহাস অধ্যয়ন করিয়া, বাঙালীর ইতিহাস না জানিয়া, বাঙালীকে ভীরু ও কাপুরুষ বলিয়া গ্ৰন্থরচনা করিতে ব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছিলেন, তাহার এই কাহিনীর উল্লেখ করিয়া স্বমত-সমর্থনের স্বযোগ প্রাপ্ত হন । যাহারা তাহাতে মৰ্ম্মাহত, তাহারা নবদ্বীপাধিপতির নামোল্লেখ করিয়া নানা কটুকাটব্যপ্রয়োগে মৰ্ম্মদাহ শান্ত করিবার চেষ্টা করেন । যাহারা এরূপ অসম্ভব কথা মানিয়া লইতে অসম্মত, অথচ প্রমাণ প্রয়োগে প্রতিবাদ করিবার জন্ত চেষ্টাশূন্ত, তাহারা একজন হিন্দুনরপতির এরূপ দুরপনেয় কলঙ্ক কিয়ৎপরিমাণে অপনোদন করিবার আশায় লিখিয়া,যান,—বৃদ্ধ নরপতির বিশেষ অপরাধ ছিল না ; কৃতঘ্ন মন্ত্রিদলের বিশ্বাসঘাতকতায় এবং ব্রাহ্মণগণের উপদেশে এরূপ ঘটনা সংঘটিত হইয়াছিল। এইরূপে বঙ্গসাহিত্যে বক্তিয়ার খিলিজির বঙ্গবিজয়ব্যাপার নানাভাৰে কীৰ্ত্তিত হইয়া বাঙালীর পরাজয়কলঙ্ক দুরপনেয় করিয়া তুলিয়াছে। যাহারা বঙ্গসাহিত্যের অধিনায়ক, সেই সকল খ্যাতনাম লেখক এইরূপে বাঙলার শেষ স্বাধীন হিন্দুনরপতির কলঙ্কঘোষণা করায়, তাহ এক্ষণে প্রবাদবাক্যের দ্যায় সৰ্ব্বত্র স্বীকৃত হইয়া পড়িয়াছে। এ কলঙ্ক আদেী সত্য কি না এবং সত্য হইলে ইহার কতটুকু সত্য, এখন আর সে কথার বিচার করিবার জন্ত বিশেষ আগ্রহ দেখিতে পাওয়া যায় না । ইতিহাস যাহার ললাটে ভীরু ও কাপুরুষ বলিয়। দুরপনেয় কলঙ্কচিহ্র অঙ্কিত করিয়া দিয়াছে, সে সভ্যজগতের নিকট লজ্জায় মুখ তুলিয়া দাড়াইবার সাহস হারাইয়া, মুখ ফুটিয়া প্রতিবাদ করিতে না পারায়, এ বিষয়ের প্রকৃত তথ্য নির্ণীত হইবার অসুবিধা হইয়াছে । এই কাহিনী যখন বঙ্গসাহিত্যে প্রথমে প্রবেশলাভ করে, তখন ঐতিহাসিক তথ্যণমুসন্ধানের আগ্রহ সমুচিতভাবে বিকশিত হয় নাই। এখনও অনেকেয় নিকট হস্তলিখিত বা মুদ্রিত পুস্তকের কথা অকাট্য প্রমাণ বলিয়া পরিচিত। কোন পুরাতন পুস্তকে কিছু লিখিত থাকিলেই হইল, তাহার সত্যমিথ্যার আলোচনা অনাবশু্যক, মিথ্যা হইলে পুস্তকে লিখিত বা মুদ্রিত হইবে কেন,—অনেকে এখন ও এরূপ তর্ক উত্থাপন করিয়া থাকেন । সুতরাং এই কাহিনী বঙ্গসাহিত্যে প্রবেশ করিবার সময়ে ইহার সত্যমিথ্যার বিচার হয় নাই বলিয়া বিস্মিত হইবার কারণ নাই । বিচারে বিলম্ব ঘটিয়া তথ্যনির্ণয়ের অক্ষবিধা হইয়াছে । কিন্তু বিলম্ব ঘটিয়াছে বলিয়া তথ্যনির্ণয়ের আশা একেবারে তিরোহিত হয় নাই । বিচারে প্রবৃত্ত হইলে, যে সকল প্রশ্নের মীমাংসা করা প্রয়োজন হইবে, তাহী এই ৪— (১) এই কাহিনীর মূল কোথায় ? ( ২ ) বৃদ্ধ পলায়নপর নবদ্বীপাধিপতির নাম