পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৫০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

d ०९ বৎসর, পঞ্চশত বৎসর পূৰ্ব্বে আমি কেমন ছিলাম, আমি ছিলাম কি ছিলাম না, তাহা আমি বলিতে পারি না । অথচ সেই পাচ বৎসর, পঞ্চাশ বৎসর, পঞ্চশত বৎসর পূৰ্ব্বে বিষয়ক্কপী জড়জগৎ কিরূপ ছিল, তাহা আমি কতক বলিতে পারি । প্রত্যক্ষ প্রমাণে বলিতে পারি না, কিন্তু অনুমানবলে বা শাদপ্রমাণবলে বলিতে পারি । সে সময়ে আমার জন্মের পূৰ্ব্বে, জগতের মূৰ্ত্তি কিরূপ ছিল, কোথায় কি হইতেছিল, কোথায় কি ঘটিতেছিল, তাহ আমার জ্ঞানের বিষয় । তাহা আমি, বিবস্ত্রী অামি—এখান হইতে অস্পষ্ট দেখিতে পাইতেছি । ঐ ক্লাইব পলাশীবাগানে লড়াই করিতেছেন,~~ঐ জয়চন্দ্র মুসলমানকে নিমন্ত্ৰণ করিতেছেন,—ঐ দিগ্বিজয়ী সেকন্দার সসৈন্তে সিন্ধুনদ পার হষ্টতেছেন,—ঐ আৰ্য্যগণ হুলস্কন্ধে গোধনসঙ্গে ভারত প্রবেশ করিতেছেন,—ঐ ধরা পৃষ্ঠে মাষ্টোডন মেগার্থীরিয়াম বিচরণ করিতেছে, মানুষ তখন নাই,—ঐ মহাসাগরে বৃহৎ কুম্ভীর, বৃহৎ মীন চরিয়া বেড়াইতেছে, স্তন্তপায়ী তখনও আবিভূত হয় নাই ; ঐ উত্তপ্ত ধরাপৃষ্ঠ মুছমুহ ভূকম্পে আন্দোলিত হইতেছে, তখন প্রাণীর আধির্ভাব হয় নাই ;— ঐ সৌরনীহারিক সৌরজগতের পরিধি পুর্য্যস্ত ব্যাপিয়া ঘুর্ণমান, কেহ তাহ দেখিবার নাই ;- কিন্তু আমি এখান হইতে বসিয়া-বসিয়া শুনহ দেখিতেছি ;—আমি জড় জগতের এই কল্পব্যাপী পরিবর্তনের সাক্ষী। বিষয়ী আমি এইখানে বসিয়া নিৰ্ব্বিকারভাবে, নির্নিমিষে, উদাসীনেয় স্থায় বিষয়-আমার অতীত যৌবনের অতীত বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, মাঘ । শৈশবের, রাত্রিদিন ধুকধুক তরঙ্গিত হুঃখস্থখ’ এর অবেক্ষণ করিতেছি ; আবার বিষয়-আমি যখন ছিলাম না, অথবা কেমন ছিল, কোথায় ছিল, তাহার ঠিকানা নাই, তখন বিষয় জড়জগৎ কোথায় ছিল, কেমন ছিল, কিরূপে ঘুরিতেছিল, ফিরিতেছিল, অভিব্যক্ত হইতেছিল, তাহাও এখানে বসিয়াবসিয়া দেখিতেছি । সে কোন কালের কথা—স্বৰ্যমণ্ডলু তখন ছিল না—চন্দ্রমণ্ডল তখন ছিল ন! . . অণকাশে তখন নক্ষত্র দেখা দিত না অচেতন ঘৃণমান জড় নীহারিক, তাহা ও হয় ত তখন ছিল না—আসীদিদং তমোভুতম—সেই জগতের আদিম অবস্থা --- তার পর কতকাল অতীত হইয়া গেল, মাস গেল, অব্দ গেল, যুগ গেল, কল্প গেল, আমি এইখানে বসিয়া নিৰ্ব্বিকার নিক্রিয় প্রশান্ত নিত্য মুক্ত শুদ্ধ বুদ্ধ স্বয়ংপ্রকাশ চেতলস্বরূপ আমি এইখান হইতে সমস্ত দেখিতেছি । সমগ্র অতীতের আমি সাক্ষী— আমি বিষয়া— নামি আত্মা—আমি পরমাত্মা --- অ fম ব্রহ্ম । অঙ্গং ব্রহ্মাস্মি । এখন বেদান্তের অভিপ্রায় অনেকটা স্পষ্ট হইয়। আসিল । জড় জগৎ ত বিস্ময়, উহ! অধ্যাস উহা মায়া । কাহার মায় ? উত্তর আমার মায় । আমার অস্তিত্ব আমি যত সহজে মানিব, জড় জগতের অস্তিত্ব তত সঙ্কজে মানিব না । কিন্তু সেই আমিই বা কিংস্বরূপ ? বেদাঙ্ক বলেন, আমারও দুই মূর্তি --অামি ও একাধারে বিবল্পী ও বিষয় । আমি আমাকেই দেখি । যে দেখে, সে বিষয়ী ; যাহাকে দেখে, সে বিষয় । বে বিষয়ী, তাহার নাম দা ও পরমাত্মা বা ব্ৰহ্ম ; যে বিষয়, তাহার