পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৫৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একাদশ সংখ্যা । ] জ্ঞানতৃপ্ত প্রশাস্তাত্মা যে গুরু, যিনি আপন সার্থকজীবনের প্রজ্বলিত হোমাগ্নিশিখার দ্বারা আমাদের চিত্তে সহজেই ব্ৰহ্মাগ্নি সঞ্চার করিয়া দিতে পারেন, আমি সেই গুরুর আসনে বসিয়া কোনো কথা বলিতেছি না —মুতরাং আমার কথার যতটুকু মুল্য, তাহ আপনার বিচার করিয়াই গ্রহণ করিবেন, ইহা জানিরাই সাহস করিয়া আমার চিন্তিত বিষয়কে আপনাদের নিকটে কিয়ৎপরিমাণে ব্যক্ত করিলাম । আমরা দীর্ঘকাল ধরিয়া যে পথ দিয়া চলিরছি, সে পথে এতদিন কিছু লাভ করি নাই বলিলে অত্যুক্তি হইবে—কিন্তু সম্প্রক্তি আমরা এমন একটি সংশরাপল্প স্থানে আসিয় দাড়াইয়াছি, যেখানে পুনৰ্ব্বার ভাল করিয়া দিঙনিৰ্ণয় করির লওর আমাদের পক্ষে প্রয়োজনীয় হইয়া উঠিয়াছে । ইহাই অমুভব করিয়া যে ভাবন, যে নিষ্ফলতার আশঙ্কা মনে জন্মিয়াছে, সম্পূর্ণ সত্যের মধ্যে জীবনকে সম্পূর্ণ সার্থকতা দিবার যে আকুলত মনে উদয় হইতেছে, তাহারই তাড়নায় আমি এই আলোচনা উপস্থিত করিয়াছি । ব্রাহ্মসমাজের মধ্যে আজকাল যে অপরিতৃপ্তি, যে অসন্তোষের ভাব সুস্পষ্ট দেখা যাইতেছে, তাহার প্রধান কারণ, ব্রাহ্মসমাজ দীর্ঘকাল ভাঙনের কাজেই বিশেষ লক্ষ্য রাখিরাছে, গড়নের কাজে মন দিতে পারে নাই । লড়াইয়ের দিনে বিচ্ছেদবিরোধ, আঘাতপ্রতিঘাতই সৰ্ব্বপ্রধান হইয় উঠে—রক্ষণ ও গঠনের জন্ত শাস্তি ও প্রীতির প্রয়োজন । যতদিন আমরা কেবল সৈন্তের ভাবে, আঘাতকাল্পীর ভাবেই সমাজে থাকিব, ততদিন ধৰ্ম্মপ্রচার । (రిరి আমাদের জীবন অনেকটা-পরিমাণে কৃত্রিম হইতেই বাধ্য । ততদিন আমরা আমাদের চতুর্দিকের সহিত মিলনের সহস্ৰ স্বত্রকে অগ্রাহ করিয়া অনৈক্যের কেবল দুটি-একটি কারণকেই চোখের সম্মুখে খাড়া করিয়া, তাহাকেই অপরিমিত বৃহৎ করিয়া, আপনাদিগকে চারিদিক্ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া, ক্ষুদ্র করিয়া, জাতীয় প্রাণসঞ্চারের স্বমহৎ প্রবাহ হইতে নিজেকে বঞ্চিত করিয়া রাখিতেছি । এরূপভাবে অধিককাল চলে না। টবের মধ্যে যেটুকু মাটি থাকে, তাহাতে সোর্থীন ফুলগাছ কিছুকাল শোভা দিতে পারে—কিন্তু বনস্পতি তাহাতে বাড়ে না, তাহাতে বাচে না । তাই ব্রাহ্মসমাজের শাখাপ্রশাখার মধ্যে শীর্ণতা, তাহার পুষ্পপল্লবের মধ্যে শুষ্কতা উত্তরোত্তর অধিক করিয়া দেখা দিতেছে । এইরূপে চিরস্থায়ী বিরোধের ভাবে পৈতৃকসমাজের মধ্যে আপনাদিগকে প্রাণপণে পৃথক করিয়া রাখিলে স্বাস্থ্য কখনই থাকে না, ধৰ্ম্ম প্রত্যহই পীড়িত হইতে থাকে। যে ব্রহ্মোপাসনার দ্বারা এই বিচ্ছেদবিরোধ প্লাবিত হইয়া একেবারে লুপ্ত হইয়। যাইতে পারে -- যে ব্রহ্মোপাসনার দ্বারা সাম্প্রদায়িক বালুতটকে উদ্বেলিত করির দিয়া আমাদের হৃদয়ের উদার প্রবাহ দেশের সর্বত্র অবাধে প্রবাহিত হইতে পারে, অামি ব্রাহ্মসমাজে । ব্রাহ্মসমাজে নহে, আমাদের সর্মাজে, হিন্দুসমাজে, সেই ব্রহ্মোপাসনা একাত্তমনে প্রার্থনা করি। আমি জানি, মন্ত্রোচ্চারণই ব্রহ্মোপাসনা নুহে, সাকার-নিরাকার-বাদসম্বন্ধে বিশেষ কোনো মতকে স্বীকার করাই ব্রহ্মোপাসনা নহে । আমি জানি, হিন্দুসমাজে