পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম সংখ্যা । ] সঙ্গে তেমন একস্মি হইয়া যাইতে পারে নাই—আজি সে তাহার সাজসজ্জাকে অনাস্বাসে বহন করিয়া তাঁহাকে অতিক্রম করিয়া সহজে প্রস্ফুটিত হইয়া উঠিয়াছে । সমস্ত আচ্ছাদনের ভিতর দিয়া কমলা যেন নিজেকে ব্যক্ত করিয়া তুলিতেছে । এখন তাঙ্গর গতিবিধি-ভাবভঙ্গীতে কোন প্রকার জড়ত। নাই । আজি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া যখন সে ঋজুদেহে ঈষৎ বঙ্কিম-মুখে খোলা জানালার সম্মুখে দাড়াইল, তাহার মুথের উপরে শরৎ-মধ্যাহ্রের আলো আসিয়া পড়িল, তাঙ্গার মাথায় কাপড় নাই, অগ্রভাগে লালফিতার গ্রস্থিবাধা বেণীটি পিঠের উপরে পড়িয়াছে, ফিকে হলদে রঙের মেরিনোর শাড়ী তাহার ফুটনোন্মুখ শরীরকে শাটিয়া বেষ্টন করিয়াছে - তখন রমেশ কিছুক্ষণ তাঙ্গার দিকে চাহিয়া চুপ করিয়া রহিল । কমলার সৌন্দর্যা এই কয়মাসে রমেশের মনে আগবছায়ার মত হইয়া আসিয়াছিল, আজ সেই সৌন্দর্য্য নবতর বিকাশ লাভ করিয়া হঠাৎ তাহণকে চমক লাগাইয়া দিল । সে যেন ইহার জন্ত প্রস্তুত ছিল না । রমেশ কছিল, “কমলা, বোস ।” কমলা একটা চৌকিতে বসিল । রমেশ কহিল, “ইস্কুলে তোমার পড়াশুনা কেমন চলিতেছে ?” কমলা অত্যন্ত সংক্ষেপে কহিল—“বেশ ।” রমেশ ভাবিতে লাগিল, “এইবার কি বলা যাইবে । হঠাৎ একটা কথা মনে পড়িয়া গেল—কহিল, “বোধ হয় অনেকক্ষণ থাও নাই’। তোমার খাবার তৈরি আছে। এইখানেই আনিতে বলি ?” ८नौकीड्रवि \లిeసి কমলা কহিল, “খাইব না, আমি খাইয়া আসিয়াছি।” রমেশ কহিল—“এক্টু কিছু খাইবে না ? মিষ্ট না খাও ত ফল আছে--অাতা, আপেল, বেদান!--* কমলা কোন কথা না বলিয়া ঘাড় নাড়িল । কমলার এই সুদূর নির্লিপ্তভাব রমেশের ভাল লাগিল না । কিছুক্ষণ আগেই রমেশ ভাবিতেছিল, ‘স্বামিত্ৰম করিয়া কমলার ভালবাস যদি তাহার প্রতি দৃঢ়বদ্ধমূল হইয়া থাকে, তবে কি মুক্ষিল হইবে । তাহা হইলে কেমন করিয়া তাহাকে কাছে রাখা চলিবে ? কিন্তু তাই বলিয়া একেবারে উদাসীন অনাস্ত্রীয়তা—সেও কি ভাল ? কমলাকে যখন চিরদিন রমেশের উপরেই নির্ভর করিতে হইবে, তখন পরস্পরের মধ্যে একটা স্নেহের সম্বন্ধ থাকা ত চাই ।” আসল কথা, যাহার মুখখানি এমন সুন্দর, যাহার বড়-বড় দুটি চোখের মধ্যে এমন সরলতা, যাহার ভাবখানি দেখিলে এটুকু স্পষ্ট বোঝা যায় যে, ভালবাসিবার শক্তি তাহার অপরিণত হৃদয়কোরকের মধ্যে উপযুক্ত অবসরের প্রতীক্ষায় উন্মুখ হইয়া আছে, একেবারে পথের পথিকের মত তাহার হৃদয়সীমানার সম্পূর্ণ বাহিরে পড়িয়া থাকিবার ইচ্ছা স্বাভাবিক নহে। এই সুন্দরী মেয়েটি জীবনের স্থখসাস্বনার জন্ত স্নিগ্ধ আত্মীয়তার সহিত রমেশের প্রতি নির্ভর করিবে; এই প্রত্যাশাটুকু রমেশ ছাড়িতে পারিল না । কমলার মধ্যে এখন রমেশের প্রেমের চরম সার্থকতা নাই—সে রমেশের জীবনের পক্ষে একান্ত প্রয়োজনীয় নহে। কিন্তু যাহার