পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] একবার দৃষ্টিপাত করিলেই তাহা বুঝিতে পারা যাইবে। জ্ঞান, ধৰ্ম্ম, ঐশ্বৰ্য্য, শক্তি প্রভৃতি মানবের সুখের, মহত্ত্বের এবং গৌরবের যে কিছু উপাদান আছে, তাহার জন্য মানব-সমাজ এই সাহিত্যের নিকটেই ঋণী। এই সকল সাহিত্যচর্চার প্রত্যক্ষ মুখ্যফল। কিন্তু ইহা ছাড়া গৌণফল যে কত আছে তাহার অবধি নাই । দুই একটার উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হইৰে না । আমাদের পল্লীগ্রামগুলি এক সময়ে সৌহার্দ্য, শান্তি এবং আনন্দের রঙ্গভূমি ছিল ; পাশ্চাত্যদিগের ভাষায় যাহাকে জীবন-যুদ্ধ বলে, তাহার বাতাস তখন আমাদিগের পল্লীগ্রামকে স্পর্শ করে নাই। তথন অল্প আয়াসে জীবিকার সংস্থান হইত, সুখভোগের অল্প উপকরণে লোকের সন্তোষ জন্মিত এবং স্নান, পূজা, আহার, নিদ্র সম্পাদন করিয়া যে সময়টুকু অবশিষ্ট থাকিত, লোকে তাহা গান-বাদ্যের বিশুদ্ধ আমোদে, অথবা রামায়ণ, মহাভারত ও অন্যান্য পুরাণাদির শ্রবণ-কীৰ্ত্তনে অতিবাহিত করিত। এগন পূজাতে আর সময় নষ্ট হয় না, স্বচ্ছন্দে স্নান আহার এবং নিদ্রা করিয়াও প্রচুর সময় অবশিষ্ট শাকে। কিন্তু এই অবশিষ্ট সময়ের ব্যবহার পূৰ্ব্বে যেরূপ হইত, এখন সেরূপ হইতে পারে নী ; এখন বিবাদ-বিসংবাদ, মামলা-মোকৰ্দ্দম, পরনিন্দ-পুরচর্চা এবং গ্রাম্যদলাদলি সেই বিশুদ্ধ আমোদ-প্রমোদ এবং সাহিত্য-চৰ্চার স্থান অধিকার করিয়াছে। সাহিত্য-চৰ্চার ফলে, অর্থাৎ সৰ্ব্বদা রামায়ণীয় এবং মহাভারতীয় কথার আলোচনায় মনে যে সকল দড়ীবের উদ্ৰেক হইত, তদ্বারা মানবের চরিত্র উন্নত হইত এবং পরস্পরের সুখ-দুঃখে ও সম্পদ সভাপতির অভিভাষণ )న) বিপদে, পরস্পরের অকৃত্রিম সহানুভূতি ও সহায়তায় সেই উন্নতি,সেই সামাজিক সৌভাগ্য প্রকাশ পাইত। নিন্দীচর্চা, মামলা-মোকৰ্দমা, ঈর্ষা-নিন্দ এবং দলাদলির বৈরনিৰ্য্যাতনে যাহাঁদের চিত্ত সৰ্ব্বদা আন্দোলিত, তাহাদের হৃদয়ে সেই সকল দেবভাব কেমন করিয়া স্থান পাইবে, নারকীয় দুর্গন্ধের মধ্যে মানবীয় সদ্ধাবরূপ স্বৰ্গীয় কুসুম কিরূপে বিকশিত হইবে ? এই সকল কারণে বঙ্গের পল্লীগুলি এখন আর সেই নন্দন-কাননের শোভা ধারণ করে না, এখন সেগুলি শ্মশানের চিত্র, পিশাচের বিলাসভূমি, নরকের অভিনয় ক্ষেত্র। কিন্তু এখনও যদি আপনার পল্লীগ্রামের মঙ্গল-সাধনে দৃঢ় সঙ্কল্পের সহিত অগ্রসর হন, এখনও যদি সাহিত্যের দিকে পল্লীবাসীর অনুরাগ আকর্ষণ করিতে পারেন, তাহ হইলে আমাদের পল্লীগুলি আবার সেই নন্দনকাননের শোভা ধারণ করবে, আবার ইহা আমাদের চতুৰ্ব্বৰ্গসাধনের নিরুপদ্রব পবিত্র ক্ষেত্র হইয়া উঠিবে। যে-সকল বালক-বালিকা যেরূপ সমাজে প্রতিপালিত হয়, তাহারা সেইরূপ সমাজের উপাদানে আপনাদিগের চরিত্র গঠন করে । যে সকল শিশু সন্তান হিংসা-নিন্দ, ঝগড়া-বিবাদ, জন্মাবধি প্রতিদিন প্রত্যক্ষ রুরিয়া বদ্ধিত হয়, তাহার যৌবনে বা বাৰ্দ্ধক্যে সাধু সদাচারী পবিত্র এবং সদ্ভাবসম্পন্ন হইবে, এরূপ প্রত্যাশা করা বাতুলত। দেশের মানুষগুলিকে যদি পবিত্র-চরিত্র, পরার্থ পর, সদ্ভাবসম্পন্ন এবং প্রীতি-পরায়ণ দেখিতে চাহেন, তাহা হইলে শিশুগণ যে গ্রামের যে সমাজে প্রতিপালিত হইবে, সেই গ্রাম এবং সেই সমাজকে সেইরূপ মানুষ গঠিত করিবার উপ