পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবম সংখ্যা ।- } রীর পিঠে হাত বুলাইয়া কছিলেন—“আমার । অাজ উঠিতে দেরি হইয় গেছে ।” অন্নদাবাৰু উৎকণ্ঠায় রাত্রে ঘুমাইতে পারেন নাই—ভোরের দিকে ঘুমাইয়া পড়িয়াছিলেন। মালো চোখে লাগিতেই উঠিয়া-পড়িয়া তাড়াতাড়ি মুখ ধুইয়া হেমনলিনীর খবর লইতে গেলেন । দেখিলেন, ঘরে কেহ নাই । সকালে তাহাকে একল। বেড়াইতে দেখিয়া তাহার বুকের মধ্যে আঘাত লাগিল। কহিলেন—“চল মা, চা খাইবে চল ৷ ” চায়ের টেবিলে যোগেন্দ্রের সম্মুখে বসিয়া চ খাইবার ইচ্ছা কেমনলিনীর ছিল না । কিন্তু সে জানিত, কোনরূপ নিয়মের অন্তথা তাহার বাপকে পীড়া দেয় । তা ছাড়া, প্রত্যহ সে নিজের হাতে তাহার বাপের পেয়ালায় চা ঢালিয়৷ দেয়, এই সেবাটুকু হইতে সে নিজেকে বঞ্চিত করিতে চাহিল নী । নাচে গিয়। ঘরে পৌছিবার পূৰ্ব্বে যখন সে বাহির হষ্টতে শুনিল, যোগেন্দ্র কাছার সঙ্গে কথা কহিতেছে—তখন তাহার বুক কঁাপিয়া উঠিল হঠাৎ মনে হইল, বুঝি রমেশ জালিয়াছে । এত সকালে আর কে স্বাসিবে ? কম্পিতপদে ঘরে ঢুকিয় ষেই দেখিল অক্ষয়, অমনি সে মার কিছুতেই আত্মংবরণ করিতে পারিল না—তৎক্ষণাৎ ছুটিয়া বাহির হইয়া আসিল । দ্বিতীয়বার অন্নদাবাবু বখন তাহাকে মরের মধ্যে লইয়া আসিলেন, তখন সে তাহার পিতার চৌকির পাশে ঘেঁৰিয়া দাড়াইয়া নতসুখে ভাস্কার চা প্রস্বত করিয়া নিতে লাগিল । নৌকাডুৰি । 3 e © ৰোগেজ হেমনলিনীর ব্যবহারে অত্যন্ত বিরক্ত হুইয়াছিল । হেম যে রমেশের জস্থত এমন করিয়া শোক অনুভব করিবে, ইহা তাহার অসহ বোধ হইতেছিল । তাহার পরে যখন দেখিল, অন্নদাবাবু তাহার এই শোকের সঙ্গী হইয়াছেন এবং সে ও যেন সংসারের আর সকলের নিকট হইতে অন্নদাবাবুর স্নেহচ্ছায়ায় আপনাকে রক্ষা করিতে চেষ্টা করিতেছে, তখন তাহার অধৈর্য্য আরো বাড়িয়া উঠিল । “আমরা যেন সবাষ্ট অদ্যায় কারা আমরা যে স্নেহের খাতিরেষ্ট কৰ্ত্তব্যপালনে চেষ্টা করিতেছি, আমরাই যে যথার্থভাবে উহার মঙ্গলসাধনে প্রবৃত্ত— তাহার জন্ত লেশমাত্র কৃতজ্ঞতা দূরে থাক, মনে মনে আমাদের দোষী করিতেছে । বাবার ত কোন বিষয়ে কাওঙ্কান নাই ! এখন সাস্বনা দিবার সময় নহে—এখন আঘাত্ত দিবারই সময় । তাছ লা করিয়া তিনি ক্রমাগতই অপ্রিয়-সত্যকে উহার নিকট হক্টতে দূরে খেদাইয়। রাখিতেছেন ।” যোগেন্দ্র অন্নদণবাবুকে সম্বোধন করিয়৷ কচ্চিলেন, “জান বাবা, কি হইয়াছে ” অল্পদাবাৰু ত্রস্ত হইয়া উঠিয়া কহিলেন, “নী—কি হইয়াছে ?” যোগেন্দ্র । রমেশ কাল তাহার স্ত্রীকে লইয়া গোয়ালন্দ-মেলে দেশে ষাইতেছিল— . অক্ষঞ্চকে সেই গাড়িতে উঠিতে দেখিয়া দেশে না গিয়া আবার সে কলিকাতায় পালাইয়। আসিয়াছে । হেমনলিনীর হাত কঁাপিয়া উঠিল—চা ঢালিতে চা পড়িয়া গেল । সে চৌকিতে বলিয়া পড়িল ।