পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭২ मदछन्नध्ॉन ॥ ৩য় বর্ষ, অশ্বিন। সহসা ভূতলে পড়িয়া গেলেন ;–পড়িয়া গেলেন, কিন্তু দশরথের মত প্রাণত্যাগ করিলেন না । দশরথ স্বকৃত পাপের ফলে প্রাণত্যাগ করিয়াছিলেন, রামকে বনে পাঠাইয়া তাহার গভীর শোক হইয়াছিল, কিন্তু বিনা অপরাধে এই কাৰ্য্য করার জন্ত র্তাহার তদপেক্ষা গভীরতর মনস্তাপ ঘটিয়াছিল । তিনি শোকে মরিলেন, কি লজ্জায় মরিলেন, চিরস্থখাভ্যস্ত কুমারকে জটা ও চীরবাস পরিহিত দেখিয়া সেই কষ্টই তাহার অসহনীয় হইল কিংবা যিনি কোন অপরাধে অপরাধী নহেন, তাহাকে অপরাধিনীর বাক্যে এই নিৰ্ব্বাসনদণ্ড দেওয়ার লজ্জা তাহাকে অভিভূত করিল, নিশ্চয় করিয়া বলা সুকঠিন । আজন্মতপস্বিনী কৌশল্যার পুত্রবিরহে গভীর শোক হইল, কিন্তু দশরথের মত অমৃতপ্ত হইবার তাহার কোন কারণ ছিল না । বিশেষত দশরথ চিরস্থখাভ্যস্ত, গার্হস্থ্যজীবনে স্নেহের অভিশাপ তিনি এই প্রথমবার পাইলেন, বুদ্ধবয়সে তাহ সহ করিবার শক্তি হইল না । কৌশল্য চিরছঃখিনী, চিরমেহবঞ্চিত, দেবতায় বিশ্বাসপরায়ণ । এই দুঃখ পুৰ্ব্ববৰ্ত্তী দুঃখরাশির প্রকারভেদ মাত্র, তিনি স্নেহজনিত কষ্ট অনেক সহিয়াছিলেন, তাহা সহিতে সহিতে ধৰ্ম্মশীলার অপূৰ্ব্ব সহিষ্ণুত জন্মিয়াছিল ; তিনি এই মহাদুঃখের সময় যে অপুৰ্ব্ব সহিষ্ণুতা দেখাইয়াছেন, তাহা আমাদিগকে চমৎকৃত করিয়া তুলে । • বনগমনসম্বন্ধে তিনি রামচন্দ্রকে বলিলেন, “তুমি পিতৃসত্যরক্ষণার্থ বনে যাওয়া স্থির করিয়াছ, কিন্তু মাতার নিকট কি তোমার কোন ঋণ নাই ! আমি অকুজ্ঞা করিতেছি, তুমি এখানে থাকিয়া এই বৃদ্ধকালে আমার পরিচর্য্য কর, তাহাতে তুমি ধৰ্ম্মে পতিত হইবে না । পিতৃ-আজ্ঞা পালন করিতে যাইয়া মাতৃ-আজ্ঞা লঙ্ঘন করা ধৰ্ম্মসঙ্গত হইবে না ।” ত্রীরামচন্দ্র বলিলেন, “আমি পুৰ্ব্বেই প্রতিশ্রুত হইয়াছি, বিশেষ পিতা তোমার এবং আমার উভয়েরই প্রত্যক্ষ দেৰতা, পিতৃ-আদেশে ঋষি কণ্ডু গোহত্যা করিয়াছিলেন, জামদগ্ন্য স্বীয় মাতা রেণুকার শিরশ্ছেদ করিয়াছিলেন, আমাদের পুর্বপুরুষ সাগরের পুত্ৰগণ পিতৃ-আদেশে দুরূহ ব্ৰত অবলম্বন করিয়া অপুর্বরূপে প্রাণত্যাগ করিয়াছিলেন, পিতৃ-আদেশ আমি লঙ্ঘন করিতে পারিব না । তিনি কাম কিংবা মোহ বশত যদি এই প্রতিশ্রুতি প্রদান করিয়া থাকেন, তাহা আমার বিচাৰ্য্য নহে, —তাহার প্রতিশ্রুতিপালন আমার অবশ্যকর্তব্য ।” কৌশল্য বলিলেন, “দেখ, বনের গাভী গুলি ও তাহাদের বংসের অমুসরণ করিয়া থাকে, তোমাকে ছাড়িয়া আমি কিরূপে বাচিব ? তুমি আমাকে সঙ্গে লইয়া চল, তোমার মুখ দেখিয়া তৃণ খাইয়া জীবনধারণ করা ও আমার পক্ষে শ্ৰেয় ।” রাম বলিলেন, “পিতা তোমারও প্রত্যক্ষদেবতা, তাহার পরিচর্য্যাই তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ব্রত, তুমি সংযতাহারী হইয়া ধৰ্ম্মণক্ষষ্ঠানে এই চতুর্দশবৎসর অতিবাহিত কর, এই সময়অস্তে শাস্ত্র আমি ফিরিয়া আসিয়া তোমার ক্রীচরণবন্দনা করিব।” লক্ষ্মণ ঘোর বান্বিতও। উত্থাপিত করির রামচন্দ্রকে এই অন্যায়-আদেশ-প্রতিপালন হইতে প্রতিনিবৃত্ত