পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় সংখ্যা । ] বাজে খরচ । ૧૭ আমাদের ধন্যবাদার্থ হইয়াছেন। পতিত জীতে আবাদ করিয়া, জঙ্গলজাত দ্রব্যকে ব্যবহার্য্য করিয়া এবং সামান্ত সামান্ত শিল্পেীস্নতি করিয়া তাহারা ধনাগমের নুতন নুতন পন্থা আবিষ্কার করিতেছেন, কিন্তু কেবল অর্থে পার্জনের অভাবেই কি লোকে দরিদ্র হয় ? সঞ্চিত বা -অর্জিত অর্থের বৃদ্ধি ও সৎপাত্রে দান (অথবা সদ্ব্যয়) করাও অবশুকৰ্ত্তব্য । বার্তাশাস্ত্রকার বলিয়াছেন— “অলব্ধঞ্চৈব লিন্সেত লক্কং রক্ষেদবেক্ষয় । . রক্ষিপ্তং বন্ধয়েৎ সম্যক বৃদ্ধং তীর্থে নিক্ষিপেৎ " অর্থাৎ অলব্ধ ধন লাভ করিতে ইচ্ছা করিবে, লব্ধধন যত্নে রক্ষা করিবে ; রক্ষিত ধন সম্যকপ্রকারে বৃদ্ধির চেষ্টা করিবে এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ধন সৎপাত্রে নিক্ষেপ করিবে । 象 আহার্য্য ছন্ম ল্য হওয়াতে আমাদের দেশের গৃহস্থগণের অর্থকষ্ট বাড়িয়া উঠিয়াছে, সন্দেহ নাই। কিন্তু একটু বিবেচনা করিয়া দেখিলেই বুঝিতে পারা যায় যে, আহাৰ্য্য আমরা যত ছৰ্ম্ম ল্য মনে করি, তত দুৰ্ম্ম ল্য হয় নাই । রৌপ্যমুদ্রা পুৰ্ব্বাপেক্ষ যথেষ্ট সুলভ হওয়াতে আন্তান্ত দ্রব্যকে আমরা অতিশয় দুৰ্ল ল্য বর্গিয়া মনে করি । ত্রিশবৎসর পূৰ্ব্বে যে রাজমিস্ত্রি চারআনা পয়সায় সমস্তদিন কাজ করিত, আজ, সে অাটআনা পয়সায় কাজ করিতে ইতস্তত করে ; কিন্তু যখন সে চার আনায় কাজ করিত, তখন একমন চাউলের দাম ছিল ২২ টাকা অথবা ২॥৪ টাকা, আর এখন সেই চাউলের দাম ৪২ টাকা অথবা ৫২ টাকা হইয়াছে । অর্থাৎ তখন সে সমস্তদিনের পরিশ্রমে ৪সের চাউলের মূল্য সংগ্ৰহ করিত, এখনও সে সেই সমস্তদিন পরিশ্রম করিয়া ৪সের চাউলের মূল্য সংগ্ৰহ করে ; কিন্তু পুৰ্ব্বাপেক্ষ তাহার আর্থিক কষ্ট অনেক অধিক, কারণ তাহার বাজে খরচটা যথেষ্ট বৃদ্ধি পাইয়াছে। এই বাজে খরচটা যদি পিত্তলকীসার তৈজসপত্র অথবা সোনার নথ, রূপার পৈচাতে পর্য্যবসিত হইত, তাহা হইলে বরং মনকে প্রবোধ দিতে পারিতাম যে, তাহার একটা অসময়ের সংস্থান হইল ; কিন্তু বাজে খরচটা কি সেদিকে হয় ? তাহার পোষাক-পরিচ্ছদ দেখিলে বুঝিতে. পারা যায়, তাহার সংসারে হাহাকার কেন ঘোচে ন} । - আমাদের পোষাকে আজকাল কত বাজে খরচ হয়, তাহ ভাবিয়া দেখা উচিত । লেখকের পরিচিত এক কায়স্থসন্তান মাসিক ৩৫২ টাকা বেতনে কলিকুণতার কোন আপিসে কৰ্ম্ম করেন। সে বৎসর তিনি পূজার সময় তাহার ৭বৎসরের কহ্যার জন্ত মল্লিক কোম্পানির দোকান হইতে ২২২ টাকায় একটা জামা ক্রয় করিয়াছিলেন । এত টাকা কেন খরচ করিলেন জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বলিলেন, “একটা মেয়ে, আর প্রতি বৎসর ত দিতে পারিব না, তাই একবার কষ্ট করিয়া দিলাম।” যেন ৩৫২ টাকার কেরাণীর কন্থার ২২২ টাকার জামা একটা অপরিহার্য্য পরিচ্ছদ, তাই কায়ক্লেশে কোনরকমে একবার একটা দিলেন । না দিলে তাহার ৭ বৎসরের কন্ত। সমাজে মুখ দেখাইতে পারিত না । যাহাকে সাজাইবার জন্য এই দরিদ্র অৰ্দ্ধভুক্ত কেরাণীর একমাসের অৰ্দ্ধেকেরও অধিক কষ্টার্জিত