পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম সংখ্যা । ] সাহিত্যের সামগ্রী। \రిS) আর ভাবের কথাকে সঞ্চার করিয়া দিতে হয়। উষা যে আরক্তবর্ণ, তাহা প্রমাণ করিয়া দিবার যে কয়টি উপায় আছে, তাহী জান৷ শক্ত নহে—কিন্তু উষা আমার যে কেমন লাগিতেছে, তাহ অন্তকে ঠিকমত অনুভব করাইতে গেলে কোনো বাধা উপায়ের দোহাই দেওয়া চলে না । যুক্তিশাস্ত্রের বিধানের মত তাহ নির্দিষ্ট নহে । তাহার জন্ত নানাপ্রকার আভাস ইঙ্গিত, নানাপ্রকার ছলাকলার দরকার হয় । তাহাকে কেবল বুঝাইয়া বলিলেই হয় না, তাহাকে স্বষ্টি করিয়া তুলিতে হয় । এই কলাকৌশলপূর্ণ রচনা, ভাবের দেহের মত। এই দেহের মধ্যে ভাবের প্রতিষ্ঠায় সাহিত্যকারের পরিচয় । এই দেহের প্রকৃতি ও গঠন অনুসারেই তাহার আশ্রিত ভাব মানুষের কাছে আদর পায়—ইহার শক্তি অসুসারেই তাহা হৃদয়ে ও কালে ব্যাপ্তিলাভ করিতে পারে । প্রাণের জিনিষ দেহের উপরে একান্ত নির্ভর করিয়া থাকে । জলের মত তাহগকে এক পাত্র হইতে আর এক পাত্রে ঢালা যায় না । দেহ এবং প্রাণ পরম্পর পরস্পরকে গোরুবাশ্বিত করিয়া একাত্ম হইয়া বিরাজ করে । যেখানে রচনার সঙ্গে তাহার বিষয়ের এইরূপ একাত্মতা আছে, সেইখানেই সাহিত্য সজীবমুৰ্ত্তিতে প্রকাশ পায়। কুমারসম্ভবের মধ্যে যে বিষয়টুকু আছে, তাহ জানা হইলেই যে কুমারসম্ভৰ পড়ার ফল পাওয়া যায়, তাহা নহে ! উহার ছন্দোবন্ধ, উহার আগাগোড়াই পড়িতে হইবে। কুমারসম্ভব ছাড়া আর সফল করিবার কোন উপায় নাই । উজ্জয়িনীতে বসিয়া কত শতাব্দী পূৰ্ব্বে কলিদাস যে কয়টি কথা লিখিয়াছেন, তাহারএকটি অক্ষর বাদ দিলে চলিবে না । তাহারই ভাব তাহারই ভাষায় তাহারই রচনার ভঙ্গীতে আমাদিগকে সমগ্র আকারে গ্রহণ করিতে হইবে, নতুবা তাহার প্রাণহানি হইবে । ইহাই যথার্থ বাচিয়া থাকা । ভাব, বিষয়, তত্ত্ব সাধারণ মানুষের । তাহা একজন যদি বাহির না করে ত কালক্রমে আর একজন বাহির করিবে । কিন্তু রচনা লেখকের সম্পূর্ণ নিজের । তাহা একজনের যেমন হইবে, আর একজনের তেমন হইবে না । সেইজন্য রচনার মধ্যেই লেখক যথার্থরূপে বাচিয়া থাকে—ভাবের মধ্যে নহে, বিষয়ের মধ্যে নহে । অবশু রচনা বলিতে গেলে ভাবের সহিত ভাবপ্রকাশের উপায় দুই সম্মিলিতভাবে বুঝায়—কিন্তু বিশেষ করিয়া উপায়টাই লেখকের । 鬱 দীঘি বলিতে জল এবং খনন-করা আধার দুই একসঙ্গে বোঝায় । কিন্তু কীৰ্ত্তি কোনটা ? জল মানুষের স্বষ্টি নহে—তাহ। চিরন্তন । সেই জলকে বিশেষভাবে সৰ্ব্বসাধারণের ভোগের জন্ত সুদীর্ঘকাল রক্ষা করিবার যে উপায়, তাহাই কীৰ্ত্তিমান মানুষেরনিজের । ভাব সেইরূপ মনুষ্যসাধারণের, কিন্তু তাহ বিশেষ মূৰ্ত্তিতে সৰ্ব্বলোকের বিশেষ আনন্দের সামগ্ৰী, করিয়া তুলিবার উপায়রচনাই লেখকের কীৰ্ত্তি। অতএব দেখিতেছি, ভাবকে নিজের