পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম সংখ্যা । ] যখন অকালে মারা পড়িলেন, তখন দেখা গেল র্তাহার সঞ্চয় কিছুই নাই, দেন আছে । বিধবা স্ত্রী একটি শিশু কস্তাকে লইয়। দারিদ্র্যের মধ্যে ডুবিয়া পড়িলেন । সেই কল্পটি আজ বিবাহযোগ্য হইয়াছে, ব্রজমোহন তাহারি সঙ্গে রমেশের বিবাহ স্থির করিয়াছেন- রমেশের হিতৈষীরা কেহ কেহ আপত্তি করিয়া বলিয়াছিল যে, শুনিয়াছি মেয়েটি দেখিতে তেমন ভাল নয় । ব্ৰজমোহন কহিলেন, “ও-সকল কথা আমি ভাল বুঝি না—মানুষ ত ফুল কিংবা প্রজাপতি মাত্র নয় যে, ভাল দেখার বিচারটাই সৰ্ব্বাগ্ৰে তুলিতে _হইৰে । মেয়েটির মা যেমন সতী-সাধবী, মেয়েটিও যদি তেমনি হয়, তবে রমেশ যেন তাহাই তাগ্য, বলিয়। জ্ঞান করে !” শুভবিবাহের জনশ্রুতিতে রমেশের মুখ শুকাইয়ু গেল । সে উদাসের মত ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল। নিস্কৃতিলাভের নানাপ্রকার উপায় চিন্তা করিয়া কোনটাই তাহার সম্ভবপর বোধ হইল না । শেষকালে বহুকষ্ট্রে সঙ্কোচ দূর করিয়া পিতাকে গিয়া কহিজ, “বাবা, এ বিবাহ আমার পক্ষে অসাধ্য ।” ব্ৰজমোহনবাবু মনে মনে আগুন হইয়া উঠিয়া কৃছিলেন, “তোমাকে সেজন্ত কিছুই ভাবিতে হইবে না, আমি সৰ্ব্ববিষয়েই সুসাধ্য করিয়৷ দিব—সে ভার আমার উপরে রহিল ।” রমেশ । আমি • অন্তস্থানে পণে আবদ্ধ হইয়াছি । ব্ৰজমোহন। ’ বল কি ! একেবারে পাণপত্র হইয় গেছে ? 蠍 রমেশ । না, ঠিক পাণপত্র নয়, তবে— নৌকাডুৰি । vව(? ত্ৰজমোহন । কস্তাপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা সব ঠিক হইয়া গেছে ? রমেশ । না, কথাবার্ত যাহাঁকে বলে, তাহা হয় নাই— “ ব্ৰজমোহন । হয় নাই ত ! তবে এতদিন যখন চুপ করিয়া আছ, তখন আর ক’টা দিন চুপ করিয়া গেলেই হইবে । রমেশ একটু নীরবে থাকিয়া কহিল, . “আর কোন কস্তাকে আমার পত্নীরূপে গ্রহ করা অন্তায় হইবে।” 哆 ব্ৰজমোহন কহিলেন, “না করা তোমার পক্ষে আরো বেশি অদ্যার হইতে পারে । কিন্তু তুমি ছেলেমান্বষ, তোমার সঙ্গে দে তর্ক কি করিব ! হায়-অন্যায়ের বিচারভারও ’ আমার উপরেই থাকৃ, তুমি অধিক চিন্তা করিয়ো ন৷ ” 總 • . রমেশ আর কিছু বলিতে পারিল না । সে ভাবিতে লাগিল, “ইতিমধ্যে দৈবক্রমে সমস্ত ফাসিয়া যাইতে পারে।” ব্লমেশের কোষ্ঠীপত্রে বিশ্বাস ছিল । সে গ্রামের একজন দৈবজ্ঞকে জিজ্ঞাসা করিল, “বিবাহস্থানটা কিরূপ দেখিতেছ?” সে কহিল, “যথেষ্ট ব্যাঘাত দেখা যাইতেছে।” রমেশ কহিল, “বিবাহ যদি না ঘটে, তোমুকে পুরস্কার দিব। — • • দৈবজ্ঞ কহিল, “ন হইবারই গতি বটে।” 變 驗 এইটুকুতেই রমেশ অত্যন্ত সাস্বন অনুভব করিল। তাহার কর্তব্য দৈব, সমস্ত করিয়া দিবেন, ইহ। সে চোখ বুজিয়া বিশ্বাস করিল এবং বিবাহের আয়োজনসম্বন্ধে কোন কথাটি কহিল ন ।