পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ সংখ্যা । ] ধৰ্ম্মবোধের দৃষ্টান্ত। ミQ● করিয়া নিশ্চিন্ত হইয়া বসিতে অনিচ্ছুক হয়, তবে তাহাদিগকে দোষ দেওয়া যায় না । কিন্তু অন্তে তাহার নিষেধ মানিবে, সে কাহারে নিষেধ মানিবে না, য়ুরোপের এই ধৰ্ম্ম । কোন প্রয়োজন থাকু বা না থাকৃ, শুদ্ধমাত্র বিপদ লভঘন করিয়া বাহাদুরি করিলে যুরোপে এত বাহবা মিলে যে, অনেকের পক্ষে সে একটা প্রলোভন । যুরোপের বাহাদুর লোকরা দেশে-বিদেশে বিপদ সন্ধান করিয়া ফেরে। যে কোন উপায়ে হোক, লাসায় যে যুরোপীয় পদার্পণ করিবে, সমাজে তাহার থ্যাতি-প্রতিপত্তির সীমা থাকিবে না । অতএব তুষারগিরি ও তিববতীর নিষেধকে ফাকি দিয়া লাসায় যাইতে হইবে । ল্যাগুর-সাহেব কুমায়ুনে আলমোড়া হইতে যাত্রা আরম্ভ করিলেন । সঙ্গে এক হিন্দু চাকর আসিয়া জুটিল, তাহার নাম চন্দন সিং । কুমায়ূনের প্রাস্তে তিব্বতের সীমানায় বৃটিশরাজ্যে শোক বলিয়া এক পাহাড়ি জাত আছে । তিববতীদের ভয়ে ও উপদ্রবে তাহারা কম্পমান। বৃটিশরাজ তিববতীদের পীড়ন হইতে তাহাদিগকে রক্ষা করিতে পারেন না বলিয়। ল্যাগুরু-সাহেব বারংবার আক্ষেপপ্রকাশ করিয়াছেন । সেই শোকাদের মধ্য হইতে সাহেবকে কুলিমজুর সংগ্ৰহ করিয়া লইতে হইবে । বহুকষ্টে ত্রিশজন কুলি জুটিল । ইহার পর হইতে যাত্রাকালে সাহেবের এক প্রধান চিত্ত ও চেষ্টা—কিসে কুলির না পালায় । তুাহাদের পালাইবার যথেষ্ট কারণ ছিল । ল্যাওর তাছার ভ্রমণবৃত্তাত্তের পচিশপরিচ্ছেদে লিখিয়াছেন —“এই বাহকদল যখন নিঃশব্দ গম্ভীরভাবে বোঝা পিঠে লইয়া করুণাজনক শ্বাসকষ্টের সহিত ইনপাইতে ইনপাইতে উচ্চ হইতে উচ্চে আরোহণ করিতেছিল, তখন এই ভয় মনে হইতেছিল, ইহাদের মধ্যে কয়জনই বা কোনকালে ফিরিয়া যাইতে পরিবে !” আমাদের জিজ্ঞাস্ত এই যে, এ শঙ্কা যখন তোমার মনে আছে, তখন এই অনিচ্ছুক হতভাগ্যদিগকে মৃত্যুমুখে তাড়না করিয়া লইয়া যাওয়াকে কি নাম দেওয়া যাইতে পারে ? তুমি পাইবে গৌরব এবং তাহার সঙ্গে অর্থলাভের সম্ভাবনাও যথেষ্ট আছে— তুমি তাহার প্রত্যাশায় প্রাণপণ করিতে পার, কিন্তু ইহাদের সম্মুখে কোন প্রলোভন আছে ? বিজ্ঞানের উন্নতিকল্পে জীবচ্ছেদ ( vivisection ) লইয়া যুরোপে অনেক তর্কবিতর্ক হইয়া থাকে ৷ সজীব জস্তুদিগকে লইয়া পরীক্ষা করিবার সময়ে যন্ত্রণানাশক ঔষধ প্রয়োগ করিবার ঔচিত্য ও আলোচিত হয় । কিন্তু বাহাদুরি করিয়া বাহবা লইবার উদ্দেশে দীর্ঘকাল ধরিয়া অনিচ্ছুক মানুষদের উপরে যে অসহ্য পীড়ন চলে, ভ্রমণবৃত্তান্তের গ্রন্থে তাহার বিবরণ প্রকাশ হয়, সমালোচকেরা করতালি দেন, সংস্করণের পর সংস্করণ 斡 নিঃশেষিত হইয়া যায়, হাজার হাজার পাঠক ও পাঠিক এই সকল বর্ণনা বিস্ময়ের সহিত পাঠ ও আনন্দের সহিত আলোচনা করেন । দুৰ্গম তুষারপথে নিরীহ শোক-বাহকদল দিবারাত্র যে অসহ কষ্টভোগ করিয়াছে— তাহার পরিণাম কি ? ল্যাওর-সাহেব না হয় লাসায় পৌছিলেন, তাহাতে জগতের