পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবম সংখ্যা । ] করিতে পারিবেন না । এমন কি, রমেশ লাজেল আসিয়া যদি বলে, “আমি এখন কিছুই বলিব না, তবু নিশ্চয় বাবা তাহfর সঙ্গে হেমের বিবাহ দিতে কুষ্ঠিত হন না । ইহাদের লইয়। আমি এমনি মুস্কিলে পড়িয়াছি । বাবা হেমনলিনীর কিছুমাত্র কষ্ট সহ করিতে পারেন না—হেম যদি আজ আব্দীর করিরা বসে, রমেশের অম্ভ স্ত্রী থাকৃ, আমি তাহাকেই বিবাহ করিব, হবে বাবা বোধ হয় তাহাতেই রাজি হন । যেমন করিয়া হৌক এবং যত শীঘ্রই হেীকৃ, রমেশকে দিয়া কবুল করাইতেই হইবে । তোমাকে হতাশ হুইলে চলিবে না । আমিই এ কাজে লাগিতে পারিতাম, কি স্তু কোনপ্রকার ফনদী আমার মাথায় আগলে না—আমি হয় ত রমেশের সঙ্গে একট। মারামারি বাধাইয়া দিব । এখনো বুঝি তোমার মুখ ধোওয়া, চা খাওয়া হয় নাই ।” অক্ষয় মুখ ধুইয়া চা থাইতে থাইতে ভাবিতে লাগিল । এমন সময়ে অন্নদাবাবু হেমনলিনীর হাত ধরির। চা থাইবার ঘরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। অক্ষয়কে দেখিবমাত্র হেমনলিনী ফিরিয়া বর হইতে বাহির হইয়া গেল । যোগেন্দ্র রাগ করিয়া কছিল—“হেমেয় এ ভারি অঙ্গয় । বাবা, তুমি উহার এই সকল অভদ্রতায় প্রশ্রয় দিয়ে; না । উহাকে জোর করিয়া এখানে মানা উচিত। হেম ! হেম !” হেমনলিনী তখন উপরে চলিয়া গেছে । অক্ষয় কছিল, “যোগেন, তুমি আমার কেস আরো খারাপ করিয়া দিবে দেখিতেছি । উ হার কাছে আমার সুম্বন্ধে কোন কথাটি নৌকাডুবি । فة هg কহিয়ে না । সময়ে ইহার প্রতিকার হইবে —জৰরদস্তি করিতে গেলে সব মাটি হইয়া বাইবে ।” - এই বলিয়া অক্ষয় চ থাইয়া চলিয়া গেল অক্ষরের ধৈর্য্যের অভাব ছিল না । যখন সমস্ত লক্ষণ তাহার প্রতিকুলে, তখনে। সে লাগিয়া থাকিতে জানে । তাহার ভাবেরও কোন বিকার হর না । অভিমান করিয়া সে মুখ গম্ভীর করে না বা দূরে চলিয়া যায় না । অনাদর-আবমাননায় সে অবিচলিত থাকে । লোকটা ট্যাক্সই । তাহার প্রতি যাহার ব্যবহার যেমনি হৌকৃ, সে টিকিয়া থাকে । অক্ষয় চলিয়া গেলে আবার অন্নদাবাৰু হেমনলিনীকে ধরিয়া চায়ের টেবিলে উপস্থিত করিলেন । আজ তাহার কপোল পাণ্ডুবর্ণতাহার চোখের নীচে কালি পড়িয়া গেছে । ঘরে ঢুকিয় সে চোখ নীচু করিল, ষোগেন্দ্রের মুখের দিকে চাহিতে পারিল না। সে জানিত, যোগেন্দ্র তাহার ও রমেশের উপর রাগ করিয়াছে, তাহণদের বিরুদ্ধে কঠিন বিচায় করিতেছে। এই জম্ভ যোগেন্দ্রের সঙ্গে মুখোমুখিচোখোচোথি হওয়া তাহার পক্ষে দুরূহ হইয়া উঠিয়াছে । ভালবাসায় যদিও হেমনলিনীর বিশ্বাসকে আগলাইয়া রাখিয়াছিল, তবু যুক্তিকে একেবায়েই ঠেকাইয়া রাখা চলে না । যোগেঞ্জের সম্মুখে হেমনলিনী কাল আপনার বিশ্বাসের দৃঢ়তা দেখাইয়া চলিয়া গেল । কিন্তু রাত্রের অন্ধকারে শয়নঘরের মধ্যে একলা সেই বল সম্পূর্ণ থাকে না । বস্তুতই প্রথম হইতে রমেশের ব্যবহারের কোন অর্থ পাওয়া যায় না ।