পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

షా83 বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, ভাদ্র । ঋষি তপোধন । হৃৎপদ্মে সে ঐক্য সিংহাসনে-বিরাজমান ক্ষত্রিয় মহারাজ। নাভিপদ্মে সে ঐক্য আহরণ-ব্যাহরণ (আমদানি-রপ্তানি) প্রভূতি বাণিজ্যকার্য্যের তত্বাবধায়ক বৈশু মহাজন । সে ঐক্য—রাজা, মন্ত্রী, কৰ্ম্মচারী ; রথী, সারথি, পদাতিক; যোগী, ভোগী, জ্ঞানী, কৰ্ম্মী ; সমস্তই একাধারে। সে ঐক্যের চক্ষু সকল স্থানেই—হস্ত সকল কাজেই। পদের কনিষ্ঠ অঙ্গুলিতে যদি আঘাত লাগে, তবে সে ঐক্যের তৎক্ষণাৎ তাহ গোচরে আসিবে ; হস্তে যদি আঘাত লাগে, তাহা হইলেও তাই ; বৃক্ষে যদি আঘাত লাগে, তাহ হইলেও তাই । তেমনি আবার, হস্ত হইতে যদি অক্ষররাজি বাহির হয়, তবে ইহা স্বনিশ্চিত যে, তাহ শরীরের সাৰ্ব্বাত্মিক ঐক্য হইতেই বাহির হইতেছে ; পদ হইতে যদি ভ্রমণকাৰ্য্য বাহির হয়, তাহা হইলেও তাই ; কণ্ঠ হইতে যদি গীতধ্বনি বাহির হয়, তাহা হইলেও তাই । এই যে এক সাৰ্ব্বাত্মিক ঐক্য, যাহা শরীরের মাথা হইতে পা পৰ্য্যস্ত সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গের প্রত্যেকের অভাব সমস্তকে দিয়া এবং সমস্তের অভাব প্রত্যেককে দিয়া যুগপৎ পুরণ করাইয়া লইতেছে—এ ঐক্য কি কেবল ক্ষুদ্র ব্ৰহ্মাণ্ডেই আছে, বৃহৎ ব্রহ্মাণ্ডে নাই ? বৃহৎ ব্ৰহ্মাওে যদি নাই—যুদ্র ব্রহ্মাণ্ডে প্রবেশ করিল তবে কোথা দিয়া ? যাহাকে বলা যাইতেছে ক্ষুদ্র ব্ৰহ্মাও, তাহ আর তো কিছু না—কেবল বৃহৎ ব্ৰহ্মাণ্ডের একস্থানের একটা শাখা । শাখাতে রসের সঞ্চার হয় কোথা হইতে ? অবশু মূল হইতে । তুমি হয় তো বলিবে যে, ক্ষুদ্র ব্ৰহ্মাণ্ডের মস্তক হইতে পদপ্রান্ত বড়-জোর সাত-হাত দূরে অবস্থিতি করে ; কিন্তু বৃহৎ ব্ৰহ্মাণ্ডের নভস্তল হইতে রসাতল কেপট-কোটি-যোজন দূরে অবস্থিতি করে। সাত-হাত স্থানের অবকাশ-রন্ধ-নিকর অর্থাৎ ঝাঝরি ঐক্যের প্রলেপদ্বারা ভরাটু করিবার পক্ষে বিশেষ কোনো বাধা দৃষ্ট হয় না, কিন্তু কোটি যোজনের ব্যবধান পুরণ করা সোজা কথা নহে। কোটি যোজনের হুই পারের দুই বস্তকে অাকড়িয়া পাইতে হইলে—তাহা যিনি করিবেন, তাহার দৃষ্টি স্বর্গমর্ত্যপাতাল ভেদ করিতে পারিবার মতো তীক্ষ হওয়া চাই ; তাহার বাহুদ্বয় স্বর্গমর্ত্যপাতাল পরিবেষ্টন করিতে পারিবার মতো দীর্ঘ হওয়া চাই । ইহার উত্তর এই যে, কিছুই চাই না—কেবল চক্ষু-দুটা উন্মীলন করা চাই । সবিতা দেব কি শতকোটিযোজন দূর হইতে পৃথিবীকে অবলোকন করিতেছেন না ? তিকোটিযোজন দূরে থাকিয়াও পৃথিবীর হস্তধারণ করিয়া রাশিচক্রে দৌড়াদৌড়ি করাইতেছেন না ? পিপীলিকার মস্তক এবং পদতলের মধ্যে যেরূপ অল্প ব্যবধান, তাহাতে পিপীলিকা বলিলেও বলিতে পারে যে, হস্তীর পদাঙ্গুলি হস্তীর ললাটশিখর হইতে কোটিযোজন দুরে অবস্থিতি করে, সুতরাং ছয়ের মধ্যে কোনোপ্রকার ঐক্যের বন্ধন স্থান পাইতে পারে না । তবে কিনা—পিপীলিকার যুক্তি পিপীলিকাকেই শোভা পায়—বিজ্ঞানবিৎ পণ্ডিতকে শোভা পায় না। কেন না, বিজ্ঞানবিৎ পণ্ডিতের নিকটে একথা গোপন থাকিতে পারে না যে, হস্তীর মস্তক এবং পদের মধ্যে বিশাল ব্যবধান সত্ত্বেও ছয়ের মধ্যে ঐক্যের