পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবম সংখ্যt. ] এ কথাট একবার ভাৰিয়া দেখা উচিত, কেন না, থিয়েটারের সঙ্গে সমগ্র জাতির সম্বন্ধ আছে। থিয়েটার শুধু রঙ্গালয় নয়, শিক্ষালয় । আগে যাত্রার দলে মিশিয়া অনেক ছেলে বিগড়াইয়া বাইত ; এখন থিয়েটারের জম্ভ কত ছেলের সৰ্ব্বনাশ হইতেছে, তাহা কি কাহাকেও বলিতে হইবে ? নাট্যালয়ের শিক্ষা বিদ্যালয়ের শিক্ষার বিরোধী হইল কেন ? অল্পকথায় তাহা বলিতেছি । " যাত্রায় ও থিয়েটারে একটা গুরুতর মৌলিক প্রভেদ । যাত্র। সখের হৌক বা পেশাদারি হৌক, যাত্রায় স্ত্রীলোক নাই, কোনকালে ছিল না । বালকের স্ত্রীলোক সাজিত । নিৰ্ব্বাচন সমাজের অবস্থার অমুযায়ী হইয়াজিল । স্ত্রীলোক লইলে যাত্রা খেম্টায় গড়াইবে জানিয়া যাত্রায় দলপতির স্ত্রীলোককে দলে লইতেন না । কিন্তু যখন থিয়েটার পেশা হইল, তখন আর স্ত্রীলোক নহিলে চলে না । যদি বিলাতের মত সমস্তই যথাযথ-করিতে হয়, তাহ হইলে স্ত্রীলোকের পার্ট পুরুষ অথবা পুরুষশিশু কেমন কল্পিয়া অভিনয় করিবে ? আপত্তি করা যাইতে • পারিত যে, এ দেশে স্ত্রীলোকে স্বরের বাহির হইতে জানে না ; আগে তাহাদিগকে লেখাপড়া শেখাও, পথে-ঘাটে-সমাজে বাহির কর, তাহার পর না হয় রঙ্গমঞ্চে তুলিও । সে আপত্তি শোনে কে ? থিয়েটারযাত্ৰীদিগের মনে কোন ৰিধ হইল না । সুতরাং বে শ্রেণীর স্ত্রীলোক নষ্ট সাজিতে পারে, তাহারাই আসিল। বাহার রাজপথের পণ্যৰীখিকায় বাড়াইয়া থাকে, তাহারাই - থিয়েটার। 8રહ . রঙ্গমঞ্চের দ্বীপমালার সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল । তাহাদের পদমৰ্য্যাদা বাড়িল ৰৈ । কমিল না, কিন্তু সেই এক বিষম অমঙ্গলের । স্বত্রপাত হইল । হইল কি ? থিয়েটারে পূৰ্ব্বে লোকে অভিনয় শুনিতে যাইত, নাট্যকলা দেখিতে যাইত। নৃত্যগীতের সাধ হইলে স্থানাস্তরে যাইত । অভিনেতাদিগের গুণাগুণ সৰ্ব্বত্র বিচারিত হুইত, অভিনেত্রীদিগের কথা . প্রায় শুনিতে পাওয়া যাইত না । পরিবর্তন অতি দ্রুত ঘটিতে লাগিল । নাটকে গীতের সংখ্যা বাড়িতে লাগিল। নটদিগের নৃত্যকলা দেখিয়া দর্শকের মুগ্ধ হইতে লাগিল। দীনবন্ধুর নাটক পুরাতন হইয়া উঠিল। বঙ্কিমের উপন্যাস পড়িতে ভাল লাগে, নাটকাকারে অভিনয় তত ভাল লাগে না । যে নাটক বা নাট্যগীতিতে কেবল রঙ্গরহস্ত, ব্যঙ্গবিদ্ধপ, ও নৃত্যগীতের অক্ষয় উৎস, তাহাই দেখিবার জন্ত দলে দলে লোক ভাঙে ৷ বিলাতের থিয়েটারের উপমা আর কাহারও মনে রহিল না । সেখানে থিয়েটার, অপেরা ও ব্যালে, এই ত্ৰিবিধ মূৰ্ত্তিতে যে আনন্দ উৎপাদন করে, এখানে একমাত্র থিয়েটারে সেই আনন্দের ত্রিধারা প্রবাহিত হইল— অবশেষে একবেণী হইয়া ব্যালেরূপী মেঘনামুক্তি ধারণ করিল। হায় দীনবন্ধু-মধুসূদন । মধুকৈটভ আসিয়া আবার তোমাদের সিংহাসন অধিকার করিল। কোথায় গেল বঙ্কিমের ভাষা, দীনবন্ধুর রসিকতা । গানে, কথায়, ভঙ্গীতে এক নুতন ভাষার স্বষ্টি হইল । একটা বর্ণসঙ্কর, অতি কুৎসিত, অম্পূখ, অশ্রাব্য ভাষা থিয়েটারের ভাষা