পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b” . সস্থিত ও পিটের আছি”র ঐক্য বলিয়া নির্দে শিত হইতেছে । প্রথম উদ্যমে দেবদত্ত শরীরকে যতটা আপনার মনে করিয়াছিলেন, ক্রমে দেখিলেন—শরীর ততটা আপনার নহে । পরিশেষে ৰখন দেখিলেন যে, তাহার পদ-দ্বয় তাহার কথার অবাধ্য হইয়া—তিনি যত বলিতেছেন “চলো”, সে দুই ভ্রাতা ততই বলিতেছে “চলিতে পারি না”, তখন তাহার স্বাধীনতাবোধের বক্ষ একেবারেই দমিয়া গেল। তাহার পরে যখন তিনি বটবৃক্ষ-তলে নিষগ্ন হুইয়া বাহিরের লাঠিয়াল এবং অস্তরের নিদ্রণ ছয়ের কাহাকে সামলাইবেন, তাহ ভাবিয়া পাইতেছেন না, তখন কত যে তিনি পরাধীন, সে বিষয়ে তাহার বিলক্ষণ শিক্ষালাভ হইল। তাহার পরে তিনি যখন বন্ধু-ভবনে জুবিশ্বস্ত-চিত্তে মনের কপাট খুলিয়া সুখে শয়ন করিলেন, তখন দেখিলেন যে, তাহার চারিদিকের লোকেরা সকলেই তাহার আপনার লোক—কেহই তাহার পর নহে । তা ছাড়া—ধনঞ্জয়-নামক গৃহকর্তা তাহার পরম বন্ধু—একপ্রকার দ্বিতীয় আপনি । এই সকল কুণরণে—পথের মাঝখানে তিনি হারাইয়া ফেলিয়াছিলেন সেই যে তাহার অাদরের ধন স্বাধীনতা, এক্ষণে তাহ তিনি শুধম্বন্ধ ফিরিয়া পাইলেন। এক্ষণে আছি’র সহিত আছি’র ঐক্য অতীব সুস্পষ্ট আকার ধারণ করিল। বন্ধুপ্রাপ্তির এ-পারে দেবদত্তের আমি আছি এবং ওপারে ধনঞ্জয়ের অামি আছি, এই দুই আছি একীভূত হইয়। দেবদত্তের অস্তঃকরণে স্বাধীনতার কপাট বঙ্গদশন । [ ৩য় বর্ষ, বৈশাখ । উন্মুক্ত করিয়া দিল । দেৰদত্ত যাত্রাকালে যেরূপ স্বাধীনতা অনুভব করিয়াছিলেন, তাহার গোড়া’র কথা দেহের আছি’র সহিত দেহীর আছি’র ঐক্য ; এক্ষণে বন্ধুভবনে তিনি যেরূপ স্বাধীনতা অনুভব করিতেছেন, তাহার গোড়া’র কথা বন্ধুবর্গের আছি’র সহিত আছি’র ঐক্য । কিন্তু এ দুইপ্রকার প্রাচীরের ঘের-দেওয়া স্বাধীনতা ব্যতীত আর-একপ্রকার স্বাধীনতা আছে—যাহার পদবী অতীব উচ্চ ; এত উচ্চ যে, বৰ্ত্তমান কালের সভ্যতার অবস্থ৷ যেরূপ শোচনীয়, তাহাতে তাহাকে নাগাল পাওয়া সুদুষ্কর। সেটি হ’চ্চে পারমার্থিক . স্বাধীনতা—যাহার আর-এক নাম মুক্তি । দেহ যেমন দেহীর আপনার.. গেহ যেমন গেহী’র আপনার, সমস্ত বিশ্বব্ৰহ্মাও তেমনি ভগবদভক্ত সাধু পুরুষের আপনার । পরিবারস্থ আত্মীয়স্বজনেরা যেমন গৃহী ব্যক্তির দ্বিতীয় আপনি, পরমাত্মা তেমনি ভক্ত জীবাত্মার দ্বিতীয় আপনি । জীবাত্মা ক্ষুদ্র ব্ৰহ্মাণ্ডের আছি, পরমাত্মা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আছি—এই দুই আছি’র ঐক্যের ভিতরে সমস্ত আছি’র সহিত আছি’র ঐক্য সভুক্ত রহিয়াছে; আর, প্রত্যেক মমুষ্যের স্বাধীনতাবোধ সেই ঐক্যের অক্ষুট আভাস। এই অ-ফুট স্বাধীনতার ভাব, যাহা প্রত্যেক মমুষ্যের ভিতরে-ভিতরে কার্য্য করিতেছে, তাহাই লৌকিক ধৰ্ম্মের ভিত্তিমূল ; আর, তাহ যখন ভগবদভক্ত সাধু ব্যক্তির মনোমধ্যে সুপরিস্ফুট আকার ধারণ করে, তখন তাহাই পারমার্থিক ধৰ্ম্মের ভিত্তিমূল এবং মুক্তির সোপান । লৌকিক ধৰ্ম্ম বলিতেছি