পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌb←8 অবস্থায় যে সকল গ্রন্থ প্রাদেশিকত|-বর্জিত এবং বিশুদ্ধ সাধু ভাষায় লিখিত, যে সকল গ্রন্থের ভাব কর্ণে তরল মাধুর্য উৎপাদন অপেক্ষ হৃদয়ে বিমল আনন্দ এবং তৃপ্তি সম্পাদনে অধিক সমর্থ, যে সকল গ্রন্থের ভাল কেবল শ্রুতি মাত্রে পর্য্যবসিত না হইয়া হৃদয়ে পাষাণাস্কবং স্থায়ী স্মৃতি মুদ্রিত করে, সেই রূপ গ্ৰন্থকেই আমাদের আদর্শ করিয়া লইতে হইবে । বৈচিত্র্যের চটকে মুগ্ধ কষ্টয়া নানাগ্রন্থকারের ‘ পশ্চাতে দৌড়িলে আমর কাহাকেও ধরিতে পারিব না, কাহারও গুণ আয়ত্ত করিতে পারিব না, স্বতরাং তাঙ্গদের অনুকরণ করিতে যাইয়। আমরাও ভাষায় বৃহস্পতি হইয়ু পড়িব, এক এক জনে এক একটী থেচরান্ন প্রস্তুত করিয়া বসিব । কিন্তু পূৰ্ব্বেই বলিয়াছ, বঙ্গ-ভাব এবং বঙ্গ-সাহিত্য এখন আমাদের জীবন-কাঠি মরণ-কাঠি, এ সময়ে এই জীবনের সম্বলকে আমরা আমোদের, তামাসা বা খেয়ালের পিষয় করিতে পারি না। জীবিত কাহার ও নাম লইয়া বিপন্ন হইতে চাই না ; কিন্তু মৃতের নাম গ্রহণ নিরাপদ, কেননা তাহার এখন ষ্টিংসদ্বেষের বাহিরে, তাহার এখন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আমরা জীবন গঠনের জন্য, জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বঙ্গ-ভাষা এবং বঙ্গ-সাহিত্যকে অবলম্বন করিতে যাইতেছি, সুতরাং ভাষা এবং সাহিত্যের আদর্শ অবলম্বন করিতে আমাদিগকে বিশেষ সতর্ক হইতে হইবে । বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার এবং তারীনাথ যদিও সংস্কৃতকে ভিত্তি করিয়া বাঙ্গাল লিখিয়াছেন, যদিও তাহীদের অনুকরণ অসঙ্গত এবং হাস্যকর হইবে, তথাপি তাহদের গ্রন্থ অতি আদর বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ষ, আষাঢ়, ১৩১১ করিয়া আমাদিগকে মধ্যয়ন করিতে হইবে। গ্রন্থপাঠ কেবল অনুকরণের জন্য নহে, জ্ঞানের পুষ্টিসাধনই ইহার প্রধান লক্ষ্য । আমি আশা করি, এই উপত্যকার শিক্ষিতদিগের মধ্যে এমন কেহই থাকিবেন না, যিনি জিজ্ঞা করিলে বলিবেন, কালীপ্রসঙ্গের মহাভারত হেমচন্দ্রের রামায়ণ, মধুসূদনের মেঘনাদব হেমচন্দ্রের বৃহসংহার, নবীনচন্দ্রের পলাশীর যুদ্ধ, তারকনাথের স্বর্ণলতা, শ্ৰীশচন্দ্রের শক্তি কানন বা বঙ্কিমচন্দ্রের চন্দ্রশেখর পড়েন নাই। প্রাচীন গ্রন্থকারম্বিগের গ্রন্থপাঠ করিব, তাছাদের নিকট জ্ঞানলাভ করিবার জন্ত , কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থ পড়িব, তাহর জ্ঞান তাঙ্গরি ভাব, এবং তাহার ভাষা আয়ত্ত করিবার জন্য । এই সঙ্গে বঙ্গীয়-সাহিত্য পরিষদের প্রথম সভাপতি স্বৰ্গীয় রমেশচন্দ্র দত্তকে ও বিস্তৃত হইতে পারি না । তাহার শতবর্ষ চিরদিনই বঙ্গীয় যুবকের চিত্তে স্বদেশ প্রীতির উৎস উৎসারিত করবে। কিন্তু আজিও বঙ্কিমচন্দ্ৰই বঙ্গ-সাহিত্যে সম্রাটের আসনে আসীন রহিয়াছেন, কবে কোথায় এ আসনের উপযুক্ত উত্তরাধিকারী জন্মিবেন, তাহা অনুমান করা আমাদের সাধ্যাতীত । বঙ্কিমের ভাষা, ভাব, জ্ঞান এবং সৰ্ব্বোপরি স্বদেশ-প্রীতি কেবল আমাদের কাণের ভিতর দিয়া তরতর করিয়া চলিয়া যায় না, কিন্তু আমাদের প্রাণের মধ্যে কিছু না, কিছু অঙ্কিত করিয়া রাখিয়া যায়। সহজ, সরল, অথচ বিশুদ্ধ সাধুভাষ বঙ্কিমের লেখনী-মুখে প্রস্থত হুইয়া আমাদের প্রাণকে স্পশ করে ; এতক্ষণ কি পড়িলাম এবং কেন পড়িলাম ? ইত্যাকার প্রশ্ন উদিত হইয়া আমাদের মনকে