পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হিন্দুর ধর্মের বিচিত্ৰত হিন্দু যাঙ্গকে ধৰ্ম্ম বলেন সে বস্তু সনাতন। কালবিশেষে তাহার উৎপত্তি হয় নাই। দেশ বিশেষে সে ধৰ্ম্ম আবদ্ধ হয় না । তাহা কেবল হিন্দুরই ধৰ্ম্ম নহে, মানব মাত্রেরই তাহা ধৰ্ম্ম । এই জন্য সে ধৰ্ম্ম সৰ্ব্বতোভাবেই সাৰ্ব্বভৌমিক ও সাৰ্ব্বজনীন। ঐ ধৰ্ম্মের নিগূঢ় তত্ব বেদে ব বাইবেলে, আভেস্তায় বা তালমুদে, ত্রিপিটকে ঝ কোরাণে নাই। কারণ—“বেদা: বিভিন্নঃ” । তাঙ্গ স্মৃতিতে নাই ; কারণ “ স্মৃতয়ে বিভিন্নঃ ”। তাহা মুনিজনের মীমাংসায় নাই, কারণ “ নাসে মুনিৰ্য্যস্য মতং ন ভিন্নং ” । সে ধন্মের তত্ত্ব “গৃগয়াং নিহিতং ”—মানব প্রকৃতির মূল নিহিত আছে। আর গৃহপ্রতিষ্ঠিত বলিয়াই এ ধৰ্ম্ম সনাতন ও সাৰ্ব্বউনীন। এই ধৰ্ম্মবস্তু প্রত্যেক মনুষ্যের মূল প্রকৃতি হইতেই ফুটিয় উঠে ; বাহির হইতে কাঠারো উপরে আসিয়া চড়িয়া বসে না । আর সকল মানুষের প্রকৃতি যখন সমান নহে, তথল সকলের ধৰ্ম্মও কখনই এক হইতে পারে না । হিন্দু এই সত্যটা অতি দৃঢ় করিয়া রিয়াছিলেন বলিয়া, কখনই খৃষ্টীয়ান বা মুসলমানের মত, আপনার ধৰ্ম্মকে অপরের উপরে চালাইবার চেষ্টা করেন নাই। ইহাতে হিন্দুর মানবহিতৈষীর অভাব বুঝায় না ; কিন্তু তার গভীর অধ্যাত্মদৃষ্টিরই প্রমাণপরিচয় প্রদান করে । ফলতঃ হিন্দু যে মানুষকে কেবল ভাল বাসেন, তাহা নহে ; মানুষকে জাতিবর্ণ নির্বিশেষে ভক্তি করাই তার সাধনের একটা R মুখ্য অঙ্গ। হিন্দুর চক্ষে মানুষ কেবল মানুষ নহেন, কিন্তু নারায়ণ। হিন্দু সাধুসন্ন্যাসীকে কেহ প্রণাম করিলে, “ নমো নারায়ণায়” বলিয়া, তাহারা সে ব্যক্তির প্রতাভিবাদন করেন। এই রীতিটা জগতের আর কোথাও আছে বলিয়া জানি না। খৃষ্টীয় জগতে মানুষের মর্যাদা অশেষ প্রকারে বাড়িয়ছে, স্বীকার করি। “কোনো মাতুম, তার সাংসারিক অবস্থা ও সামাজিক পদমর্য্যাদা যাই থাক বা না থাক না কেন, আমা অপেক্ষা চীন নহে”— ইঙ্গ সাধন করাই খৃষ্টীয় সভ্যতার মানব-প্রেমের আদর্শ। খৃষ্টীয় ধৰ্ম্মে, যিশুখৃষ্ট্রের উপদেশে, এতদপেক্ষ একটা উচ্চতর আদর্শেরো আভাস পাওয়া যায়, স্বীকার করি। মানুষের সেবাতেই যে খৃষ্ট্রর সেবা হয়, পৃষ্ঠায় সাধনায় এ ভাবটা ফুটিয়াছে, মানি । কিন্তু তথাপি মানুষ যেমনটা আছে, ঠিক সেই ভাবে থাকিয়াই যে আমার অপেক্ষ বড়, আমার ভক্তির পাত্র, আমার ভজনার আধার ও অবলম্বন, হিন্দুর ভক্তি-সাধনেতেই কেবল এই ভাবটী যেমন ফুটিয়া উঠিয়াছে, জগতের আর কোথাও তেমন ভাবে ফুটিল উঠে নাই। এই জন্য মানুষের প্রতি যে হিন্দুর কখনো ভালবাসার অভাব ছিল বা আছে, তাহা নহে। তবে ভালবাসার অত্যাচারটুকু নাই, ইহা স্বীকার করিতেই হইবে । খৃষ্টীয়ান যখন আমাকে ভালবাসেন, তখন তিনি আমাকে র্তারই মত করিয়া তুলিবার জন্ত বাগ্র হন। র্তার ধৰ্ম্মট যাতে আমি গ্রহণ করি, তার