পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ সংখ্যা । ] কৌশল্যা । অগ্নিতে প্রাণ বিসর্জন দিব ।’ ইহার পরে ভরত আলিয়া উপস্থিত হইলেন । তিনি গুর্খটনার কোন সংবাদ জানিতেন না ; কৈকয়ীর মুখে সমস্ত সংবাদ অবগত হইয় তাহাকে শোকীর্তকণ্ঠে ভৎসনা করিয়া বিলাপ করিতেছিলেন, অপর প্রকোষ্ঠ হইতে কৌশল্য তাহার কণ্ঠস্বর শুনিয়া সুমিত্রার দ্বারা তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইলেন । ভরত কৌশল্যার নিকট উপস্থিত হইলে তিনি বলিলেন, “তোমার মতি। রাজ্য কামনায় আমার পুত্রকে চীর ও বহুল পরাইয়া বনে পাঠাইয়া দিয়াছেন, রাজ। স্বর্গগত হইয়াছেন, আমি এথানে কোনরূপেই থাকিতে পারিতেছি না, তুমি ধনবাদ্যশালিণী অযোধ্যাপুরী অধিকার কর, আমাকে বনে রামের নিকট পঠাইয়া দা ও * ভরত নি তা স্তু দুঃখিত হইয়া বfললেন, “মাৰ্য্যে, আপনি কেন না জানিয়া আমার প্রতি এরূপ বাক্য প্রয়োগ করিতেছেন,— রামের আমি চির-অসুরাগী, মামাকে সন্দেহ করিবেন না ।” এই বলিয়া উদ্বিগ্নচিত্তে ভরত নানা প্রকার শপথ করিতে লাগিলেন । রামের প্রতি যদি তাছার বিদ্বেষবুদ্ধি থাকে, তবে মহাপাতকীদের সঙ্গে যেন আন স্তু নরকে তাহার স্থান হয়, ইহাই বিবিধ প্রকারে বিলাপ করিয়া বলিতে লাগিলেন ; বলিতে বলিতে অশ্রুধারায় অভিষিক্ত হইয়া পরিশ্রান্ত ভরত শোকোচ্ছ,াসে মৌনী হইয় রছিলেন । কৌশল্যা বলিলেন—“বংস, তুমি শপথ করিয়া কেন আমাকে মৰ্ম্মবেদন। প্রদান করিতেছ ? ভাগ্যক্রমে তোমার স্বভাব ধৰ্ম্মভ্রষ্ট হয় নাই, আমার দুঃখবেগ এখন আরও প্রবল হইয়া উঠিল।” এই বলিয়া কৌশল্য ভ্রাতৃবংসল ভরতকে সস্নেহে ক্রেগড়ে লইয়া উচ্চৈঃস্বরে কাদিতে লাগিলেন । ভরত অযোধ্যার সমস্ত পৌরজনে পরিবৃত হইয়া রামকে আনিতে গেলেন ; শোককশিতা কৌশল্য সঙ্গে গিয়াছিলেন। শৃঙ্গবেরপুরীতে ভরত রামের তৃণশয্যা দেখিয়া শোকে অজ্ঞান হইয়া পড়িয়াছিলেন, তাহার মুখ শুকাইয়। গিয়াছিল, তিনি অনেকক্ষণ কথা কহিতে পারেন নাই । ভরত ভূলুষ্ঠিত হইয়া অঞ-- বিসর্জন করিতেছিলেন,—কেহ কিছু জিজ্ঞাসা করিলে উত্তর করিতে পারিতেছিলেন না,— কৌশল্য। ভরতকে তদবস্থ দেখিয়া দীন ও আৰ্ত্ত স্বরে ও স্নিগ্ধসম্ভাষণে তাহাকে বলি ـسـR تامة “পুত্র ব্যাধির্ণ তে কচ্চিচ্ছরীরং প্রতিবাধতে । ত্বং দৃষ্ট পুত্র জাবামি রামে সভ্রাতুকে গতে ।" ‘পুত্র, তোমার শরীরে ত কোন ব্যাধি উপস্থিত হয় সাই । রাম ভ্রাতার সহিত বনবাসী হইয়াছেন, এখন তোমার মুখখানি দেখিয়াই অামি জীবনধারণ করিতেছি ।” প্রকৃতপক্ষে ও রামের বনগমনের পরে ভরত কৌশল্যারই যেন গর্ভজাত পুত্রের স্থানীয় হইয়াছিলেন—কৈকয়ী তাহার বিমাতার স্তার হইয়া পড়িয়াছিলেন । চিত্ৰকুটপৰ্ব্বতে রামের সঙ্গে মিলন সভাটিত হইল । কৌশল্য সীতার মুখের উজ্জ্বল ঐ আতপক্লিই দেখিয়া কঁাদিতে লাগিলেন। অশ্রীপুর্ণাক্ষী সীতা শ্বশ্রীমাতাকে প্রণাম করিয়া নীরকেম্প একপাশ্বে দাড়াইয়া ছিলেন, কৌশল্য বলিলেন—“যিনি মিথিলাধিপতির কন্যা, মহারাজ দশরথের পুত্রবধু এবং রামচন্ত্রের স্ত্রী, তিনি বিজনবনে কেন এত দুঃখ পাইতেছেন ?