পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] ব্যথিত করে না । ,বঙ্কিমের সম্বন্ধে কেবল একটা আপত্তি এই, তাহার উপন্যাসের ভাষা পাঠ করিয়া তরলমতি যুবকের সহসা তাহার গভীর অর্থ পরিগ্রন্থ করিতে পারে না, সুতরাং যতটা উপকৃত হইবার কথা ততটা উপকৃত ও হয় না। কিন্তু বঙ্কিমের লেখা বুঝাইবার জন্ত সময়ে সময়ে অনেক শক্তিশালী লেখক লেখনী ধারণ করিয়াছেন, সুতরাং বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের সঙ্গে সঙ্গে ঐ সকল সমালোচনা পাঠ করিলে যুবকদিগের পক্ষে সে আশঙ্ক৷ অনেক পরিমাণে বিদূরিত হইতে পারে। ব্যাকরণের বন্ধন হইতে ভাষাকে মুক্ত করিবার প্রয়াস আলস্ত-প্রস্থত একটা রোগ ভিন্ন আর কিছুই নহে। আমি ভরসা করি এই উপত্যকাবাণী কেহ এ প্রয়াসে যোগ দিবেন না। পরস্তু এ প্রদেশের বালকের বাল্যকাল হইতে যাহাতে ব্যাকরণে অভ্যস্ত হইয়া ভাষাকে উচ্ছ জ্বলতার হস্ত হইতে রক্ষা করিতে পারে, আপনার তাহার চেষ্টা করিবেন। বাঙ্গালীভাষায় শুদ্ধরূপে লিখিতে বা আলাপ করিতে যে পাণিনি প্রভৃতি ব্যাকরণে অগাধ পাণ্ডিত্যের প্রয়োজন, তাহী নহে ; যে সে একখানা বাঙ্গাল ব্যাকরণ পড়িলেই এ উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইতে পারে। মানবীয় সকল কাৰ্য্যের এবং সকল বিষয়েরই একটা কিছু বিজ্ঞান আছে। ব্যাকরণ ভাষার বিজ্ঞান। “তুমি যাও” বলি কেন, “আমি যাও” বলি না কেন, ইহার হেতুবাদ ব্যাকরণে পাওয়া যাইবে । যাহার লেখা পড়া শিখে না, তাহারা গতামুগতির অনুসরণ করে, কিন্তু যাহার লেখাপড় শিথিবীর গৰ্ব্ব রাখে, তাহদের নিকট হইতে এরূপ প্রশ্নের উত্তর প্রত্যাশা অসঙ্গত নহে। ७ সভাপতির অভিভাষণ እbሥ(ኮ উচ্চারণ শিক্ষা বাঙ্গালীর এক একটা জেলাকে উচ্চারণ সম্বন্ধে এক একটা প্রদেশ মনে করা যাইতে পারে। এক জেলা ছাড়িয়া অন্ত জেলায় প্রবেশ করিলেই প্রাদেশিক শব্দের ব্যবহার এবং বর্ণগত উচ্চারণের পার্থক্যে বুঝিতে পার। যায় যে, একটা জেলা ছাড়িয়া এখন অন্ত জেলায় আসিয়াছি। নিকটবৰ্ত্তী জেলায় এই পার্থক্য অতি অস্পষ্ট, বিশেষ প্রণিধান না করিলে এ পার্থক্য বুঝিতে পারা যায় না। কিন্তু একটা জেলা মধ্যে ব্যবধান রাখিলে তাঙ্গর দুই প্রাস্তের দুই জেলার ভাষাগত পার্থক্য বুঝিতে কিছুমাত্র কষ্ট হয় না। ৰাঙ্গালার মধ্যবর্তী কোন একটা জেলাকে যদি কেন্দ্র বলিয়া কল্পনা করা যায়, তাহা হইলে কেন্দ্র হইতে যে দিকে যতদূরে যাওয়া যাইবে, সে দিকে তত্তই কেন্দ্রের সঙ্গে এই পার্থক্য বাড়িতে থাকিবে এবং প্রাস্তপ্রদেশে যাইয়া এই পার্থক্যটা মূৰ্ত্তিমান হইছা দেখা দিবে। বঙ্গের উত্তর-পূৰ্ব্ব কোণে কাছাড় এবং দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে মেদিনীপুর অবস্থিত। এই দুই জেলার ইতর লোকের মধ্যে যে পরিবারিক ভাষা ব্যবহৃত হয়, তাহ কতকটা উচ্চারণের দোষে এবং কতকটা প্রাদেশিকত-বাহুল্যে এরূপ জড়িত যে, কাছাড় এবং মেদিনীপুরের অশিক্ষিত লোকে তাহদের পরস্পরের কথা সহজে বুঝিতে পরিবে না। কিন্তু যদি বিশুদ্ধ সাধু বাঙ্গালী ভাষায় কথা বলা যায়, তাহ উভয়েই অক্লেশে বুঝিবে। স্বতরাং প্রাস্তবাসী বাঙ্গালীর পক্ষে সাধু বাঙ্গালী ভাষা ব্যবহার করিবার অভ্যাস নিতান্ত প্রয়োজনীয়। এ অভ্যাস এক দিনে দুই দিনে হয় না। বালকদিগকে যখন