পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দশম খণ্ড.djvu/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৭২ খ কঙ্কার এই দুঃসময়ে কি আর নিশ্চিন্ত থাকা যায় ! কিন্তু আমরা সত্য কথা বলিব, এখন আর মাসী ছাড়া তারার আপনার কে আছে ? তারার মাসী অপেক্ষ মেসোর সহানুভূতিই কিছু অধিক ! নিজের লোকজন থাকিতে সেই দুধের মেয়ে তারা—দেখা শুনার অভাবে—কষ্ট পাইবে ? না, তা কিছুতেই হইতে পারে না । তারার মেসে পুরুষামুক্রমেয় পুরাতন বাস্তু ভিট এবং পিতৃপুরুষের কৃত, অধুনা জীর্ণ ভগ্ন ঘরগুলি এবং কাংস্য ও মুক্তিকার তৈজস পত্রের মায়া পরিত্যাগ করিয়া সপরিবারে তারার পিতৃগৃহে উপনীত হইলেন । মেসে ও মাপী প্রথম প্রথম কয়েক দিনে তারার প্রতি সস্নেহ ব্যবহারে, গ্রামবাসীদের সহিত আলাপ-আপ্যায়নে, এবং আত্মীয়তায় সকলেরই মন অধিকার করিল। তারার একটা গতি হইল ভাবিয়া সকলেই যেন নিশ্চিন্ত হইল। এ দিকে সাধারণের মনের সঙ্গে সঙ্গে তারার মেসো তারার পৈত্রিক সমস্ত সম্পত্তিও অধিকার করিয়া বসিল,ক্ৰমে মেসে ও মাসীর নিজ মূৰ্ত্তি প্রকাশ পাইতে লাগিল। তার নিজ বাসভূমে পরবাসী হইল ! ইহাঙ্গের সংস্পর্শে বেচারী যেন দিনে দিনে স্পর্শকাতর লজ্জাবতীর মত নিতান্ত সঙ্কুচিত হইরা পড়িতে লাগিল । সে বসন্তের মুকুল যেন করকাঘাতে ভূমিতলে পড়িয়া দিনে দিনে শুকাইতে লাগিল । তারার পেশীবহুল মেসো মহাশয়ের ইfকডাক এবং তাহার নবাগত ভ্রাতভগিনীগণের লম্ফবদ্ধ তাহাকে বিব্রত করিয়া ভূলিল। তারার দেবতার মত মূৰ্ত্তি দেখিয়। দেখিয়া, কুৎসিৎ পুৱকস্তার জননী তারার বঙ্গদর্শন । ১০ম বর্ষ, পৌষ, ১৩১৭ । মাসী বিরক্ত হইয়া উঠিয়াছিলেন । তাহার সে অসন্তোষের তীক্ষকণ্টক তারার কোমল বক্ষকে সৰ্ব্বদাই বিদ্ধ করিতে লাগিল । ३ তার অনেক চেষ্টা করিয়াও কিছুতেই এই হীন পরিবারের সঙ্গে মিশিয়া যাইতে পারিল না । ছেলেরা পাক ও কাদা লইয়া মাতামাতি করিয়া বেড়ায় এবং মেয়ের। কুৎসিৎ ভাষায় পরস্পরকে গলাগলি দেয় ও মারামারি করে, তার কেমন করিয়া তাহাদের সঙ্গে যোগদান কয়ে ? সে দুর হইতে বড় বড় চক্ষু মেলিয়া এই অসংযত উপদ্রব দেখিয়া ভয়ে আড়ষ্ট হইয়া যাইত । তারার মাসী সৰ্ব্বদা তাহাকে শাসাইতেন “দেখে, দেখে, এত তেজ থাকুবে না ।” তারা এ অসুযোগের হেতু কিছু খুজিয়। পাইত না, অনির্দিষ্ট ভয়ে সে শুধু শুকাইয়। যাইত । সুশীল। তারাকে গ্রামের সকলেই স্নেহ করিতেন, তাহার স্নান মুখ এবং অশ্রুসিক্ত চক্ষু দেখিয়া অনেকেই তাহাকে আপনার গুহে ডাকিয় লইয়া গিয় তাহার মাসী মাতা ও মেসে মহাশয়ের ব্যবহারের কথা জিজ্ঞাসা করিতেন। তার কিছুই বলিতে পারিত না। শুধু ছল ছল চক্ষে তাহাদের মুখের দিকে চাহিয়া থাকিত। কোন দিন ব। এক ফোটা অশ্রু সেই শান্ত চক্ষুর প্রান্ত বহিয়া নীরবে গড়াইয়। পড়িত। দেখিয়। সকলেই সহানুভূতি প্রকাশ করিতেন, কেহ বা রুষ্ট হইয়া বলিতেন “তারার ‘বাপের বিষয় খেয়েই মানুষ, তবু হতভাগাল্লা মেয়ে. টাকে একটু যত্ন করে না।” এ সকল*