পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দশম খণ্ড.djvu/৪৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭ম সংখ্যা ! ار এই চক্ষেই দেখিতেন। অতটুকু অবতারবাদ স্বীকার করাতে র্তাহীদের ব্রাহ্মধৰ্ম্মের কোনও ব্যাঘাত হয় নাই । অতএব ব্রাহ্মমতের সঙ্গে প্রকৃতপক্ষে বৈষ্ণবীয় অবতায়বাদেরও ষে একটা ঐকান্তিক ও সাংঘাতিক বিরোধ আছে, এ কথা বলা যায় না । ঈশ্বরের অবতার হয় নাই, হইবে না, হইতে পারে না,– ব্রাহ্মগণ যে এ কথা বলেন, ইহা তাহাদর আত্মপ্রত্যয়ের বা স্বল্প ভূতির উপরেও প্রতিষ্ঠিত নহে ; মানবজ্ঞানের মৌলিক প্রকৃতি হইতেও এই মত প্রস্থত হয় না । ইহা স্বতঃ প্রামাণ্য সত্য নহে। অনুমানপ্রতিষ্ঠ সত্যাভাস মাত্র । আর অনুমানের উপরে যে সিদ্ধান্তের প্রতিষ্ঠা হয়, তাহাকে বর্জন করিতে হয় না, অতিক্রমই করিতে পারা যায় । ফলতঃ নিম্নাকার ঈশ্বরতত্বের সঙ্গে অবতারবাদের কোন ওই বিরোধ নাই। এই বিরোধ কল্পনা করিতে যাইয়া, আমরা আমাদের ঈশ্বরতত্ত্বকেই স্বল্পবিস্তর সাকার ও বিশিষ্ট করিয়া তুলি ! ঈশ্বরতত্ত্ব যে দেশকালের অতীত,—এবং অতীত বলিয়াই যুগপৎ সমভাবে সৰ্ব্ব কালে ও সকল দেশে বিদ্যমান রহিয়াছেন, এবং একই সঙ্গে প্রকট ও অ প্রকট, তটস্থ ও তুরীয় অবস্থায় বাস করেন, একই সময়ে ব্যক্ত হইতে এবং অব্যক্ত রহিতে পারেন,—এ সকল কথা ভুলিরা গিয়াই, ঈশ্বরের অবতার হয় শুনিলে আমরা শিহরিয়া উঠি । ফলতঃ আমরা ঈশ্বরাবতারের কথা গুনিলে এমনই ভাবি যে ঈশ্বর যদি জুদিয়ায় বা নদীয়ায় অবতীর্ণ হইলেন, তবে সে সময়ে যতক্ষণ ধিগুদেহে বা চৈতন্তদেহে তিনি আবদ্ধ শ্ৰীশ্ৰীকৃষ্ণতত্ত্ব ©ᏄᎼ থাকেন, ততক্ষণ বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ড কি অনাথ হইয়া থাকে ? আর এষ্টজন্তই একেবারে অবতারতত্ত্বটাকে উড়াইয়া দেই । কিন্তু ঈশ্বরের সৰ্ব্বব্যাপিত্বের অর্থ বুঝিলে আর এ খটকা বঁধে না । ঈশ্বর তো বিশ্বময় ব্যাপ্ত হইয়া আছেন । কিন্তু এ ব্যাপ্তি জড়বস্তুর কিম্বা এমন কি আকাশবস্তুর ব্যাপ্তির মতনও নহে। তড়াগগর্ভে যেমন জলরাশি পরিব্যাপ্ত হইয়া থাকে, সেইরূপভাবে ঈশ্বর ব্রহ্মাগুময় ব্যাপিয়া আছেন, তাহ নয় । সৰ্ব্বত্র পরিব্যাপ্ত হইয়াও সৰ্ব্বত্রই তিনি যুগপৎ পরিপূর্ণরূপে, আত্মস্বরূপে বিদ্যমান রহিয় ছেন । ঈশ্বরতত্ত্বে ভাগবাটোয়ার করা যায় না । এ তত্ব অখণ্ড, অবিভাজ্য, অদ্বৈত । ঈশ্বর সর্ব এই সমভাে পুর্ণরূপে বিদ্যমান। বিন্দুতে যেমন পূর্ণ সিন্ধুতও সেইরূপ পূর্ণ। এমার্সনের কথায় *fice coloi-He is as perfect in the এই ঈশ্বরতত্ব আমাদের আত্মতত্বেরই মতন । এই যে অম্মদপ্রত্যয়বাচক আত্মবস্তু তাহা এই দেহের সর্বত্র বিদ্যমান রহিয়াছে। আমাদের এই আমি বস্তু, এই প্রাণবস্তু, এই চৈতন্তবস্তু, যে নামেই ইহাকে ব্যক্ত করি না কেন, এই দেহের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সমভাবে অধিকার করিয়া, সকলের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট হুইয়া আছে। কোন একটা অঙ্গ নষ্ট হইয়া গেলে এই বস্তুর হ্রাস হয় না । এ বস্তু যেমনটা ছিল তেমনটাই থাকে। পরিপূর্ণ হইয়া থাকে। যেমন কেশমূলে, সেইরূপ হৃৎপিণ্ডে, দেহের সৰ্ব্বত্র এ বস্তু যুগপৎ পরিপূর্ণরূপে ৰিরাজ করে। এক অঙ্গ হইতে ইহাকে টানিয়া জানিয়া অপর অঙ্গে ইহাকে ফুটাইতে হয় না । atom as in the universe.