পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম সংখ্যা । ] সাহিত্যের সামগ্রী। \లిపి কিন্তু মাজুষের মনের ভাবটুকু মাঙ্গষের মনের সুখদুঃখের মধ্যে লালিত হইবার জন্ত যুগ হইতে যুগান্তরে আসিয়া আপনার পরিচয় দিতে পারিতেছে না—দুই বাহু বাড়াইয়া মুখের দিকে চাহিতেছে। জগতের মধ্যে সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ সম্রাটু অশোক আপনার যে কথা গুলিকে চিরকালের শ্রুতিগোচর করিতে চাহিয়াছিলেন, তাহাদিগকে তিনি পাহাড়ের গায়ে খুদিয়া দিয়াছিলেন । ভাবিয়াছিলেন, পাহাড় কোনোকালে মরিবে না, সরিবে না-অন স্তকালের পথের ধারে অচল হইয়া দাড়াইয়া নব নব যুগের পথিকদের কাছে এক কথা চিরদিন ধরিয়া আবৃত্তি করিতে থাকিবে । পাহাড়কে তিনি কথা কহিবার ভার দিয়াছিলেন । পাহাড় কালাকালের কোন বিচার না করিয়া তাহার ভাষা বহন করিয়া আসিয়াছে। কোথায় অশোক, কোথায় পাটলিপুত্র, কোথায় ধৰ্ম্মজণ গ্রত ভারতবর্ষের সেই গৌরবের দিন । কিন্তু পাহাড় সেদিনকার সেই কথাকয়টি বিস্মৃত অক্ষরে অপ্রচলিত ভাষায় আজ ও উচ্চারণ করিতেছে ! কতদিন অরণ্যে রোদন করিয়াছে,—অশোকের সেই মহাবাণী ও কত-শত-বৎসর মানবহৃদয়কে বোবার মত কেবল ইশারায় আহবান কয়িয়াছে । পথ দিয়া রাজপুত গেল, পাঠান গেল, মোগল গেল, বর্গির তরবারি বিদ্যুতের মত ক্ষিপ্রবেগে দিগদিগন্তে প্রলয়ের কষাঘাত করিয়া গেল—কেহ তাহার ইশারায় সাড়া দিল না । সমুদ্রপরের যে ক্ষুদ্রদ্বীপের কথা অশোক কথনে কল্পনাও করেন নাই—তাহার শিল্পীরা পাষাণফলকে WS) যখন র্তাহার অনুশাসন উৎকীর্ণ করিতেছিল, তখন যে দ্বীপের অরণ্যচারী “দ্রুয়িদ”গণ আপনাদের পূজার আবেগ ভাষাহীন প্রস্তরগুপে স্তম্ভিত করিয়া তুলিতেছিল, বহুসহস্ৰ বৎসর পবে সেই দ্বীপ হইতে একটি বিদেশী আসিয়া কালান্তরের সেই মুক ইঙ্গিতপাশ হইতে তাহার ভাষাকে উদ্ধার করিয়া লইলেন । রাজচক্ৰবৰ্ত্তী অশোকের ইচ্ছ এত শতাব্দী পরে একটি বিদেশীর সাহায্যে সার্থকতালাভ করিল। সেইচ্ছ। আর কিছুই নহে, তিনি যত বড় সম্রাটুই হউন, তিনি কি চান কি না চান, র্তাহার কাছে কোনটা ভাল কোনটা মন্দ, তাহ পথের পথিককে ও জানাইতে হইবে । তাহার মনের ভাব এত যুগ ধরিয়া সকল মানুষের মনের আশ্রয় চাহিয়া পথপ্রান্তে দাড়াইয়া আছে । রাজচক্ৰবৰ্ত্তীর সেই একাগ্র আকাজক্ষীর দিকে পথের লোক কেহ বা চাহিতেছে, কেহ বা না চাহিয়া চলিয়া যাইতেছে । তাই বলিয়া অশোকের অনুশাসনগুলিকে অামি যে সাহিত্য বলিতেছি, তাহা মহে । উহাতে এইটুকু প্রমাণ হইতেছে, মানবহৃদয়ের একট। প্রধান আকাজক্ষ কি ? আমরা যে মূৰ্ত্তি গড়িতেছি, ছবি আঁকিতেছি, কবিত। . লিখিতেছি, পাথরের মন্দির নিৰ্ম্মাণ করিতেছি, দেশে-বিদেশে চিরকাল ধরিয়া অবিশ্রাম এই যে একটা চেষ্টা চলিতেছে, ইহা অার কিছুই নয়, মাচষের হৃদয় মামুষের হৃদয়ের মধ্যে অমরত। প্রার্থনা করিস্কেছে । যাহা চিরকালীন মানুষের হৃদয়ে অমর ছইতে চেষ্টা করে, সাধারণত তাহ আমাদের ক্ষণকালীন প্রয়োজন ও চেষ্ট হইতে নানা