পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দশম খণ্ড.djvu/৫০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७२० (घ) তাহাঁর চরিত্রকে অসামান্তত প্রদান করিয়া র্তাহাকে সৰ্ব্ব দুঃখ, সৰ্ব্ব দৈন্ত, সকল প্রলোভন হইতে রক্ষা করিয়া অসাধারণ চরিত্রবলে বলীয়ান কল্পিয়াছিল। তাহার চরিত্রের যাহা কিছু মহত্ব, এই ধৰ্ম্মভীরুতাই তাহার মূল প্রস্রবণ । ংসারচন্দ্রের ধৰ্ম্ম-জীবনের মূল—র্তাহার স্বৰ্গীয় পিতার আদর্শ এবং উপদেশ । বাল্যকালে তিনি প্রতিদিন প্রাতে পিতার সহিত মন্দিরে গিয়া প্রণামাদি করিয়া আসিতেন এবং গৃহে নিজে পিতার অনুকরণে পূজাদি করিতেন। বালকের নিষ্ঠা ও ভক্তি দেখিয়া সকলে মুগ্ধ হইত। যৌবনে তিনি ব্রাহ্মধৰ্ম্মে বিশেষ অনুরাগী হয়েন । তথন বঙ্গদেশে এই নবধৰ্ম্মের যুগ—রাজা রামমোহন রায় যাহার ব্যাখ্যাত ও মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ যাহার সাধক এবং কেশবচন্দ্র সেন যাহার প্রচারক-সেই নবধৰ্ম্মের স্রোত বঙ্গদেশ হইতে স্বদুর আগ্রা পৰ্য্যস্ত পৌছিয়াছিল, তাহার ফলে তখনকার অনেক শিক্ষিত যুবকই আগ্রার নবপ্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মসমাজে যোগদান কয়িতেন, সংসারচন্দ্রও তাহার ধৰ্ম্মানুরাগ লইয়া নিয়মিতরূপে এখানে আসিয়া উপাসনাদি করিতেন । তারপর যখন স্বৰ্গীয় কৃষ্ণবিহারী সেন জয়পুর কলেজের অধ্যক্ষ হইয়া গেলেন, তখন সংসারচন্দ্র প্রভৃতি যুবকগণ র্তাহার প্রতিষ্ঠিত ব্ৰাহ্মসমাজে উৎসাহে যোগ দিলেন। এ সকল কথা আমরা পূৰ্ব্বে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করিয়াছি। জয়পুর ব্রাহ্ম-সমাজ লোপ পাওয়ার পর সংসারচন্দ্র নিজে ব্রাহ্ম-পদ্ধতি অনুসায়ে নিয়মিত উপাসনাদি করিতেন । ইহার কিছুদিন পরে সংসারচন্ত্রের জীবনে বঙ্গদর্শন । ১৩শ বর্ষ, অগ্রহায়ণ, ১৩২০ এক মহৎ পরিবর্তন ঘটিল। র্তাহার ভ্রাতা স্বৰ্গীয় ডাক্তার হেমচন্দ্রের শিক্ষাদাতা এক জন বৈদাস্তিক পাঞ্জাবী সাধুর সহিত সংসারচন্দ্রেয় ধৰ্ম্মালোচনা হইল—বহুক্ষণব্যাপী আলোচনার ফলে তিনি সনাতন হিন্দুধৰ্ম্মে বিশেষ আস্থাবান হয়েন । এই সময় হইতে তিনি ব্রহ্মনিষ্ঠ হিন্দুগৃহীর আদর্শ গ্রহণ করিয়া আপন জীবনে সেই সাধনার পথে অগ্রসর হইয়াছিলেন এবং জীবনের প্রতিকার্য্যে তিনি হিন্দুর সেই আদর্শ অনুসারে চলিতেন । এই ধৰ্ম্মাকুরাগ তাহাকে ঈশ্বরের উপর যে একান্ত নির্ভরতা, যে সাহস, বিপদে যে অটল ধৈর্য্য, এবং প্রলোভনে আত্মরক্ষার যে অসীম ক্ষমতা দান করিয়াছিল— তাহ গৃহীর পক্ষে বিশেষতঃ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিতান্ত সুলভ নহে । তাহার সাহস সম্বন্ধে তাহার সঙ্গীদিগের মুথে আজও নানা প্রকার গল্প শুনিতে পাওয়া যায়। মহারাজ মাধোসিংহ অত্যন্ত শিকার প্রিয়। তিনি পূৰ্ব্বে প্রায়ই রাত্রে ব্যাঘ্র শিকারকরিতে বাইতেন। গভীর বনের ভিতর বৃক্ষের উপর শিকারীদিগের জন্ত কয়েকটি “মাচান’ বাধা হইত। সংসারচন্দ্র শিকার করিতেন না ; কিন্তু তাহাকে সঙ্গে না লইলে মহারাজের চলিত না । মাঝে মাঝে শিকার সম্বন্ধে অন্ত শিকারীদের মহারাজের আদেশ দিবার প্রয়োজন হইত। সংসারচন্দ্রের উপরই সে সকল আদেশ বহন করিবার ভাল্প পড়িত । তাহার সঙ্গীরা বলেন সেই ঘোর অন্ধকারে, গভীর বনের ভিতর যখন প্রতি মুহুর্তে ব্যাস্ত্র আসিয়া পড়ার সম্ভাবনা, সে সময় সংসারচন্দ্র সামান্ত এক গাছি ছড়ি মাত্র হস্তে করিয়া