পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] দিলিয়া কাজ করিতে যাইয়াই যুরোপীয় সমাজে এক প্রকারের পরার্থপরতা ও বিকাশ ইষ্টয়াছে। এইরূপে দেশের জন্য ও দশের জন্য ত্যাগস্বীকার করা যুরোপীয় সভ্যতার ও সাধনার একটী সাধারণ ধৰ্ম্ম হইয়া গিয়াছে। এই ধৰ্ম্মকে আশ্রয় করিয়াই যুরোপের জাতীয় pরিত্রে একটা অতি উদার বিশ্বপ্রেমের আদর্শও ফুটিয়া উঠিয়াছে। টাইটানিকের তিরোপান কালে আমরা এই সকলেরই একটা গতি প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাইয়াছি। ত্যাগের পথে ঘাইয়া ভারত মৃত্যুকে জয় করিয়াছিল। ভোগের পথে যাইয়। যুরোপ মৃত্যুকে তুচ্ছ করিতে শিপিয়াছে । ভারত বিশ্বের সঙ্গে একাত্ম সাধন করিয়া আপনি সুখদুঃপের অতীত হইয়াও জগতের সুখকেই আপনার মুখ ও জগতের দুঃখকেই আপনার দুঃখ বলিয়। গ্রহণ ও ভোগ করিবার নিগৃঢ় সঙ্কেত লাভ করিয়াছিল। এই মহাপরিনির্বাণের সুখতত্ত্ব যুরোপ জানে না। এই ত্ৰিগুণাতীত অবস্থার সংবাদ আধুনিক সভাত৷ রাপে না । কিন্তু আপনি সুপ চাহে বলিয়াই, যুরোপ অপরকে ও সুখী করিতে চাহে এবং আপনি দুঃখের তীব্র হলাহল পান করিতেছে বলিয়াই, সে বিষের যাতন জানে এবং তাহারই জন্য জগতের দুঃগীতাপীর সঙ্গে সমবেদন প্রকাশ করিতে পারে এবং সেই দুঃখ ; সেই বেদন উপশম করিবার জন্য কখন ৪ কোন ও শ্রম বা ত্যাগ স্বীকার দুঃখের টাইটানিকের তিরোধান Ꮌ©Ꮌ করিতেও বিমুখ হয় না। টাইটানিকের তিরোধানে কি করিয়া মৃত্যুকে তুচ্ছ করিতে হয়, তাহাই দেখিলাম। কেমন করিয়া অপরের মুখে স্বখাতুভব ও অপরের দুঃখে দুঃখানুভব করিতে হয়, তাহীও দেখিলাম । কাম্য বস্থর অন্বেষণ করিতে যাঈয়া ও যে তাসাধারণ সংযমের প্রয়োজন হয় এবং এই অপরিহার্য্য সংযমের মধ্য দিয়াই যে অতি উচ্চ অঙ্গের মন্ত্যত্বও ফুটিয়া,উঠতে পারে এবং এই পথে যাইয়া ও যে স্বকৃতিসম্পন্ন লোকে ক্রমে নিষ্কাম কৰ্ম্মযোগ লাভ করিতে পারেন, টাইটানিকের তিরোধানে ইহা ৭ দেপিলাম। এ সকল দিকেই আধুনিক যুরোপীয় সাধনা অসাধারণ উৎকৰ্ষ লাভ করিয়াছে। টাইটানিক আধুনিক যুরোপের অসাধারণ বিদ্যাবুদ্ধির অন্যন্ত্ৰম নিদর্শনরূপে গঠিত হইয়াছিল এবং যুরোপীয় কৰ্ম্মিগণের অসাধারণ রুতিত্বের পরিচয় প্রদান করিবার জন্য সগৰ্ব্বে সাগর বক্ষে ভাসিয়াছিল। আর যুরোপের ইতসৰ্ব্বস্ব ভোগপ্রধান সাধনার মূলেও সে ভাগবতীপীলাশক্তি প্রচ্ছন্ন থাকিয়, তাঙ্গরই ভিতর দিয়া শ্রেষ্ঠতম যোগশক্তি ও মোক্ষসম্পদ ফুটাইয়া তুলিতেছেন, ইঙ্গ প্রমাণ করিয়াই টাইটানিক অতল সাগরতলে অন্তষ্ঠিত হইয়াছে। টাইটানিকের তিরোধানে যুরোপ মহীয়ান ও জগং লাভবান হইয়াছে।