পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা | এই সরল সত্যটি এখনও ভাল করিয়া প্রতিভাত হয় নাই । ভারত-শিল্পের মূল স্বত্র কোথায়, তাহার আলোচনায় প্রবৃত্ত হইবামাত্র জিজ্ঞাসা করিত্বে ইচ্ছা হয়,--ভারতবর্ষীয় মানবসমাজের মূলপ্রকৃতি কোথায় ? তাহ বাহিরে, ন৷ অত্যন্তরে ? সে প্রকৃতি যে চিরকালই আত্মনিষ্ঠ ছিল, তাহার প্রমাণাবলীর অভাব নাই। যাহারা যখন ভারতভূমিতে আপতিত হইয়াছে তাহারাই ( কিয়ৎকালের মধ্যে ) ভারতবর্ষীয় হইয়া গিয়াছে। প্রবল সমাজের পক্ষে এইরূপে ক্ষুদ্র সমাজকে আত্মসাৎ করিবার ক্ষমতা বৰ্ত্তমান ছিল বলিয়াই, ভারতবর্য বহু বিপ্লবে বিপৰ্য্যস্ত হইয়া, এখনও সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হইয়া যায় নাই। এখনও সেকালএকালের মধ্যে কালগত পার্থক্যই উল্লেখযোগ্য পার্থক্য ;—প্রকৃতিগত পার্থক্য প্রাধান্ত লাভ করিতে পারে নাই। এখনও ভারতবর্যের প্রধান আকাঙ্ক্ষ। বাহিরে নহে, অভ্যন্তরে ,--সাস্তে নহে, অনন্তে ;— পরিদৃগুমান বস্তুতে নহে, অতীন্দ্রিয় মহাসত্বায় । আমরা কিছুই জানিতে পারি না ;– ইহা সত্য হইতে পারে না। আমরা সমস্তই জানিতে পারি ;--ইহাও, সত্য হইতে পারে না"। মানব-জ্ঞানের এই সীমানির্দেশের মধ্যে, তাহার অসীম ক্ষমতার পরিচয় লাভ করিয়া, ভারতবর্ষ অচিন্ত্যকে চিন্তা' করিবার এবং অনিৰ্ব্বচনীয়কে বাক্যে , প্রকাশিত করিবার চেষ্টা করিতে সাহসী হইয়৷ উঠিয়াছিল। এই সাহসেই, প্রাচীন কালের ভারতশিল্পের মূলসূত্র Y S ‘ī ভারতবর্ষ, গণ্ডীর মধ্যে অবস্থান করিতে সম্মত হয় নাই । তাহাকে গণ্ডীর মধ্যে টানিয়া আনিয়া, তাহার ইতিহাস সঙ্কলনের চেষ্ট। বিড়ম্বন মাত্র । ইহা ভারত-শিল্পের ইতিহাসেও স্বাক্ত হইয়া রহিয়াছে। যে সকল দেশে শিল্পকলা, কেবল পরিদৃগুমান আকারকে অবলম্বন করিয়া, আত্মপ্রকাশের চেষ্টা করিয়া আসিয়াছে, সে সকল দেশের শিল্পকলার সহিত ভারতশিল্পকলার জ্ঞাতিত্ব কল্পিত হইতে পারে না। ভারতশিল্পকলা আকারের ভিতর দিয়া ভাব ফুটাই বার চেষ্টা না করিয়া, ভাবকেই আকার-দানের চেষ্টা করিয়াছিল । তজ্জন্য ভারতবর্যের সকল যুগের মূৰ্ত্তিশিল্পেরই মূলপ্রকৃতি এক রূপ ;--তlহ আভাসাত্মক, অনিৰ্ব্বচনীয়ের আভ{স প্রকাশ করিয়াই তাহা কৃতকৃতার্থ। তাহার মূলস্বত্র ভারতবর্ষের অভ্যন্তরেই নিহিত হইয়া রহিয়াছে। কেবল শিল্প-সৌন্দর্য্যের বিচারেই এই মূলস্বত্র আবিষ্কৃত হইতে পারে কি না, তদ্বিযয়ে সংশয়ের অভাব নাই । ভারতবর্ষকে সমগ্রভাবে বুঝিবার পথই প্রকৃত পথ ;–সেই পথে , ভারতশিল্পের মূলস্বত্র আবিষ্কৃত হইবার সম্ভাবনা আছে। তাহ শ্রমসাধ্য বলিয়া, তাহাতে সহসা পদার্পণ না করিয়া, অনেকে প্রতিভাবলেই ভারতশিল্পের ব্যাখ্যা-কার্য্যে ব্যাপৃত হইয়াছেন। শাস্ত্রগ্রন্থ এবং ইতিহাস এইরূপে উপেক্ষিত হইলে, সত্যনির্ণয় করা সহজ হইবে কি না, তাহা ভাবিয়া দেখা কৰ্ত্তব্য। ভারতশিল্পের মূলস্থত্রের সন্ধান লাভ করিতে হইলে,