পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবম সংখ্যা । ] । উহ! প্রকৃত জীবনের কথার অালোতে একটু বেণী পরিষ্কার দেখাইতেছে—আর-একটু সন্ধ্যার আবছায়। ঘনীভূত হইলে যেন বালকবুদ্ধির জন্ত প্রকৃষ্টতর নীড় প্রস্তুত হইতে পারিত । বহিগুলি অপেক্ষাকৃত অধিকবয়স্ক ছেলেদের পক্ষে বেশ উপযোগী, কিন্তু তাহাদের জন্ত ও তাহাদের কনিষ্ঠদের জন্ত এই সকল পুস্তকের অপেক্ষা ও অধিকতর উপযোগী একখানি পুস্তকের পরিচর দেওয়াই এই প্রবন্ধের উদ্দেশু । যাহার সকল কথার অর্থ হর ও সামঞ্জস্ত আছে, এমন-সকল উপাখ্যান শিশুদিগের প্রতিভার ঠিক অমুকুল কি না, সন্দেহ । তাহার। যে রাজ্যের লোক, সেখানে সত্য ঘটনার তীব্র জ্যোতিতে সকল জিনিষ বিকাশ পাইয়া উঠিলে চক্ষুর কৌতুহল ফুরাইয়া যায়, একটু নিবিড়ত। দেখিলে অদৃশুদর্শনের উৎকণ্ঠ দ্বাহীদের মনকে সজাগ করিয়া তোলে । এই কল্পনাপ্রবণতা নষ্ট করিয় তাহাদের কোমল প্রকৃতিকে সাংসারিক চিত্রের খুটিনাটিত্বে অভ্যস্ত করিলে, তাহাদের কবিত্বের মূল শুকাইয়া যাইবে । প্রবীণবয়সে কল্পনাশক্তি সংযত হইয়া অস্তদৃষ্টির সহায় হয়। এই কল্পনার শিকড়টি শিশু প্রকৃতি হইতে ঘদি তুলিয়া ফেল, তবে বড় হইলে শিশুর অতিরিক্তমাত্রায় সংসারী ও কতক পরিমাণে অন্তঃকরণপুন্ত হইয়া পড়িবার আশঙ্কা । এইজন্য সেই কল্পনামন্ত্রী প্রকৃতির অস্থফুলে শিশুকে শিক্ষা দেওয়া উচিত—তাছাতে - উহার। স্বাভাৰিক আমোদ পায়, অথচ এমন কোন ধারণ ৰন্ধমুল হইতে দেওয়া উচিত গছে, যাহাতে অসত্যের বীজ অঙ্কুরিত হইয়। 88" শেষে বিকাশ পাইতে পারে ;–ছেলেভুলান ছড়ার মধ্যে যে কবিত্বমিশ্র নিরর্থ কল্পনার মুক্ত পরিবেষণ দৃষ্ট হয়—তাহাতে - শিশুপ্রকৃতি পুষ্ট হয়, অথচ শিশু বাড়িয়া উঠিলে বুদ্ধি সতেজ হওয়ামাত্র সে কল্পনাগুলি কুরাশার মত কাটিয়া যায়, তাহাতে হৃদয়ে কোন স্থারী দাগ পড়ে না—কিন্তু প্রকৃতিটি ভাবপ্রবণ ও সুকুমার হইয়া থাকে । “ক্ষীরের পুতুল” শ্ৰীযুক্ত অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় রচনা করিরাছেন । ইহার আখ্যানাংশ এমন চিত্তাকর্ষক হইয়াছে যে, কোন শিশুই ইহা পড়িতে বা শুনিতে আরম্ভ করিলে শেষ না করিয়া ছাড়িতে পরিবে না ;—ছেলেদের পিতাদের পক্ষেও সেই কথা । কিন্তু ইহার এমন একটা বিশেষত্ব আছে, যাহাতে পুস্তকখানিকে আমরা সৰ্ব্বতোভাবে শিশু প্রকৃতির অমুকুল ও দেশের স্থায়ী সাহিত্যে স্থান পাইবার যোগ্য মনে করি । উহার অনেক স্থান আছে—মাথা খুড়িয়াও যাহার কোন অর্থ হইবে না, অথচ গল্পের মধ্যে এমন ভাবে তাহারা জুড়িরা আছে যে, শিশুগুলি উহা পড়িলে কল্পনার দেশের অনেক অসীম ও আশ্চর্য্য চিত্র তাহাঙ্গের মনের ভিতর আনাগোনা করিতে থাকিবে । , শিশুগণ শয্যায় গুইর মাতামহী বা পিতামহার যে সকল ছড়া শোনে—সেই নিরর্থ, অসঃ- ' লগ্ন, আজগুবি কথায় তাহারা কেমন-একটা নিৰ্ম্মল আনন্দ পাইয়া উৎসাহ বোধ করে— উহ। তাছারা যেমন বোঝে, আমরা তেমন বুঝি না—কারণ উহাতে বুঝিবার কিছু নাই, অথচ শিশুর সমস্ত অস্তর্নিহিত কৌতুহল, কল্পনা ও চেষ্টার উদ্ভুজক করিয়া দিতে উহাৰু।