পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দশম খণ্ড.djvu/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বরেন্দ-ভ্ৰমণ । (مv সোণার গৌরাঙ্গ । কুমারপুরের অনতিদূরে, পদ্মাবতী-তীরে, বরেন্দ্র তত্ত্বাতুসন্ধানসমিতির দ্বিতীয় “জয়স্কন্ধবারের” স্থান নিদিষ্ট হইয়াছিল। তাহ। প্রথম “জয়স্কন্ধাবার’ হইতে পাঁচ ক্রোশ মাত্র। কিন্তু প্রতুবে যাত্রা করিয়াও, এই পাঁচ ক্রোশ অতিক্রম করিতে মধ্যাহ কাল অতিক্রান্ত হইয়া গেল । সে দিন আকাশে মেঘ ছিল, প্রান্তর মধ্যে বায়ু প্রবাহের অভাব ছিল ন। তথাপি নানাস্থান পরিদর্শন করিতে গিয়া, সাহিত্যিকগণ পরিশ্রান্ত হইয়া পড়িয়াছিলেন। এখন সে সকল স্থনে জনসংখ্যা হ্রাস প্রাপ্ত হইতেছে ; কোন কোন পুরাতন জননিবাস প্রান্তর-ভূমিতেও পরিণত হইয়াছে। তথাপি তাহার সকল স্থানই ভাল করিয়া পরিদর্শন করিবার প্রয়োজন ছিল। কারণ, যাহ। এক সময়ে একটি সম্পন্ন রাজনগর ছিল, তাহাই কালপ্রভাবে বহুসংখ্যক গণ্ড গ্রামে এবং নির্জন প্রান্তরে পরিণত হইয়াছে । পলাশবাড়ীর পাশ্বে পালপুর-ধরমপুরের পুরাতন পরিখার চিহ্ন এখনও সে কালের সেনানিবাসের অবস্থান স্থচিত করিতেছে। দক্ষিণে একটি প্রান্তর এখনও “গড়খাই” নামে মানচিত্রে লিখিত হইয়৷ আপিতেছে। কিন্তু নিকটবৰ্ত্তী গ্রামের লোকে এখন আর সে সকল স্থানের - জনশ্রীতির সন্ধান প্রদান করিতে পারে না । কেবল একটি জনশ্রুতি এত কালেও সম্পূর্ণ রূপে বিলুপ্ত হইতে পারে নাই ; তাহা হিন্দু মুসলমান সকল শ্রেণীর অধিবাসীর মধ্যেই সমানভাবে প্রচলিত আছে। তাহা এই ;– “এক সময়ে কুমারপুরে কুমার রাজা নামে এক রাজা বাস করিতেন ; তাহার পর বিজয়নগর নামক স্থানে বিজয় রাজা নামে আর এক রাজা বাস করিয়াছিলেন । বিজয় রাজার দুই ভ্রাত, শী তল রাজা এবং উদয় রাজ, নিকটবৰ্ত্তী শীতলপুরে এবং উদয়পুরে বাস করিতেন । এই সকল স্থানে তঁহাদের রাজবাড়ীর কিছু কিছু চিহ্ন এখনও দেখিতে পাওয়া যায়।” এতক্ষণে সাহিত্যিকগণ বুঝিলেন,—দেওপাড়ায় “শীতল-সহর” নামক যে তলটি দেখিয়া আসিয়াছেন, তাহা বিজয় রাজার ভ্রাতা শীতল রাজার নামের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। তখন কৌতুল বড় প্রবল হইল ; –কুমারপুর আর কত দূরে,—সকলে পুনঃ পুনঃ সেই কথাই জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন। ক্রমে একটি বিস্তৃত প্রান্তরের অপর প্রান্তে কুমারপুর দেখিতে পাওয়া গেল । তাহা তখনও বহু দূরে । নিকটে, সম্মুখে, উভয়পাশ্বে, কেবল জনশূন্ত প্রান্তরভূমি, তাহার মধ্যে তল্পের পর তল্প। এই সকল তল্ল এখন আর বঙ্গসাহিত্যে সমাদর লাভ করে না। কিন্তু একদিন ইহারাই বঙ্গকবির কল্পনা প্রবাহে কত ভাব-তত্ত্বঙ্গ সঞ্চারিত করিয়া দিত ।