পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গদর্শন । - ۰ تا . [ ৩য় বর্ষ, জ্যৈষ্ঠ। পাখিগুলিকে দেখিয়া বউ খুসি আর চাপিয়া রাখিতে পারে না ! এমন উপহার সে কখনো • কাহারো কাছ হইতে পায় নাই । স্বামী যে অনাবশুক নহে, তাহ এইরূপ উপায়ে ক্রমে ক্রমে বুঝিতে পারা যায়। এই পাখিগুলি লইয়া রমেশের সঙ্গে তাহার বধুর পরিচয় বাড়িয়া উঠিতে লাগিল । বিদেশী পাখীদের খাইবার উপযুক্ত বীজশস্ত রমেশ কলিকাতা হইতে আনাইয়া থলিতে করিয়া নিজের কাছেই রাখিয়াছিল । প্রত্যহ দুইবেলা যথাপরিমাণ আনিয়া সে পাখীদিগকে পরিৱেষণ করিত । কি করিয়া মানের আয়োজন করিতে হয়, বধুকে সে-সম্বন্ধে রমেশ উপদেশ ও সাহায্য করিত । রমেশ এম্‌নি কৌশল অবলম্বন করিল, যাহতে পক্ষিপালনকার্য্যে সৰ্ব্বদা তাহার সাহাষ্য ব্যতীত চলা অসম্ভব হইয়া উঠিল । এই উপায়ে কথাবাৰ্ত্তা সুরু হইল । ভয়ে মিলিয়া অনেক আলোচনা কয়িয়া প্রত্যেক পার্থীর নামকরণ করিল। কোন পার্থীটা পুরুষ, কোনটা স্ত্রী, তাহ লইয়া তর্ক এতদুর যাইত যে, রমেশ এবং তাহার প্রাণিতত্ত্ববিদ্যা যদি হার না মানিত, তবে ঝগড়া হইতে পারিত ! যে পার্থীয় ডানায় রংচং বেশি ও সুন্দর দেখিতে, তাহাকে বালিকা কোনমতেই পুরুষ বলিয়া স্বাকার করিতে চাহিত না—দুৰ্ব্বল স্বামী : বিজ্ঞানের সাহায্যে সত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা না করিয়া পাখিগুলির শাস্ত্রবিরুদ্ধ নামকরণই শিরোধাৰ্য্য করিয়া লইত । . বধু একএকদিন অত্যন্ত উদ্বিগ্নচিত্তে চোখ ছলছল করিয়া, রমেশকে আসিয়া ৰলিত, “পুণ্ডরীক আজ কিছু{াইতেছে না, ও বোধ হয় মরিয়া যাইবে !” কোনদিন বা তাহার মহাশ্বেতা বিকাল হইতে ডানার মধ্যে মুখ গুজিয়া ঘুমাইত, সেটা তাহার পক্ষে অত্যন্ত আশঙ্কার কারণ হুইয়া উঠিত । রমেশ এইরূপে তাহার অনেক স্বখদুঃখের ভাগী হইয়া উঠিল ! তাহাদের বৃহৎ দ্বিজপরিবারে ইতিমধ্যে দুইএকটা শোকাবহ ঘটনা ও ঘটিয়াছে । দুইএকটা পার্থী মারা ও গিয়াছে। বালিকা আহার তাগ করিয়া কাদিয়া চোখ ফুলাইয়াছে । তখন সাস্বনাকার্য্যে রমেশকে অনেক সময় দিতে হইয়াছে । Vo এইরূপে প্রায় তিনমাস অতীত হইয়া গেল । বৈষয়িক ব্যবস্থা সমস্ত সমাধা হইয়া আসিল । প্রাচীনারা তীর্থবাসের জন্ত প্রস্তুত হইলেন । প্রতিবেশিমহল হইতে দুইএকটি সঙ্গিনী নববধূর সহিত পরিচয়স্থাপনের জন্ত একটু একটু অগ্রসর হইতে লাগিল । রমেশের সঙ্গে বালিকার প্রণয়ের প্রথম গ্রস্থি অল্পে অল্পে অট হইয়া আসিল । o এখন সন্ধ্যাবেলায় নির্জন ছাদে খোলা আকাশের তলে দুজনে মাছর পাতিয়া বসিতে আরস্ত করিয়াছে । রমেশ পিছন হইতে হঠাৎ বালিকার চোখ টিপিয়া ধরে, তাহান্ন মাথাটা বুকের কাছে টানিয়া আনে, বধু যখন রাত্রি অধিক না হইতেই না থাইয়া ঘুমাইয়া পড়ে, রমেশ তখন তাহাঁকে ললাটে চুম্বন করিয়া জাগাইতে চেষ্টা করে, বালিকা এই মৃদ্ধ উপায়ে না ‘জাগিলে নুানাবিধ উপদ্রবে তাহাকে সচেতন করিয়া তাহার বিরক্তিতিরস্কার লাভ করে। ক্রমে তাহাকে অল্পে