পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দশম খণ্ড.djvu/৪৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গদর্শন [ ১৩শ বর্ষ, কাৰ্ত্তিক, ১৩২০ مناب\) নিত্য তত্ত্ব । পরমার্থতঃ বিশ্বে তত্ত্ববস্তু নিত্যভেদ স্বীকার করিয়াও, কখনও ইছাদের এক, দুই নাই, তাহাই ব্ৰহ্মবস্তু। এই স্বাতন্ত্র্যে বিশ্বাস করেন নাই, কেশবচন্দ্রের ব্ৰহ্মই বিশ্বের একমাত্র কারণ ৷ ব্ৰহ্মই সিদ্ধান্তেও তত্ত্ববস্তু এক, দুই বা তিন নছে । জগতের নিমিত্ত-কারণ, ব্ৰহ্মই ইহার উপাদানকারণ । সুতরাং—সদেব ইদং অগ্র আসীৎ একমেবাদ্বিতীয়ং । রাজা শঙ্কর-বে দান্তমতাবলম্বী ছিলেন । মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ সে সিদ্ধাত্ত গ্রহণ করেন নাই । রাজার ব্রাহ্মধৰ্ম্মের চরম সাধ্য ছিল— কৈবল্য । মহষি জীবব্রহ্মের নিত্যভেদ স্বীকার করিয়া, নিত্যকাল জীব ব্ৰহ্মসত্তায় নিমগ্ন হই স্থা, জ্ঞান-গ্ৰেম কৰ্ম্ম-যোগে তাহার সঙ্গে যুক্ত থাকিবে, ইহাকেই ব্রাহ্মধৰ্ম্মের চরম সাধ্য বলিয়া গ্রহণ করেন। ব্ৰহ্ম জীব ও জগৎ হইতে ভিন্ন । কিন্তু ইহা স্বগতভেদমাত্র, স্বতন্ত্রভেদ নহে । সুতরাং জীব ও জগৎ উভরই ব্ৰহ্ম হইতে উৎপন্ন হইয়া, ব্রহ্মেতেই স্থিতি করে, এবং ব্রহ্মের প্রতিই নিত্যকাল গমন করে। অতএব, অদ্বৈতবাদী না হইয়াও, ব্ৰহ্মই যে জগতের নির্মি ও কারণ ও উপাদানকারণ, মহৰ্ষিও কোনও দিন এ কথা অস্বীকার করেন নাই । ‘ইদং বা অগ্ৰে নৈব কিঞ্চিদাসীৎ”—“সদেব, সৌম্য ইদমগ্ৰ আপীৎ একমেবাদ্বিতীয়ং”—মহর্ষি ও এই সকল শ্রুতি উদ্ধার করিয়া তার ব্রাহ্মধৰ্ম্মগ্রন্থে, ব্ৰহ্মকেই একমাত্র পরমভক্তরূপে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার সময়ের ব্রহ্মসঙ্গীতেও ইহার প্রমাণ পরিচয় পাওয়া যায় । না ছিল এ সব কিছু, আঁধার ছিল অতি, ঘোর দিগন্তপ্রসারী। ইচ্ছা হইল তব, ভাস্ক বিরাজিল, छग्न छग्न मश् िभl cङामांब्रि । কেশবচন্দ্র ঈশ্বরের সঙ্গে জীব ও জড়ের হইতেই এই বহুর সৃষ্টি জীব ও জগৎ সেই এক অদ্বৈত ব্রহ্মেরই প্রকাশ । জীব তাছারই চিৎকণা ৷ জড় তাহারই চিন্তাঘন । ইহাই ব্রাহ্মসমাজের মূল সিদ্ধান্ত । তার এই অদ্বৈতসিদ্ধান্তের সঙ্গে অবতারবাদের কোনও ঐকান্তিক বিরোধ যে কেবল নাই, তাহা নহে ; ফলতঃ এই অদ্বৈত ব্রহ্মসিদ্ধান্ত স্বীকার করিলে, কোন ও না কোনও আকারে, অবতীরবাদ ও মানিতেই হয় ; না মানিলে, জীব ও জগতের সত্তার কোনও ভিত্তি ও অর্থ খুজিয়; পাওয়া যায় না । ব্ৰহ্মই যদি জগতের একমাত্র পরমতত্ব ও চরমবস্তু হন, বিশ্বের অনাদি আদিতে ব্ৰহ্মাতিরিক্ত কোনও কিছু ছিল না, ইহাই যদি সত্য হয় ; সেই ব্রহ্মবস্তু হইতেই সমুদায় বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ড উৎপন্ন হইয়া, তাহারই মধ্যে স্থিতি করিতেছে এবং অস্তিমে তাছাতেই প্রবেশ করে, ব্রাহ্মধৰ্ম্মগ্রন্থে উদ্ধৃত এই শ্রতিবাক্য যদি মিথ্যা না হয় ; তাহা হুইলে এই ব্ৰহ্মাণ্ডকে ব্রহ্মেরই প্রকাশ ; তাহারই রূপান্তর বলিতে হয়। অর্থাৎ ব্রহ্মই জীব ও জগৎরাপে প্রকাশিত হইয়াছেন,—এই কথা অস্বীকার কর। অসম্ভব হয় । আর ইহা ও তো এক প্রকারের অবতার । জীব ও জগৎরূপে প্রকাশিত হইয়াও জীব ও জগতের ধৰ্ম্ম ব্ৰহ্মকে সসীম বা সাকার করিতে পারে না । সেইরূপ ঈশ্বর দেং ধারণ করিয়া অবতার স্বীকার: করিলেও, দেহের ধৰ্ম্ম তাহাকে স্পর্শ করে সেই এক হইয়াছে।